হ্যারপ ড্রোন নিয়ে পাকিস্তানে অভিযান।
শেষ আপডেট: 8 May 2025 17:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারত হ্যারপ (HAROP) নামক ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানের একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে (India Attacks Pakistan)। বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী (Pak Defence)। সে দেশের দুই বৃহত্তম শহর করাচি ও লাহোরের বহু এলাকা ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে এই অভিযানে। এই হামলার একদিন আগেই, বুধবার ভোররাতে পাকিস্তান (Pakistan) এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এ 'অপারেশন সিঁদুর' (OPeration Sindoor) চালিয়ে মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত (Indian Army)।
তার পরেই ফের অভিযান চালানোয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, 'ভারতীয় ড্রোন বারবার পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করছে… এই আগ্রাসনের জন্য ভারতকে চড়া মূল্য দিতে হবে।' ভারতের পক্ষ থেকে এখনও এই অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
পাক সেনার দাবি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের হামলায় ভারত ইজরায়েল নির্মিত হ্যারপ ড্রোন ব্যবহার করেছে। এই ড্রোনটি তৈরি করেছে ইজরায়েল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ। এটি একটি অত্যাধুনিক ‘লয়টারিং মিউনিশন’ (Loitering Munition) অর্থাৎ, ঘোরাঘুরি করে লক্ষ্য খুঁজে তা ধ্বংস করতে সক্ষম অস্ত্রব্যবস্থা, যা UAV বা ড্রোন এবং নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদী ক্ষেপণাস্ত্র, এই দুইয়ের বৈশিষ্ট্য একসঙ্গে বহন করে।
হ্যারপ ড্রোন একাধারে নজরদারি ড্রোন এবং প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র। এটি লক্ষ্যস্থলের ওপর দীর্ঘক্ষণ চক্কর কাটে এবং লক্ষ্য শনাক্ত করলেই সেটির দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই কারণে তা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।
হ্যারপ ড্রোন বহুবার বাস্তব লড়াইয়ের ময়দানে সফল মিশনের রেকর্ড রেখেছে, বিশেষ করে শত্রুপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ধ্বংসে এটি অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইজরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ বহু দশক ধরে লয়টারিং মিউনিশনের ওপর কাজ করছে। হ্যারপ ড্রোনটি তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের মডেল, যা আগের ‘হারপি’ (HARPY) প্ল্যাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই ড্রোন প্রায় ৯ ঘণ্টা টানা উড়তে পারে এবং প্রায় হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত অভিযান চালাতে সক্ষম। ফলে এটি ফ্রন্টলাইনের ঝুঁকি না নিয়েই গভীরে প্রবেশ করে আক্রমণ করতে পারে।
হ্যারপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য খুঁজে বের করে তা ট্র্যাক করতে পারে, তবে এর মধ্যে ‘ম্যান-ইন-দ্য-লুপ’ বৈশিষ্ট্যও আছে। মানে, অপারেটর চাইলে রিয়েল-টাইমে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
যদি যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি বদলে যায়, তাহলে অপারেটর চাইলে হামলা বাতিল করতে পারে এবং ড্রোনটিকে আবার সময় বুঝে চক্কর কাটাতে পাঠানো যায়। যাতে অপ্রয়োজনীয় ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কমে।
হ্যারপ ড্রোনে আছে ইলেকট্রো-অপটিক্যাল, ইনফ্রারেড, ফরওয়ার্ড-লুকিং ইনফ্রারেড সেন্সর, কালার সিসিডি ক্যামেরা এবং অ্যান্টি-ব়্যাডার হোমিং প্রযুক্তি। ফলে লক্ষ্য নির্ধারণে এটি অত্যন্ত নিখুঁত।
হ্যারপ ড্রোনকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে এটি স্থল, সমুদ্র, শহুরে যুদ্ধ, সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযান চালাতে পারে। যেমন খুশি তীব্রতার সংঘাতে সমান দক্ষতায় এটি ব্যবহার করা যায়।
ড্রোনটি প্রায় ২৩ কেজি (৫১ পাউন্ড) বিস্ফোরক বহন করতে পারে, যা দিয়ে ব়্যাডার, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যে কোনও চলমান লক্ষ্যকে ধ্বংস করা সম্ভব।
হ্যারপ ড্রোন একটি সিল করা ক্যানিস্টার থেকে ছোড়া যায়, ফলে মোতায়েন করা সহজ এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে নজরদারি মোড থেকে আক্রমণ মোডে রূপান্তরিত হতে পারে। এটি একইসঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নজরদারি ও আক্রমণের দারুণ সমন্বয় তৈরি করে।