আমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন একজন কুকি, অন্যজন মেইতেই সম্প্রদায়ের বিমানকর্মী।
কুকি-জো পরিবারের মেয়ে লামনুনথিয়েম সিংসন (বাঁদিকে) এবং মেইতেই কন্যা এনগাংথোই শর্মা কোংব্রাইলাকপাম। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 14 June 2025 11:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাহুল গান্ধী পারেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও ব্যর্থ হয়েছিলেন শান্তি ফেরাতে। কিন্তু, আমদাবাদে দুই ফুটফুটে রাজকন্যার মতো চেহারার বিমানকর্মীর মৃত্যুশোক মিলিয়ে দিল দীর্ঘদিনের কুকি-মেইতেই বিবাদকে। আমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন একজন কুকি, অন্যজন মেইতেই সম্প্রদায়ের বিমানকর্মী। যাঁদের অকালে চলে যাওয়া গোটা মণিপুরের হৃদয় ভিজিয়ে দিয়েছে চোখের জলে। বিবদমান দুই সম্প্রদায়ের ক্ষতবিক্ষত মন, একতার সুরে সেলাই করে দিয়েছে সংঘর্ষের ক্ষতকে।
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা যেন এক মুহূর্তে দুই যুযুধান গোষ্ঠীর রাহু কাটিয়ে দিয়েছে। শোক ও বেদনা তাদের এক করে তুলেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া থেকে কুকি-জো পরিবারের মেয়ে লামনুনথিয়েম সিংসন এবং মেইতেই কন্যা এনগাংথোই শর্মা কোংব্রাইলাকপামের ঘরে প্রার্থনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যখন নিশ্চিত জানা গেল যে, দুর্ঘটনায় কোনও বিমানকর্মীর বেঁচে নেই, তখন মাথার উপরে যেন পাহাড় ভেঙে পড়ে।
এরপরেই মণিপুরের সুশীল সমাজ এবং বহু সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। আর এই কাজে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে যেন ঐক্যের ছবি আঁকার জীবন্ত ক্যানভাস। সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে একে একে আঁকা হচ্ছে অকালে হারিয়ে যাওয়া দুটি তরুণীর আত্মার প্রতি শোক, প্রার্থনার চন্দনরেখা।
দিল্লির মেইতেই হেরিটেজ সোসাইটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মণিপুরের আপামর বাসিন্দার হৃদয় দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। সংকীর্ণ সম্প্রদায়গত বিভেদরেখা মুছে মণিপুর আজ শোকে মুহ্যমান। জাতিগত বিভেদে আমাদের রাজ্য গত ২ বছর ধরে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে রয়েছে। কিন্তু আজ দুঃখজনকভাবে দুই ‘নীল গগনের পরি’র মৃত্যু দুই সম্প্রদায়কে আবার কাছাকাছি এনে দিয়েছে। তাঁদের মৃত্যু আজ সেই সত্যকে মেলে ধরেছে যে, মানুষের জীবন কতটা অমূল্য। এই অবস্থায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই শ্রেষ্ঠ পথ। যেভাবে আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী একসঙ্গে মিলে কাটিয়েছি।
মেইতেই বিমান সেবিকার পরিবার শুক্রবার ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আমদাবাদে গিয়েছিলেন। ওই একই সময়ে কুকি বিমান সেবিকার পরিবারও আমদাবাদের একই হাসপাতালে ছিলেন। তাঁরাও বললেন, মৃত্যুর পর তারা আকাশের পরি হয়ে গিয়েছে। ওরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে জীবন কত মূল্যবান এবং এখনই শান্তি চাই পরস্পরের সঙ্গে বেঁচে থাকার তাগিদে।
কুকি ছাত্র সংগঠনও দিল্লিতে একটি মোমবাতি মিছিল করেছে দুই কন্যারই জন্য। মিছিলে ছিল দুজনেরই ছবি। দুজনেরই জন্য শোকপ্রকাশ করে বিবৃতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষত সিংসন, যিনি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মেয়ে ছিলেন। কারণ তাঁর পরিবার জাতি সংঘর্ষে এখনও ঘরছাড়া রয়েছেন। এক্স বার্তায় একজন সাধারণ মানুষ লিখেছেন, এই দুটি মেয়ে এমন দুই সম্প্রদায়ের প্রতীক যারা টানা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে খুনখারাবি, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, ধর্ষণ করে। কিন্তু, তাঁদের মৃত্যু আজ সকলকে টের পাইয়ে দিয়েছে যে, মরণের পরে সকলের ভাগ্যেই একটি গন্তব্য লেখা রয়েছে।