শেষ আপডেট: 9th June 2024 17:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এক বহুজাতিক সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসারের ৮৫ লক্ষ টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠল ভুয়ো সিবিআই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। শুধু সিবিআই নয়, কাস্টমস, নার্কোটিক্স এবং আয়কর অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পুরোটাই আবার করা হয়েছে স্কাইপের মাধ্যমে ভিডিও কল করে।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের এই ঘটনায় ক্রাইম ব্রাঞ্চে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। দিল্লিতেও একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, কারণ দিল্লিতে অবস্থিত 'রানা গার্মেন্টস' নামে একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে ওই টাকা। পুলিশ জানিয়েছে, রানা গার্মেন্টস-এর এইচডিএফসি অ্যাকাউন্ট থেকে আবার গোটা দেশ জুড়ে মোট ১০৫টি অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে ওই ৮৫ লক্ষ টাকা।
জার্মানির একটি ফার্মাসি সংস্থার ভারতীয় শাখায় এজিএম হিসেবে কাজ করা ওই প্রাক্তন অফিসার জানিয়েছেন, তিনি নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই অবসর গ্রহণ করেছেন, কারণ তাঁর টাকার দরকার ছিল। ২ মে অবসর নেওয়ার পরে অফিস থেকে টাকা পাওয়ার পরে ছেলেকে বিদেশের কলেজে ভর্তি করানোর জন্য ওই টাকা তিনি রেখেছিলেন এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। ১৭ মে তাঁর ছেলের ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্টও ছিল। কিন্তু তার আগেই ১৪ মে এই কাণ্ড ঘটে যায়।
তিনি বলেন, 'সিবিআই পরিচয় দিয়ে ওরা আমায় ফোন করেছিল স্কাইপে। ডিসিপি সাইবার ক্রাইম বলসিং রাজপুত বলে পরিচয় নিয়ে আমায় ভয় দেখায়, যে বেশ কয়েকটি মাদকদ্রব্য এবং মানি লন্ডারিং মামলায় আমার নাম এসেছে। আমার জেল হতে পারে। সিবিআইয়ের বসের সঙ্গে কথা বলতেও বলা হয় আমায়। আমি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলাম। এর পরে ওই ভুয়ো ডিসিপি তার এক বসের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে আমায় জানায়, আমি নির্দোষ। তবে আমায় তদন্তের জন্য ৮৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। যদি তদন্তে যদি কিছু পাওয়া না যায়, তা হলে মিনিট ১৫-র মধ্যেই সেই টাকা ফেরত দেওয়া হবে।'
এই কথা বলে, ভয় দেখিয়ে, ফাঁসানো হয় ওই অফিসারকে। পুরো বিষয়টা এমনভাবেই সাজানো হয়, যে মিথ্যে বলে বুঝতে পারেনি কেউ। ওই অফিসার আরও বলেন, 'দু’দিন ধরে জেরা করা হয় আমাকে। বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করেছিল, কাউকে ফোন করতেও বারণ করেছিল। আমি ওদের কথামতোই বিশাখাপত্তনমের এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে ৮৫ লক্ষ টাকার চেক দিয়ে দিই।'
এর পরেই যোগোযোগ বন্ধ করে দেয় ওই 'সিবিআই'। টাকা ফেরত আসা তো দূরের কথা। তখন ওই অফিসার শেষমেশ পুলিশের কাছে যান। এর পরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, গোটাটাই প্রতারণা। ওই অফিসারকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ওই অফিসারের অভিযোগ, বিশাখাপত্তনমের এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ভিতরের কারও সঙ্গে এই ঘটনার যোগসাজশ থাকতে পারে। কারণ অবসর নেওয়ার পরে তাঁর ঠিক কত টাকা কবে জমা পড়েছে, সে সব তথ্য ব্যাঙ্ক জানত। ওই গ্যাং থেকেও তাঁকে বলা হয়েছিল ওই পরিমাণ অর্থই চেক লিখে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে ফেলে দিয়ে আসতে। তার পরেই উধাও হয়ে যায় টাকা।
বিশাখাপত্তনমের ক্রাইম ব্রাঞ্চ ইতিমধ্যেই এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের থেকে বেশ কিছু নথি নিয়েছে, তদন্তও চালাচ্ছে। ব্যাঙ্কের তরফেও বলা হয়েছে, তারা পুলিশকে পুরোপুরি সাহায্য করছে। অন্য দিকে, দিল্লির উত্তমনগরে অবস্থিত রানা গার্মেন্টসের মালিক নিখোঁজ বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।