পতৌদি খানদানে সইফ আলি খান।
শেষ আপডেট: 22nd January 2025 11:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পতৌদি নবাব পরিবারের ঐতিহাসিক সম্পত্তি (Pataudi Property) অধিগ্রহণ করতে চলেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। সে রাজ্যের হাইকোর্ট সম্প্রতি এমনই রায় দিয়েছে। জানা গেছে, পতৌদি নবাব খানদানের ওই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বলিউড তারকা সইফ আলি খানের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত এই সম্পত্তিগুলি শিগগিরই শত্রু সম্পত্তি আইন, ১৯৬৮-এর (এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮) অধীনে সরকারের হাতে যেতে পারে।
পতৌদি নবাব খানদানের ওই বিপুল সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস, যেখানে সইফ আলি খান তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছে নূর-উস-সাবাহ প্যালেস, দার-উস-সালাম, হাবিবির বাংলো, আহমেদাবাদ প্যালেস, কোহেফিজা প্রপার্টি এবং অন্যান্য সম্পত্তি।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ২০১৫ সালে দেওয়া স্থগিতাদেশ তুলে নেন। তিনি বলেন, সংশোধিত শত্রু সম্পত্তি আইন, ২০১৭-এর অধীনে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষদের ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।
বিচারপতি বলেন, 'পতৌদি পরিবার চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে পাল্টা আবেদন জমা করতে পারে সম্পত্তি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে কেন সরকার অধিগ্রহণ করবে না তাদের সম্পত্তি, এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য আদালতকে জানালে, আদালত বিবেচনা করে দেখবে এই সম্পত্তির মালিকানা-সংক্রান্ত দাবি। আবেদনকারীদের সীমাবদ্ধতাও পর্যালোচনা করে দেখা হবে এবং আবেদনের গুরুত্বের ভিত্তিতে মামলাটি চলবে।'
দেশভাগের পরে পাকিস্তানে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের যে সব সম্পত্তির মালিকানা ছিল, ১৯৬৮ সালের শত্রু সম্পত্তি আইন কেন্দ্রীয় সরকারকে সেই সমস্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণের অধিকার দেয়।
ইতিহাস বলছে, ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের বড় মেয়ে আবিদা সুলতান, ১৯৫০ সালে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে পাড়ি দেন। তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে সাজিদা সুলতান ভারতে থেকে যান। তিনিই পতৌদি বংশের নবাব ইফতেখার আলি খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী কালে সাজিদা সুলতান আইনত উত্তরাধিকারী হন পতৌদি সম্পত্তির।
এই সাজিদা সুলতানেরই নাতি সইফ আলি খান। তিনিই এই সম্পত্তিগুলির উত্তরাধিকারী হন বংশানুক্রমে। তবে, আবিদা সুলতানের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কারণে এই সম্পত্তিগুলিকে 'শত্রু সম্পত্তি' বলে দাবি করার জন্য সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে ওঠে। তবে ২০১৯ সালে আদালত সাজিদা সুলতানকে আইনত উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও, সাম্প্রতিক হাইকোর্টের রায়ে সরকার ও পতৌদিদের সম্পত্তি-বিরোধ নতুন করে সামনে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে এই সম্পত্তির গত ৭২ বছরের মালিকানার নথি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ভোপালের জেলাশাসক কৌশলেন্দ্র বিক্রম সিংহ। তিনি বলেন, যারা এই সম্পত্তিগুলিতে বসবাস করছেন, তাদের রাজ্যের লিজ আইন অনুযায়ী ভাড়াটে হিসেবে গণ্য করা হতে পারে।
তবে এই বিষয়টি মোটেই মেনে নিতে পারছেন না এই বিপুল সম্পত্তির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রায় ১.৫ লক্ষ বাসিন্দা। তাঁদের অনেকেই উচ্ছেদের ভয় পাচ্ছেন, কারণ সরকার ইতিমধ্যেই জমির মালিকানা নির্ধারণ করতে সমীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে এর মধ্যে অনেক জটিলতাও রয়েছে। কারণ অনেকেই সম্পত্তির অংশ ইতিমধ্যেই বিক্রি করে দিয়েছেন বা লিজে দিয়েছেন।
এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা চাঁদ মিঞা বলেন, 'আমরা নিয়মিত কর দিই, কিন্তু আমাদের বাড়ির কোনও সরকারি নিবন্ধন নেই। নবাবের লিজও কার্যকর হয়নি।' আর এক বাসিন্দা সুমের খান বলেন, 'শত্রু সম্পত্তি আইনের অধীনে এই সম্পত্তিগুলি সংযুক্ত করা সহজ নয়। পতৌদি পরিবারের এখনও আপিল করার সুযোগ রয়েছে।'
সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি বেশ জটিল। একদিকে যেমন হাইকোর্ট রায় দিয়েছে অধিগ্রহণের, তেমবি পরিবারের জন্যও এখনও আইনগত আবেদনের পথ খোলা রয়েছে। ফলে সব মিলিএ ঐতিহাসিক এই সম্পত্তিগুলির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।