পহলগামে জঙ্গি হানার বদলায় অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে দেশে জাতীয়তাবোধের ঢেউ জেগেছে।
অপারেশন সিঁদুরের সময় শহিদরা।
শেষ আপডেট: 13 May 2025 15:08
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহলগামে জঙ্গি হানার বদলায় অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যে দেশে জাতীয়তাবোধের ঢেউ জেগেছে। যে পরমবীরদের আত্মত্যাগে আড়ালে চোখের জল ফেলছেন তাঁদের পরিবার-পরিজন, তাঁদের নাম লেখা থাকবে বীরত্ব, শৌর্যবীর্যের ইতিহাসে। পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে ও পড়শি দেশের হানাদারিতে বেশ কয়েকজন বীরের মৃত্যু বরণ করে শহিদ হয়েছেন।
পদ, কৃতিত্ব, শিক্ষাদীক্ষা সবকিছুকে পিছনে সরিয়ে এই বীরনায়কদের স্মরণ করবে দেশবাসী। কী তাঁদের জাত, পরিচয়, কোন রাজ্যের বাসিন্দা, উর্দির রং কী, তা অবান্তর। এঁরা সকলেই যে ভারতমাতার বীর সন্তান, এটাই তাঁদের পরিচয়।
সার্জেন্ট সুরেন্দ্রকুমার মোগা (ভারতীয় বিমানবাহিনী)
সার্জেন্ট সুরেন্দ্রকুমার মোগা হলেন বিমানবাহিনীর একজন স্বাস্থ্য সহায়ক। বেঙ্গালুরু থেকে তাঁকে উধমপুরে পাঠানো হয়েছিল। তার চারদিন পরেই শহিদ হন সুরেন্দ্র। গত ১১ মে অপারেশন সিঁদুরের জবাবে পাকিস্তানি গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলায় তিনি হন। মোগার বাড়ি রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার মেহরাদাসী গ্রামে। সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতেই তাঁকে জম্মু-কাশ্মীর ফ্রন্টে পাঠানো হয়।
সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ (বিএসএফ)
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমান্তের আরএস পুরায় কাজ করতেন। ১১ মে পাকিস্তানি গোলাগুলি বর্ষণে তিনি শহিদ হন। এর বেশি তথ্য তাঁর সম্পর্কে জানা যায়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ল্যান্সনায়েক দীনেশ কুমার
ল্যান্সনায়েক দীনেশ কুমার রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ৪২ ব্যাটেলিয়নের মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রিতে মোতায়েন ছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলিতে তিনি শহিদ হন। মার্চের গোড়ার দিকে ছুটি কাটিয়ে তিনি ফের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। শহিদ দীনেশের স্ত্রী সীমা পেশায় আইনজীবী। ৫ বছরের দর্শন ও ৭ বছরের কাব্য নামে দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাইফেলম্যান সুনীল কুমার
জম্মুর ত্রেয়া গ্রামের বাসিন্দা রাইফেলম্যান সুনীল কুমার। বয়স ২৫ বছর। ইনিও আরএস পুরা সেক্টরে গোলাগুলি বর্ষণের সময় মারাত্মক জখম হন। পরে চিকিৎসা চলাকালীন তিনি শহিদ হন।
মুদাবত মুরলী নায়েক (ভারতীয় সেনাবাহিনী)
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীসত্য সাই জেলার কোন্ডরাম গ্রামের বাসিন্দা মুরলীর বয়স মাত্র ২৫ বছর। এক খামারচাষির ছেলে মুরলী পরিবারের প্রথম ব্যক্তি যিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে তিনি শহিদ হন। মাত্র চারদিন আগে পোস্টিং হয়েছিল কাশ্মীরে। ২০১৮ সালে তিনি ভারতীয় সেনায় যোগ দেন। গত ৬ মে তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছিলেন। গত ৯ মে তাঁর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য হয়েছিল।
হাবিলদার ঝন্টু আলি শেখ (ভারতীয় সেনার স্পেশাল ফোর্স)
হাবিলদার ঝন্টু পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। প্যারা বাহিনী (স্পেশাল ফোর্স)-র ষষ্ঠ ব্যাটেলিয়নে কাজ করতেন। গত ২৩ এপ্রিল তিনি উধমপুর জেলার বসন্তগড় এলাকায় জঙ্গি দমন অভিযানে গিয়ে এনকাউন্টারে মারা যান। ঝন্টুর স্ত্রী ঝুমা এবং তনবির ও রেহানা নামে দুই সন্তান রয়েছে। তাঁরা উত্তরপ্রদেশের আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে থাকতেন। ঝন্টুর বড় দাদা নাজিম শেষ নন-কমিশনড অফিসার। তিনিও বর্তমানে কাশ্মীরে কর্মরত।
গানার দীনেশ শর্মা (৩২) শহিদ হন পুঞ্চ সেক্টরে পাকিস্তানি গোলায়। সেনা জওয়ান সেপাই শচীন যাদব (২৯) মহারাষ্ট্রের নান্দেড জেলার দেগলুর তালুকের তামলুর গ্রামের বাসিন্দা। বিমানবাহিনীর এয়ারম্যান কমল কাম্বোজ গত ৮ মে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় শহিদ হন। তিনি হরিয়ানার বাসিন্দা ছিলেন। সেপাই অমিত চৌধুরিও পাকিস্তানি হামলার জবাব দেওয়ার সময় মুখোমুখি সংঘর্ষে শহিদ হন। সেপাই সূর্য যাদবও গত ৮ মে দুর্ঘটনায় মারা যান।
এছাড়াও ডঃ রাজকুমার থাপা ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার গত ১০ মে পাকিস্তানের ছোড়া একটি গোলা তাঁর সরকারি বাসভবনে এসে আছড়ে পড়লে তাঁর মৃত্যু হয়। দুদেশের উত্তেজনা বৃদ্ধির পর থেকে তিনি সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলিতে ত্রাণসাহায্য পাঠানোর কাজে সমন্বয়ের কাজ করছিলেন।