শেষ আপডেট: 17th September 2024 16:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছিল বিখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই। না দেওয়ায় সাউথ দিল্লির জিম মালিককে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। এই খুনের তদন্ত করতে গিয়ে একে একে উঠে আসে কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের নাম। উঠে আসে সঙ্গে জড়িত পুরনো অনেক ঘটনাও।
এই খুনের ঘটনায় প্রথম নাম জড়ায় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের। বর্তমানে গুজরাটের সবরমতী জেলে রয়েছে সে। ৭০০-র বেশি বন্দুকবাজ রয়েছে তার গ্যাঙে। এই লরেন্স শিরোনামে উঠে আসে ২০২২-এর মে মাসে বিখ্যাত পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়লার খুনের পর। সলমন খানকে মারার ছক কষারও অভিযোগ ওঠে এই গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে। দিল্লির জিম মালিক নাদির শাহ খুনের ঘটনার দায় স্বীকার করে বিষ্ণোই গ্যাং। জানা যায়, নাদিরের ব্যবসার অংশীদার কুণাল ছাবরার থেকে বিষ্ণোই গ্যাং ৫ কোটি টাকা চেয়েছিল। সেই টাকা ছাবরাকে দিতে নিষেধ করে নাদির। সেখান থেকেই শুরু হয় শত্রুতা।
তদন্তের জাল গোটাতে গিয়ে খুনের ব্লু প্রিন্ট দেখে চমকে যায় পুলিশ। উঠে আসে রাজস্থানের রোহিত গোদারার কথা। এই রোহিত লরেন্স ও তার গ্যাঙের খুবই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রোহিতের নাম শিরোনামে আসে করণী সেনা প্রধান সুখদেব সিং গোগামেদীর খুনের পর। আমেরিকায় থাকলেও দেশে নিজের আধিপত্য ভাল মতো বিস্তার করে রেখেছে এই দুষ্কৃতী। লরেন্সের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এই খুনের ছক কষতে রোহিতেরও বিরাট ভূমিকা রয়েছে। জানা গিয়েছে, সে ১০ কোটি টাকা দাবি করেছিল নাদিরের থেকে। উঠে এসেছে গোল্ডি ব্রারের নামও।
নাদির শাহ খুনের ঘটনায় তৃতীয় যার নাম উঠে এসেছে সে হল রণদীপ। উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ের বাসিন্দা রণদীপও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে আমেরিকায়, এমনই জানা গিয়েছে। রোহিত এই খুনে রণদীপেরই সাহায্য নিয়েছিল। আজমগড় থেকে বন্দুকবাজও পাঠানো হয়। যাদের মধ্যে ৩ জনকে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে।
ঘটনায় নাম জড়ায় নর্থ ইস্ট দিল্লির গ্যাংস্টার হাসিম বাবার। ২০২০-তে একটি গুলি চালানোর ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সেই থেকে জেলেই রয়েছে সে। ২০০৭ প্রথমবার পুলিশের নজরে আসে এই দুষ্কৃতী। তাকে যমুনাপুরের ডন বলা হয়। পুলিশকে সে জানিয়েছিল, তার নাকি রোল মডেল সঞ্জয় দত্ত। নিজের নাম বদলে হাসিম বাবা করেছিল সঞ্জু বাবার অনুকরণে। সিধু মুসেওয়ালা খুনেও নাম জড়িয়েছিল এই হাসিমের। পুলিশ জানতে পেরেছে, নাদির শাহ খুনে বন্দুকবাজদের নাদিরের সমস্ত তথ্য দিয়ে এলাকায় পাঠিয়েছিল এই হাসিম বাবা। তিহারে বসেই নাকি একাজ করেছে সে।
কীভাবে খুনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল?
মৃত নাদির শাহর সঙ্গে সাউথ দিল্লির গ্যাংস্টার রবি আগরওয়াল ও রোহিত চৌধুরির বন্ধুত্ব ছিল। এই দুজনের সঙ্গে নর্থ দিল্লির গ্যাংস্টার হাসিম বাবার শত্রুতা ছিল। সূত্রের খবর, বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য রোহিত গোদারা এই শত্রুতাকেই কাজে লাগায় ও খুন করে। সে খুনের দায়ও স্বীকার করেছে।
পুলিশ জানতে পেরেছে, হাসিম বাবা নামের ওই নর্থ দিল্লির গ্যাংস্টার উত্তরপ্রদেশের আজেমগড়ের গ্যাংস্টার রণদীপকে এই খুনের সুপারি দেয়। রণদীপ নিজে আমেরিকায় থাকায় এই খুনের দায়িত্ব দেয় অন্য কয়েকজনকে। তাদের উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লিতেও নিয়ে আসা হয়।
কাজে লাগানো হয় হামিসের তিহার জেলের সঙ্গী সমীর বাবাকে। এই সমীরকে আবার মৃত নাদির শাহ এক সময় হুমকি দিয়েছিল।
খুনের ব্লু প্রিন্ট এভাবেই ছকে নেওয়ার পর নাদির শাহকে অবশেষে খুন করা হয়। গুলি চালায় হাসিম ও রণদীপের ভাড়া করা গুন্ডারা। চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সব শেষে উঠে এসেছে নাদিরের ব্যবসার অংশীদার কুণাল ছাবরার নাম। দিল্লির বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী বর্তমানে দুবাইতে রয়েছে। দিল্লিতে একাধিক অবৈধ কল সেন্টারের মালিক সে। সূত্র মারফত জানা যায়, এই কল সেন্টারগুলি চালু রাখতে কুণাল মাসিক তোলা দেয় কয়েকজন পুলিশ ও স্থানীয় দুষ্কৃতীদের।
নাদির বিষয়টা জানার পর কুণালকে এই টাকা দিতে নিষেধ করে ও কুণালও টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। বদলে পুলিশের বড় কর্তাদের ঘুষ দেওয়া শুরু করে। ঘটনা জানতে পেরে কুণালকে ফোন করে লরেন্স বিষ্ণোই। পাঁচ কোটি টাকা চায়। এই টাকা না দেওয়ায় ঘটনার সূত্রপাত।