প্রাচীন মনুষ্য সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে এই প্রাণিটির বন্ধুত্ব চিরকালীন।
কুকুর কখনও মানুষের সঙ্গে কাজ করেছে, কখনও সঙ্গী কিংবা সহায় হয়েছে।
শেষ আপডেট: 16 June 2025 12:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সারমেয়। সেই মহাভারতের কালে যুধিষ্ঠিরের স্বর্গারোহণেও সঙ্গে ছিল ধর্মরাজরূপী কুকুর। যে গোটা রাস্তা নানান দার্শনিক প্রশ্নে যুধিষ্ঠিরের মুখ দিয়ে শুনিয়েছিল জীবন, ধর্ম, কর্ম সম্পর্কে নানান যুক্তি ও নিদান। প্রাচীন মনুষ্য সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে এই প্রাণিটির বন্ধুত্ব চিরকালীন। কুকুর কখনও মানুষের সঙ্গে কাজ করেছে, কখনও সঙ্গী কিংবা সহায় হয়েছে। কখনও আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। তাই কুকুরকে পুজোও করা হয়েছে কোনও কোনও স্মারক প্রস্তরগাত্রে।
মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে দিল্লি হাইকোর্ট এক নির্দেশে পথ কুকুরদের পুনর্বাসন নিয়ে একটি নির্দেশ দিয়েছে। সে কারণেই এত কথার ভূমিকা। হাইকোর্ট বলেছে, পথ কুকুরদের পুনর্বাসনে একটি নীতি রূপায়ন করতে হবে। যাতে ধীরে ধীরে তাদের রাস্তা থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। যদিও পশুপ্রেমী সমাজকর্মীরা এই পদক্ষেপের নৈতিক ও বাস্তবিক লক্ষ্য নিয়ে যুক্তিযুক্ত উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ এটা অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য যে, মানুষপশুতে টইটম্বুর দেশের কোনও শহরেই কুকুরদের নিজেদের বাড়ি গড়ে দেওয়ার জায়গা নেই।
ভারতীয় কুকুর ও তার বৈশিষ্ট্য
বিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকরা সকলেই একমত যে, ভারতীয় উপমহাদেশে কুকুর ও মানুষের সহাবস্থান যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। ৫০০০ খিস্ট পূর্বাব্দের ভীমবেটকার একটি প্রস্তরচিত্রে রয়েছে একটি কুকুরের গলায় পোষ্যের দড়ি বাঁধা। সিন্ধু সভ্যতা খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ শতকে গৃহপালিত নানান কুকুরের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। হরপ্পা সভ্যতাতেও রয়েছে সারমেয়কুলের প্রমাণ।
বেদেও ইন্দ্রের একটি স্ত্রীজাতির কুকুর ছিল, যার নাম সরমা। এছাড়াও যম এবং রুদ্রদেবের পোষ্য ছিল কুকুর। কিংবদন্তির কাহিনি বলে, সরমা এতটাই অনুগত ছিল যে সে অসুরদের চুরি করা দেবতাদের গরু খুঁজে দেওয়ায় সাহায্য করেছিল। সরমা নামের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে সেই থেকেই সারমেয় শব্দটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। সারমেয় কথার অর্থ সরমার সন্তান। রামায়ণ ও মহাভারতে রাজার শিকারের অন্যতম অংশ ছিল কুকুর। যারা শিকার তাড়া করত কিংবা শিকার করা পাখি মুখে করে কুড়িয়ে আনত। একইভাবে নিম্ন শ্রেণির, অচ্ছ্যুত ও শুদ্রদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হতো মনুষ্যেতর প্রাণি হিসেবে।
ভারতীয় কুকুরের নমুনা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা থেকে পারস্যে যাওয়ারও প্রমাণ রয়েছে। গ্রিক লেখকদের কাছ থেকে জানা যায়, ভারতীয় কুকুর গ্রিসেও আমদানি করা হয়েছিল। হরিণ বা বন্য পশু শিকারের কাজে এগুলির ব্যবহার হতো। ম্যাসিডনের রাজা আলেকজান্ডার যখন সিন্ধু নদের তীরে এসে পৌঁছান তখন স্থানীয় আদিবাসীরা তাঁর মন জয় করেছিলেন এক বিশেষ প্রাণির সঙ্গে। অ্যারিস্টটলের মতে, এগুলি ছিল বাঘ ও কুকুরের সংকর প্রজাতির। খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে কুকুরের দৃষ্টান্ত রয়েছে ধর্মসূত্র, মনুস্মৃতিতেও।
আজকের পথ কুকুর
রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুর ইন্ডিজ বা দেশি নামে পরিচিত হলেও তারা রাতপাহারার অনেক কাজে দেয়। সমাজকর্মীদের অভিযোগ, কুকুরও এই পৃথিবীর বাসিন্দা। ফলে মানুষের মতোই তাদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে। যদিও অনেকে তা মানতে নারাজ। কারণ একের পর এক ঘটনায় দেখা গিয়েছে যে পথ কুকুরদের ঝাঁকের আক্রমণে শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তাই বহু জায়গায় পথ কুকুরদের জন্য সরকারি ব্যবস্থার দাবি জোরাল হচ্ছে। অবশ্য পাল্টা প্রতিবাদও করছেন পশুপ্রেমীরা।