শেষ আপডেট: 22nd January 2024 15:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রথমে লড়াইটা ছিল তিন হাজার জনের মধ্যে। বহু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারপর প্রতিদ্বন্দ্বী তালিকায় নাম ওঠে ৫০ জনের। স্বয়ং রামলালার পূজারী বলে কথা, একেবারে বেছে সেরা কাউকেই নিয়োগ করার কথা ভেবেছিলেন অযোধ্যা রাম মন্দির কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন রামলালার পুজো করতে যাঁকে দেখা গেছে তিনি গত কয়েকমাস ধরে কঠোর পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে গেছেন। তিন হাজার জনের লড়াইয়ে তিনিই এগিয়ে ছিলেন। রাম মন্দিরে স্থাপিত রামলালার পূজারী আজ থেকে তিনিই হবেন। তাঁর নাম মোহিত পাণ্ডে। বৈদিক স্কলার মোহিত বর্তমানে পিএইচডি করছেন।
কে এই মোহিত পাণ্ডে?
ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তরি, ওকালতি বা যে কোনও পেশাদার কোর্সের মতো করেই গ্র্যাজুয়েশন আর মাস্টার্স করে তার পরেই রাম মন্দিরের পূজারী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে পেরেছিলেন মোহিতের মতো ৫০ জন। সাধারণ কোনও পুরোহিত বা যজমানকে ধরে পুজো করিয়ে নেওয়ার মতো ব্যাপার নয়। পড়াশোনায় তুখোড়, ঋক-সাম-যজু-অথর্ব বেদে পারদর্শী, বেদ-বেদান্ত-উপনিষদে অগাধ জ্ঞান আছে এমনই কাউকে রামলালার পুজারী হিসেবে বেছে নেওয়ার পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ চলেছিল গত কয়েকমাস ধরে। সেখানে মোহিত পাণ্ডেই বাকি সকলের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।
বয়স ২২ বছর। উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরের বাসিন্দা মোহিত পাণ্ডে এই মুহূর্তে তাঁর স্নাতকোত্তর (আচার্য) কোর্স করছেন তিরুপতিতে তিরুমালার তিরুপতি দেবাস্থানাম চালিত শ্রী বেঙ্কটেশ্বর বেদিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাস সিক্স থেকে গাজিয়াবাদের দুধেশ্বর বেদ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। উত্তর ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় মন্দির শ্রী দুধেশ্বর। এই মন্দির লাগোয়া স্কুলে চার বেদ, উপনিষদ, পুরাণ সহ বিভিন্ন শাস্ত্র পড়ানো হয় ছাত্রদের। এখানেই সাত বছর ধরে বেদপাঠ করেছেন মোহিত।
দুধেশ্বর বেদ বিদ্যাপীঠের প্রধান পিতাধীশ্বর মহন্ত নারায়ণ গিরি বলেছেন, “গত ২৩ বছর ধরে হাজার হাজার পড়ুয়া বেদ ও পুজোর বিভিন্ন রীতিনীতি নিয়ে শিক্ষিত হয়েছে বেদ বিদ্যাপীঠে। এই মুহূর্তে প্রায় ৭০ জন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে পুরোহিত বা আচার্যের কাজ করছেন। আর এখানেরই প্রাক্তনী মোহিত পাণ্ডে রামলালার সেবার জন্য অযোধ্যা মন্দিরে পুজো করার দায়িত্ব পেয়েছে।”
দেব বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর বৈদিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য যান মোহিত। সেখানে শাস্ত্র নিয়ে স্নাতক পর্বের পড়াশোনা শেষ করে এখন আচার্য বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বের পড়াশোনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া রামমন্দিরে পুজোর গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন শুনে খুবই খুশি প্রিন্সিপাল সদাশিব মূর্তি। তাঁর কথায়, “মোহিত খুবই মেধাবী। সামবেদে তাঁর অগাধ জ্ঞান। কথা কম বলে, নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে। অযোধ্যায় রামলালার যোগ্য পূজারী হওয়ার যোগ্যতা মোহিতের আছে।”
রামলালার পূজারী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরে গত ৬ মাস কঠোর প্রশিক্ষণ চলে মোহিতের। ভোর ৪টে থেকে রাত ১০টা অবধি কঠিন নিয়মে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল জীবন। শাস্ত্র পাঠে তাঁর জ্ঞান কতটা তার পরীক্ষা চলত নানাভাবে। বিশেষ করে নানারকম মন্ত্রপাঠ, মন্ত্রোচ্চারণ পদ্ধতি, বিভিন্ন মন্ত্রের মানে ও তার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ইত্যাদি নিয়েও মোহিতের পরীক্ষা চলত। মন্দির কর্তৃপক্ষ বলছেন, রামলালার পূজারী পদ পাওয়া কঠিন ইন্টারভিউ আর ইন্টার্নশিপের বিভিন্ন লেভেল ক্র্যাক করে বড় কোনও পদে চাকরি পাওয়ার থেকে কোনও অংশে কম নয়।
রাম মন্দিরের পুজারীদের বেতন বেশ ভালই। আগে প্রধান পুরোহিতরা ১৫ হাজার টাকার বেশি বেতন পেতেন। সহকারী পুরোহিত পেতেন প্রায় ৯ হাজার টাকা। তবে সম্প্রতিই রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের তরফে পুজারীদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে প্রধান পুরোহিত বেতন পান ৩২ হাজার ৯০০ টাকা। সহকারী পুজারীরা পান ৩১ হাজার টাকা। জানা গেছে, মোহিত পাণ্ডে রামলালার প্রধান পূজারী নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁর বেতন হবে মাসে ৩৩ হাজার টাকা।