শেষ আপডেট: 14th January 2025 16:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রথম দু’দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হলেও সময় যত গড়াচ্ছে পুনের জেজুরির হাটে আশ্চর্যজনকভাবে কমতে শুরু করেছে গাধার বিক্রি। প্রতিবছরের মতো চলতি বছরেও পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে পুনে থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কুলদেবতা খান্ডোবার মন্দিরে বিশেষ মেলার আয়োজন করা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মহারাষ্ট্র তো বটেই, গুজরাত, রাজস্থানের মতো একাধিক রাজ্য থেকে শয়ে শয়ে ব্যবসায়ীরা পুনের এই গাধার হাটে ভিড় জমিয়েছেন। বছরের এই বিশেষ সময়ে মানুষ এই হাটে গাধার কেনাবেচা করতে আসেন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া মেলায় হাট জমজমাট থাকলেও সময় যত এগোচ্ছে অনান্য বছরের তুলনায় গাধা কেনার প্রতি আগ্রহ কমছে মানুষের।
জানা গেছে, মেলা শুরুর প্রথম দু’দিনে এক একটি গাধা এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে অনেক গাধাই বাজারে থাকলেও তাদের বিক্রি করতে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ব্রিক্রি হচ্ছে গুজরাতের কাঠেওয়াড়ি জাতের গাধা। যার দাম এক থেকে দেড় লাখ। তবে দাম সে সব গাধাদের বেশি উঠছে যাদের বয়স খুব কম। দাঁত ও কানের ধরণ দেখে হাটে গাধার দাম নির্ধারিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, যে সব গাধার বয়স খুব কম এবং যাদের দুটো দাঁত রয়েছে, তাদের দাম বাজারে চড়া। অন্যদিকে যাদের বয়স তুলনামূলকভাবে বেশি এবং যাদের চারটে দাঁত আছে তাদের দাম তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম।
কিন্তু প্রতিবছর মেলাকে কেন্দ্র করে ভাল ব্যবসা হলেও চলতি বছর কেন ধাক্কা খাচ্ছে ব্যবসা? সে প্রসঙ্গেই এক ব্যবসায়ী জানান, ‘আগে ইট ভাটা এবং নির্মাণ কাজে ইট বইতে গাধার প্রয়োজন হত। কিন্তু এখন প্রযুক্তির সাহায্যে আরও কম খরচে সেই কাজ হাসিল হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে গাধার বিক্রি কমছে।’
আরেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ‘ইটের ভাটায় আজকাল এত গাধা লাগে না। তাই বাজারের এমন দশা। আমরা ভাটায় কাজ পেলেও তা মেরেকেটে মাস পাঁচেকের জন্য পাই। কিন্তু বর্ষা আসলেই আমাদের আর কোনও কাজ থাকে না। তখন পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে মালিকদের থেকে টাকা ঋণ নিতে হয়। পরের বছর সেই টাকা মেটাতে গিয়েই আমাদের সব টাকা খরচ হয়ে যায়।’
চলতি বছরে বাজার মোটের উপর আশানুরূপ হলেও অনান্য বছরের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইটের ভাটাগুলি সেখানে পুরোদমে কাজ না শুরু করায় ক্রেতার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গুজরাতের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী অমল ধোত্রে জানান, ‘৫০টির মতো গাধা নিয়ে এলেও, এখনও পর্যন্ত মাত্র ২০টি গাধা বিক্রি হয়েছে তাঁর। বাকি ৩০টি এখনও পড়েই রয়েছে।’
পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েহেন, ‘আগে আমরা গাধা বেঁচে মোটা টাকা আয় করলেও, এখন গাধা বিক্রিই রীতিমতো যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে আমরা কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। এছাড়া গুজরাত থেকে নিয়ে এসে বিক্রি না হলে ফের একপাল গাধাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল ও খরচসাপেক্ষ।
সম্প্রতি গাধার দুধ বিক্রি করে বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করে তাক লাগিয়েছিলেন গুজরাতের যুবক ধীরেন সোলাঙ্কি। তাঁর কাছে ৪২টি গাধা রয়েছে। গুজরাতের পাটান জেলার বাসিন্দা ধীরেন। গাধার দুধের ব্যবসা করে তিনি এখন কোটিপতি। গাধার এক লিটার দুধ বিক্রি হয় ৫ হাজার টাকায়। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে গাধার দুধের চাহিদা ব্যাপক। ওই রাজ্যগুলিতে তিনি গাধার দুধ সরবরাহ করে মাসে ২-৩ লক্ষ টাকা আয় করেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া এক লিটার গাধার দুধের দাম ৫-৭ হাজার টাকা। গুঁড়ো হিসাবেও এই দুধ বিক্রি করা হয়। যার এক কেজির দাম এক লক্ষ টাকা। পাশাপাশি মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা ব্রণ কমাতে প্রতিদিন গাধার টকে যাওয়া দুধে স্নান করতেন বলে প্রচলিত আছে। এই দুধের কয়েক ফোঁটা বাচ্চাদের জন্য খুব উপকারী। স্থানীয়দের মতে গাধার দুধ চামচ প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে খবর।