শেষ আপডেট: 5th July 2024 15:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মৃতকে বাঁচাতে পারেন ভোলেবাবা। দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় হয় তাঁর আশ্রমের পবিত্র শান্তিজলে। তাঁর নাম জপ করলে ভর্তির সুযোগ এসে যায় নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। 'পরমাত্মা' ভোলেবাবা 'ত্রিকালদর্শী'। কারণ, সেদিন হাথরাসে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুমিছিলের কয়েক মিনিট আগেও তাঁর শেষ বাণী ছিল, 'আজ প্রলয় আয়েগি' অর্থাৎ আজ প্রলয় আসবে। আর তার কয়েক মুহূর্ত পরেই সৎসঙ্গের মাঠে এক ধূলিঝড় ওঠে।
সুরজপাল সিং ওরফে নারায়ণ হরি সাকার ওরফে ভোলেবাবাকে উত্তর থেকে দক্ষিণ, হতদরিদ্র থেকে ধনী, লক্ষ লক্ষ ভক্তের একজনও মানুষ বলে মানতে নারাজ। পদপিষ্ট হয়ে গণমৃত্যুর পরেও তাঁদের চোখে ভোলেবাবা সাক্ষাৎ হরি কিংবা ভগবানের অবতার বলেই বিশ্বাস করেন। আশ্চর্য মনে হলেও সত্যি, তাঁর ভক্তরা দৃঢ় বিশ্বাস করেন, মৃতদেহে প্রাণ সঞ্চার করতে পারেন ভোলেবাবা।
১৮ বছরের হিমাংশুর বদ্ধ বিশ্বাস ভোলেবাবার আশীর্বাদ না থাকলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন না। হাথরাসের বাসিন্দা ৩৩ বছরের আইনজীবী সীমা মনে করেন, উনি মানুষ নন। ঈশ্বরপ্রেরিত দূত। সুরজপুরের গৃহবধূ নেহা বলেন, যখন সব ওষুধ হার মেনে যায়, সব ডাক্তার হাত তুলে নেন, তখন ভোলেবাবার আশ্রমের পবিত্র বারিতে তাঁর সব রোগভোগ সেরে গিয়েছে।
গত ২ জুলাই ভোলেবাবার ভক্ত সমাগমে ভিড়ের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর পর থেকে উধাও ভোলেবাবা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না স্বেচ্ছাবসর নেওয়া প্রাক্তন হেড কনস্টেবলকে। যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও তাঁর ভক্তদের মনে ভোলেবাবার প্রতি ভক্তি একটুও টাল খায়নি। তাঁরা এখনও বিশ্বাস করেন ভোলেবাবার অতিমানবীয় শক্তি রয়েছে।
ভোলেবাবা নিয়ে নানান অলৌকিক গপ্প খুব কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর ভক্তদের মধ্যে। এমনকী পদপিষ্ট হওয়ার কয়েক মিনিট আগে বলা শেষ কথাটিও আকাশবাণীর মতো বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন ভক্তরা। ভিড় সামাল দিতে পারার অপদার্থতার থেকেও তাঁরা এখনও বিশ্বাস করেন উনি বুঝতে পেরেছিলেন কী ঘটতে চলেছে!
বুলন্দশহর থেকে আসা কমলেশ সিং জখম হয়ে আপাতত চিকিৎসাধীন। তাঁর মন থেকে এখনও ভোলেবাবার প্রতি ভক্তি অটল রয়েছে। তিনি বলেন, মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার ঠিক আগে তিনি আরেকবার মাইক তুলে নেন। বলেন, আমি এখন চলে যাচ্ছি, আজ প্রলয় আসবে। ভেবে দেখুন ওনার অসীম ক্ষমতা কী! উনি বুঝতে পেরেছিলেন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে কী ঘটতে চলেছে। ১৫ বছর ধরে ভোলেবাবার অনুগামী কমলেশ বলেন, আশ্চর্য হল উনি বেরিয়ে যাওয়ার পরেই ধুলোর ঝড় উঠল।
বাবা-মায়ের সঙ্গে মাত্র ৬ বছর বয়সে ভোলেবাবার বাণী শুনতে এসেছিলেন হিমাংশু। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ভোলেবাবাকেই একমাত্র ঈশ্বর বলে মনে করেন তিনি। তাঁদের বাড়িতে কোনও ভগবানের ছবি বা মূর্তি নেই। শুধু ভোলেবাবা আছেন। কৃষিবিজ্ঞানের স্নাতক হতে চলা হিমাংশু মনে করেন, এসব কিছুই তাঁর আশীর্বাদ। তিনি আরও বলেন, আমি বুঝতে পারছি না, সবাই দুর্ঘটনার জন্য কেন তাঁকে দোষী ঠাউরাচ্ছে? কেদারনাথ এবং বৈষ্ণোদেবীতেও তো দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গৃহবধূ নেহা বলেন, বাবাকে কলঙ্কিত করার জন্য তাঁর নাম ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। অনেকে পুজোপাঠে গঙ্গাজল ছেটান, আমরা তেমন বাবার অনুষ্ঠান থেকে পবিত্র জল এনে ছেটাই। এতে সংসারে শান্তি বজায় থাকে এবং সমস্ত রোগব্যাধি থেকে আমরা দূরে রাখে। ওনাকে ছাড়া আমি কাউকে পুজোও করি না।