শেষ আপডেট: 1st February 2025 12:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মধ্যবিত্তের হেঁসেলে বিরাট স্বস্তি এনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে হাঁসফাঁস করা দেশে বসন্ত বাতাস ছড়িয়ে দিলেন নির্মলা সীতারামন। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে করশূন্য করার প্রস্তাব এনে বাজারে নগদ টাকার জোগান বজায় রাখার সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এদিন টানা অষ্টমবার কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার রেকর্ড সহ জাতীয় অর্থনীতিতে সংস্কারের আধখোলা জানালাও পুরো কপাটমুক্ত করে দেন তিনি। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী-কিশোরী, যুব, চিকিৎসা, মৎস্য, সমুদ্র, বন্দর, খনি, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি, গবেষণা মায় প্রবীণ ও প্রবীণতম ব্যক্তি সহ সব ক্ষেত্রকেই খুশির বার্তা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নির্মলা সীতারামন শনিবার বলেন, এই বাজেট উৎপাদন বৃদ্ধি, সর্বাত্মক উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগে জোর দেবে। আমাদের লক্ষ্য হল বিকশিত ভারত। আগামী পাঁচ বছরে আমাদের সামনে সবকা বিকাশের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। এই বাজেটে দরিদ্র, অন্নদাতা এবং নারী সহ ১০টি ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিকশিত ভারত অর্থাৎ দারিদ্র্যশূন্য ভারত, ১০০ শতাংশ বিদ্যালয় শিক্ষা যা গুণমানে উন্নত হবে। উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, ১০০ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি যার দ্বারা বেকারি দূরীকরণ হবে। আর্থিক ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ মহিলাদের ব্যবহার। বিশ্বের খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে দেশের কৃষকদের স্বনির্ভরতা দেওয়া।
এবারে বাজেটে ৬টি ক্ষেত্রকে সংস্কারের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল, কর সংস্কার, বিদ্যুৎ, নগরোন্নয়ন, খনি, ব্যাঙ্কিং এবং রেগুলেটরি সংস্কার। এদিকে, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হওয়া নিয়ে আলোচনার দাবি তুলতে শুরু করে অখিলেশ যাদব নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টি। বাজেট ভাষণের শুরু থেকেই বিরোধী দলগুলি সম্মিলিতভাবে এনিয়ে আলোচনার দাবি তোলে। শেষ পর্যন্ত বাজেট প্রস্তাব পাঠ শুরু হলে একযোগে বিরোধী দলগুলি লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যায়।
নির্মলার ঘোষণা, এই বাজেট এমএসএমই-র জন্য ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে স্টার্টআপের ক্ষেত্রেও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এমএসএমইকে ৫ কোটি টাকা থেকে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব আনেন সীতারামন। এছাড়া ভালোভাবে চলা রফতানিকারী এমএসএমইকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
সীতারামন আরও বলেন, ভারত হল মৎস্য উৎপাদনে দ্বিতীয়। তাই সমুদ্র ও নদী ছাড়াও যে কোনও মৎস্য উৎপাদনকারীদের প্রতি সরকার বিশেষ নজর দেবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে আন্দামান, নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপের জন্য।
গত ১০ বছরে ২৩টি আইআইটিতে পড়ুয়া সংখ্যা বেড়েছে ৬৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার। এবার বাজেটে এআই ক্ষেত্রকে শিক্ষাক্ষেত্রে আনার জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব আনা হয়েছে। এছাড়াও ১০ হাজার অতিরিক্ত আসন আগামী বছরের জন্য দেশের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলিতে আনা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে যা মোট ৭৫ হাজারের সংখ্যা ছোঁবে বলে জানান সীতারামন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সমস্ত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং গ্রামীণ এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাঁচটি নতুন ন্যাশনাল সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর স্কিলিং গঠন করা হবে। সীতারামন বলেন, দিনমজুরিদের জন্য সরকার পরিচয়পত্র ও ই-শ্রম পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করবে। তাঁদের স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায়। এর ফলে প্রায় ১ কোটি কর্মী উপকৃত হবেন।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াটের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উপর জোর দেন। বিমা ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জায়গায় সরকার ১০০ শতাংশ এফডিআইয়ের প্রস্তাব এনেছে। কেওয়াইসি প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবছর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে কেওয়াইসি চালু করার প্রস্তাব এনেছেন নির্মলা।
সীতারামন ঘোষণা করেন, আগামী সপ্তাহেই সংসদে একটি নতুন আয়কর বিল আসছে। এছাড়াও ৩৬টি জীবনদায়ী ওষুধকে বহিঃশুল্কের আওতার বাইরে আনা হচ্ছে। এছাড়া ৬টি জীবনদায়ী ওষুধকে মাত্র ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাব এনেছেন নির্মলা। ইলেকট্রনিক্সের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি হচ্ছে এবং টেলিকম সামগ্রীতে কমছে বেসিক কাস্টমস ডিউটি।
তিনি বলেন, নতুন আয়কর বিল আসছে ন্যায়কে সামনে রেখে। ব্যক্তিগত আয়কর সংস্কারে বিশেষ করে নজর দেওয়া হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির দিকে। টিসিএস এবং টিডিএসকে আগের থেকে অনেক উদারীকরণের চেষ্টা হয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের সুদের উপর কাটা করের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব আনেন নির্মলা সীতারামন। বাড়িভাড়া বাবদ টিডিএস ৪ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লক্ষ টাকা করা হল।