শেষ আপডেট: 19th October 2024 11:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মার্কিন নাগরিক খলিস্তানি জঙ্গি গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে খুনের চেষ্টার চক্রান্ত কষার অভিযোগে 'সিসি-ওয়ান' বা সহ-ষড়যন্ত্রকারী বিকাশ যাদবের নাম আমেরিকার বিচারবিভাগের তথ্যে উঠে আসার তিন সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি বিশেষ সংবাদে জানিয়েছে যে, দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল বিকাশকে একটি তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল। শনিবার দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি সংবাদে জানিয়েছে, গত নভেম্বরে কো-কন্সপিরেটর হিসেবে পান্নুন খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠে আসে আমেরিকা বর্ণিত এই ভারতীয় গুপ্তচরের নামে।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল গ্রেফতার করার পর এ বছর এপ্রিল মাসে জামিনে মুক্তি পান বিকাশ যাদব। উল্লেখ্য, মার্কিন বিচার বিভাগ গত শুক্রবার বিকাশ যাদবকে পান্নুনকে খুনের চেষ্টার চক্রান্তের অভিযোগে ভাড়াটে নিয়োগ করে খুনের ছক এবং অর্থ তছরুপের চার্জ গঠন করে। এবং তার ফলস্বরূপ আমেরিকার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ান্টেড নোটিস জারি করেছে।
এই অবস্থায় তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। শুধু খুঁজছে বলা ভুল, তাঁর নামে হুলিয়া জারি করেছে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। একটি পোস্টারও ছাপিয়েছে তারা। কিন্তু, কে এই বিকাশ যাদব? কেনই বা তাঁকে এমন নাছোড় হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আমেরিকা? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগই বা কী? বিদেশে গা-ঢাকা দিয়ে বেড়ানো নিষিদ্ধ খলিস্তানি জঙ্গি সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে খুনের চক্রান্ত কষার অভিযোগে আমেরিকার চোখে এখন ওয়ান্টেড তালিকায় ভারতের গুপ্তচর সংস্থার কর্মী বলে অভিযুক্ত বিকাশ। কারণ পান্নুন মার্কিন নাগরিক। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যাদব এখন আর ভারত সরকারের কর্মী নন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কে এই বিকাশ যাদব?
বিকাশ যাদবের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর, হরিয়ানায়। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি থেকে ৬ ফুট ১ ইঞ্চির মতো। কোড নেম সিসি-ওয়ান। ভারতীয় বিকাশের ছদ্মনাম 'আমানত'। এফবিআইয়ের পোস্টার অনুযায়ী বিকাশের এই নামটি ব্যবহার করা হয় সহযোগী, অন্য ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের অফিসার বিকাশ যাদব র-এ ডেপুটেশনে গিয়েছিলেন। মার্কিন বিচার বিভাগের বিবৃতি অনুসারে, যাদবের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সে ৫৩ বছর বয়সি নিখিল গুপ্তার সঙ্গে যুক্ত থেকে পান্নুনকে খুনের চক্রান্ত করেছিল। যাদব এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের বক্তব্য অনুযায়ী, যাদব ভারত সরকারের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের কর্মী। সিনিয়র ফিল্ড অফিসার হিসেবে তিনি কর্মরত। তাঁর কাজের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং চরবৃত্তি করা।
তদন্ত কী বলছে?
২০২৩ সালের মে মাস নাগাদ যাদব নিখিল গুপ্তাকে খুনের দায়িত্ব দেয়। গুপ্তাও একজন ভারতীয়, যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়িত বলে পরিচিত ছিল। যাদবের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে গুপ্তা এক ভাড়াটে অপরাধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু সেই ব্যক্তি ছিল আমেরিকার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সোর্স। সে গুপ্তাকে ভাড়াটে খুনের সঙ্গে যোগাযোগ করায়। যে আসলে ডিইএ-র গোপন অফিসার। যাদব তখন গুপ্তার মধ্যস্থতায় এক লক্ষ মার্কিন ডলারে রফা করে।
এরপর গুপ্তা খুনের গোটা পরিকল্পনা করে যেমন শিকারের ব্যক্তিগত তথ্য, নিউইয়র্কের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং তার প্রতিদিনের কাজকারবার। যাদব এও জানায়, প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর তাঁকে দিতে হবে। ২০২৩ সালে ১৮ জুন বা তার কাছাকাছি মুখোশধারী বন্দুকবাজরা খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গুরুদ্বারের বাইরে গুলি করে খুন করে। এর পরদিনই বিকাশ যাদব গুপ্তাকে জানিয়ে দেয়, আর অপেক্ষা নয়, এখনই এই কাজ করে ফেলতে হবে।