শেষ আপডেট: 5th October 2024 13:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করুণ কিন্তু বাস্তব। ক্যানসারে মৃত পুত্রের সংরক্ষিত হিমায়িত বীর্য রেখে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক রায় দিল দিল্লি হাইকোর্ট। মৃত্যুর আগে ক্যানসার আক্রান্ত পুত্রের বীর্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু, নানান আইনি জটিলতায় পুত্রের স্মৃতি হিসেবে তার পাচ্ছিলেন না বৃদ্ধ দম্পতি। শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁরা সেই অধিকার পেলেন।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি প্রতিভা এম সিং তাঁর রায়ে বলেন, মৃত্যুর পর তাঁর বীর্য দিয়ে সন্তান উৎপাদনের কোনও আইনি বাধা নেই। দাতার সম্মতি থাকলে এবং তাঁর কোনও স্বামী-স্ত্রী না থাকলে আইনি কোনও সমস্যা নেই। হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিচারপতি সিং আরও বলেন, মৃত পুত্রের প্রথম শ্রেণির আইনি উত্তরাধিকার হওয়ায় বাবা-মা তাঁর হিমায়িত বীর্য পেতেই পারেন।
প্রসঙ্গত, প্রীত ইন্দর সিং ২০২০ সালের জুনে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩০ বছর। কেমোথেরাপি শুরুর আগেই তাঁর সম্মতিতে বীর্ষ সংরক্ষিত করা হয়। কারণ, কেমোথেরাপিতে সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা চলে যেতে পারে। দিল্লি হাইকোর্টের মত হল, সন্তান উৎপাদনের বস্তু আইনের চোখে উত্তরাধিকারের সম্পত্তি বা সম্পদ, তা বীর্য হলেও হতে পারে।
শ্রীগঙ্গারাম হাসপাতালকে আদালত নির্দেশে জানিয়েছে, প্রিত ইন্দর সিংয়ের হিমায়িত বীর্য তাঁর বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হোক। গত ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর মারা যান প্রিত। তারপর ডিসেম্বরে প্রিতের বাবা গুরবিন্দর সিং এবং মা হরবীর কৌর হাসপাতালের কাছে আবেদন জানান যে, তাঁদের যেন সংরক্ষিত ওই বীর্ষের নমুনা দিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু, তাঁদের কাছে সন্তানের বীর্য তুলে না দেওয়ায় তাঁরা ২০২১ সালে দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তাঁদের আবেদনে বাবা-মা জানান, তাঁরা এবং তাঁদের দুই কন্যা এই হিমায়িত বীর্যের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন। এই বীর্য দিয়ে বিকল্প মাতৃত্ব প্রয়োগ করে বংশরক্ষায় কোনও সন্তান উৎপাদন হলে সে দায়িত্ব তাঁদের।
বিচারপতি রায়দানকালে বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি বিবাহিত হতেন, তাহলে বিষয়টি এত জটিল আকার ধারণ করত না। কেবলমাত্র স্বামী-স্ত্রী সম্মতিতেই তা সম্ভব হতো। কিন্তু স্ত্রী না থাকাতেই প্রশ্ন উঠেছে। বিচারপতির প্রশ্ন, মরণোত্তর সন্তান উৎপাদনে কি চলতি আইনে কোনও বাধা আছে? উত্তর, নেই। কোনও বাধা না থাকায় আদালতও কোনও বাধা আরোপ করতে পারে না। গঙ্গারাম হাসপাতালকে অবিলম্বে ওই বীর্য দিয়ে দিতে বলেছে আদালত যাতে তাঁরা বংশরক্ষায় বিকল্প মাতৃত্বে তা ব্যবহার করতে পারেন।
আদালত আরও বলেছে, এতদিন আদালতের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া কিংবা স্বেচ্ছামৃত্যু সংক্রান্ত মামলায় রায় দেওয়া। এখনও পর্যন্ত আদালতে এমন একটি মামলা আসেনি যেখানে বাস্তবিক নতুন প্রাণ সঞ্চার অথবা শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব হতে চলেছে। নতুন জীবন লাভ হবে একটি শিশুর। সে কারণেই আদালতকে কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু, এই বীর্য যেন কোনওভাবেই ব্যবসায়িক স্বার্থে বা আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আগত শিশু যেন নির্দিষ্ট বিকল্প মায়ের গর্ভেই সঞ্চারিত হয়, বলে দিয়েছে আদালত।