বিচারপতি বিভি নাগারত্না।
শেষ আপডেট: 21st January 2025 01:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১২ দিন ধরে মর্গে পড়ে রয়েছে বাবার দেহ, গ্রামের বাসিন্দারা কবরস্থানে ঢুকতেই দিচ্ছেন না পরিবারের সদস্যদের! এমনই অভিযোগে, বাবার শেষকৃত্যর অধিকার দাবি করে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ছত্তীসগড়ের বাস্তারের বাসিন্দা রমেশ বাঘেল। তিনি সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন, যাতে তাঁর বাবাকে তাঁর পূর্বপুরুষদের কবরস্থানেই গোর দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় (Shocking Bastar Case)।
জানা গেছে, সাবাশ বাঘেল নামের মৃত ওই ব্যক্তি সপরিবার খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এই কারণেই গ্রামের কবরে তাঁর দেহ সমাহিত করায় গ্রামবাসীদের আপত্তি।
এই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বিভি নাগারত্না এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। বিচারপতি বিভি নাগারত্না বলেন, 'একজন ব্যক্তি তাঁর ইচ্ছামতো কোথাও সমাহিত হতে পারেন না কেন? এখনও দেহ মর্গে? দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, একজন মানুষকে তাঁর বাবার শেষকৃত্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আসতে হচ্ছে। পঞ্চায়েত, হাইকোর্ট-- এই সমস্ত ধাপে এই সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছে না। খুবই দুঃখজনক!'
সরকারি আইনজীবী তুষার মেটা শুনানিতে সওয়াল করে বলেন, 'এই আবেদন যদি শুধুমাত্র আবেগের ভিত্তিতে ঘটে থাকে, তবে কিছু বলার নেই। তবে যদি আবেগের বাইরে কিছু হয়, তবে যুক্তির অবকাশ রয়েছে।' আবেদনকারী যুবকের পক্ষের আইনজীবী কলিন গনজালভেস বলেন, 'কবর নিষিদ্ধ করার আসল কারণ হল, পরিবারটি খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে।'
তুষার মেটা সে কথা শুনে বলেন, এটি একটি 'আন্দোলনের' শুরু হতে পারে, এই নিয়ে উপজাতি হিন্দুদের এবং উপজাতি খ্রিস্টানদের মধ্যে উত্তেজনাও সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর কথায়, 'এই মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়ে থাকতে পারে, যেখানে খ্রিস্টানরা নিজেদের জন্য পৃথক কবরস্থান পাওয়ার দাবি করবে।' তিনি উল্লেখ করেন, নির্দিষ্ট ওই গোরস্থানটির থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি খ্রিস্টান কবরস্থানও আছে।
দু'পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারপতি বিভি নাগারত্না জানতে চান, কবরের ব্যবস্থা কি ব্যক্তিগত জমিতে করা যেতে পারে? তখন মেটা বলেন, ব্যক্তিগত জমিতে কাউকে সৎকার করলে, জমিটির চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যায়, তা একটি পবিত্র স্থান হয়ে ওঠে। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই এমনটা অনুমোদিত নয়।
আইনজীবী কলিন গনজালভেস ফের সওয়াল করে বলেন, সাবাশ বাঘলের বাবা এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ওই নির্দিষ্ট গোরস্থানেই কবর পেয়েছেন। তাঁদের সকলের কবরস্থানে ক্রস চিহ্নও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি, অর্থাৎ তাঁরা খ্রিস্টান হওয়া সত্ত্বেও ওই জমিতেই সমাহিত। তিনি উল্লেখ করেন, 'রাজ্য সরকার খ্রিস্টান কবরস্থানে দেহ স্থানান্তরের জন্য অ্যাম্বুলেন্স দিলেও তাঁর মক্কেল বাবার দেহ নিয়ে গ্রামের বাইরে যেতে চান না। ধর্মান্তরের কারণে কোনও ভেদাভেদ বা অস্পৃশ্যতা চান না।'
কোর্ট প্রশ্ন করে, সাবাশ বাঘেলের পরিবারের সকলের শেষকৃত্যে ওই কবরে হলে, কেন গ্রামের লোকেরা এবারে বাধা দিচ্ছে? উত্তরে গনজালভেস বলেন, 'এটাই সমস্যাজনক। কারণ গ্রামবাসীরা বোঝাতে চাইছেন, ধর্মান্তরিত হলে গ্রামে ঠাঁই হবে না। এটি একটি বিপজ্জনক দৃষ্টিভঙ্গি।'
বিচারপতি বিভি নাগারত্না সব শুনে বলেন, এতদিন ধরে দেহ আর মর্গে রাখা যাবে না। তবে মেটা এর পরেও আদালতকে অনুরোধ করেন যে, এই বিষয়টি তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। কারণ এটা একটা আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে, এটা কেবল এক ব্যক্তির মৃত্যু নয়।
শেষমেশ কিছুই সুরাহা হয়নি এখনও। আগামী বুধবার এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়েছে আদালত।