শেষ আপডেট: 17th March 2025 21:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine war) নিয়ে মস্কোর (Mosco) পক্ষ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (US President Donald Trump) । শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বকে চমকে গিয়েছে যুদ্ধ থামানোর প্রশ্নে ট্রাম্পের গলায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin প্রশংসা শুনে। অনেকের মতেই যা ভূ-রাজনীতিতে উলটপুরাণ। চিনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) ভাষ্য নিয়ে বেজিংয়ের প্রতিক্রিয়াতেও অনেকে বিস্মিত।
সোমবার চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং (Chinese foreign ministry spokesperson Mao Ning) সেদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের (Global Times) কাছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা খুশি।’
কৃত্রিম মেধা (artificial intelligence) বিশেষজ্ঞ তথা মার্কিন পডকাস্টার (podcaster) লেক্স ফ্রিডম্যানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতির উপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, আমাদের মতে মতের অমিল থাকতে পারে। তার ছাপ দু-দেশের সম্পর্কের উপর পড়তে দেওয়া যায় না।
মোদীর বক্তব্যের প্রশংসা করে মাও নিং বলেছেন, আমরা এই বক্তব্যকে সমর্থন করি। আমরা মনে করি, দু-দেশের সম্পর্ক এমন হওয়া দরকার যেন তা ড্রাগন ও হাতির ব্যালের মতো হয়। দু’দিন আগে চিনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই’ও বলেন, আমরা চাই দু-দেশের সম্পর্ক ড্রাগন ও হাতির ব্যালে নৃত্যের মতো হোক।
চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র দু-দেশের সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই প্রক্রিয়ার সূচনা হয় গত বছর অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে। সেখানে সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। ওই বৈঠকের পর সীমান্ত বিরোধ মীমাংসায় দু-দেশই আন্তরিক প্রচেষ্টা শুরু করে। তারফলে গত শীতের আগেই সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দু-দেশই নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত সেনা সরিয়ে নেয়।
এখন মোদীর মন্তব্যের জবাবে চিনের ‘ড্রাগন-হাতির ব্যালে’ (ballet between the dragon and the elephant) বার্তাকে ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই স্লোগানের দ্বিতীয় অধ্যায় বলে মনে করছেন। ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’ হল ১৯৫৪ থেকে ’৬২ পর্যন্ত ভারত-চিন বন্ধুত্বের ঘোষণা। ১৯৬২-এর চিন-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে সেই সম্পর্কে পাকাপাকি ফাটল ধরে। দু’দেশই একে-অপরে শক্রু মনে করতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্থায়ীভাবে সীমান্ত বিবাদে জড়ায় দু-দেশ।
সীমান্ত বিবাদকে পাশ কাটিয়ে কেন দু’ দেশ কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে? কূটনৈতিক মহল মনে করছে, দু-দেশই অনধাবন করেছে বিবাদ এড়িয়ে হাত ধরাধরি করে চললে লাভ বেশি। দু-দেশই একে অপরের বাজারে পণ্য বিক্রি করে লাভবান হতে পারে। ভারত বিশেষভাবে আগ্রহী কলকারখানায় সরাসরি চিনা বিনিয়োগ। অন্যদিকে, চিনও চায় ভারতের বিনিয়োগকারীরা তাদের দেশে কলকারখানা গড়ুক। বিগত কয়েক বছর যাবত চিনের আর্থিক প্রগতির হার নিম্নগামী।
দু’দেশের আগ্রহ নয়া মাত্রা পেয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর। চিনা পণ্যের উপর ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ১০ শতাংশ অতিরিক্ত রপ্তানি শুল্ক চাপিয়েছেন। ভারতের উপর চাপবে আগামী ২ এপ্রিল থেকে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-চিন নিজেদের মধ্যে বিরোধ কমিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে।