Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 8 February 2025 14:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার ভোট গণনা শুরুর পর থেকেই পালে হাওয়া লেগেছিল বিজেপির। ট্রেন্ড তখনই কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মুখ থুবড়ে পড়বে কেজরিওয়ালের। গত বুধবার যে ক'টা বুথফেরত সমীক্ষা বেরিয়েছিল, তাতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল দিল্লির কুর্সি দখল করবে ভারতীয় জনতা পার্টি।
ইতিহাসে বলে, নন্দ বংশ ধ্বংস করে চাণক্য বা কৌটিল্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন। বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলির মধ্যে 'চাণক্য' তার মধ্যে অন্যতম, যারা একাধিকবার এক্সিট পোলের সমীক্ষা মিলিয়ে দিয়েছে। একই ভাবে 'অ্যাক্সিস'ও।
সমীক্ষায় পারদর্শী দুই প্রতিষ্ঠান টুডেজ চাণক্য ও অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া তাদের সমীক্ষায় চট জলদি কিছু করেনি। বরং বুধে ভোট গ্রহণের পর তারা সমীক্ষার ফলাফল জানাতে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় নেয়। যা পড়ে নিশ্চিত হয় তো কেজরিওয়ালের পা হড়কানো অবস্থা হয়েছিল।
চাণক্য দাবি করেছিল, দিল্লি বিধানসভা ভোটে কেজরিওয়ালের আসন এক ধাক্কায় অনেকটাই নেমে আসবে। যা ধস নেমে কমবেশি ১৯টি হতে পারে। আম আদমি পার্ট পেতে পারে ১৩ থেকে ২৫টি আসন। বিপরীতে বিজেপি পেতে পারে কমবেশি ৫১টি আসন। তাদের হিসাবে বিজেপি ৪৫ থেকে ৫৭টি আসনে জিততে পারে।
শুধু তাই নয় সমীক্ষা সংস্থা জানিয়েছিল, কংগ্রেস এবারও খাতা খুলতে পারবে না। সাবেক জাতীয় দল কংগ্রেসের ভোট কেটেই দিল্লিতে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক পুষ্ট করেছিল আপ। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটেও কংগ্রেস মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর আম আদমি পার্টি পেয়েছিল ৫৪ শতাংশ ভোট।
কিন্তু চাণক্যর সমীক্ষার দাবি করেছিল কংগ্রেসের ভোট এবার বাড়বে। সংখ্যাটা হতে পারে ১০ শতাংশ। আর কেজরিওয়ালের ভোট কমে যেতে পারে ১৩ শতাংশ। কংগ্রেস তাদের ভোট অনেকটা ফেরানোর জন্যই বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে আপ।
অন্যদিকে আরও এক সমীক্ষা সংস্থা অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়াও চাণক্যর সুরেই সুর মিলিয়েছিল। তাদের হিসাবে বলা হয়েছিল আপ জিততে পারে ১৫ থেকে ২৫টি আসনে। আর বিজেপির দখলে থাকবে ৪৫ থেকে ৪৮টি আসনে জিততে পারে। একটি আসন পেলেও পেতে পারে কংগ্রেস।
অ্যাক্সিসও এলাকা ধরে ধরে বলেছিল কংগ্রেসই এই নির্বাচনে ভোট কাটুয়া হতে পারে। সর্বনাশ হতে পারে কেজরিওয়ালের পার্টির। তা সে নয়াদিল্লি এলাকা হোক বা চাঁদনি চক—কংগ্রেসের ভোট বাড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। অ্যাক্সিসের হিসাবে বলা হয়েছিল বিজেপি পেতে পারে ৪৮ শতাংশ ভোট। আপের থাকতে পারে ৪২ শতাংশ ভোট। আর কংগ্রেস ৭ শতাংশ।
দুই পারদর্শী সমীক্ষা সংস্থার দাবিকে সত্যি প্রমাণ করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি। ২৭ বছর পর দেশের রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন বিজেপির। ইতিহাস বলছে, ১৯৯৮ সালে শেষবার তারা দিল্লির মসনদে ছিল। শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। তার পর কংগ্রেস দিল্লির ক্ষমতা দখল করে। ২০১৩ সালে প্রথম বার ক্ষমতায় আসে আপ।
এই নির্বাচনে সবথেকে বড় পরাজয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার। নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রবেশ বর্মার কাছে ৩১৮২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং বর্মার আইএএস ছেলে আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের সময় চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন।
বিপর্যয়ের আবহে আপের সান্ত্বনা মুখ্যমন্ত্রী আতিশীর জয়। দিল্লির কালকাজি কেন্দ্র থেকে ৩৫০০ ভোটের ব্যবধানে জিতলেন আপের মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মারলেনা। তিনি বিজেপির রমেশ বিধুরী ও কংগ্রেসের অলকা লাম্বাকে হারিয়ে এই কেন্দ্র থেকে জিতলেন। ভোটের ফলে বিধুরী দ্বিতীয় ও কংগ্রেস প্রার্থী পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, দিল্লির মুখ আগামী মুখ কে? শনিবার বেলায় দিল্লি বিজেপির প্রেসিডেন্ট বীরেন্দ্র সচদেবাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "দিল্লির মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ভোট দিয়েছেন। মানুষের যন্ত্রণা আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি। বিজেপি থেকেই কেউ পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তবে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, ফলাফল দেখে সেটা দলই সিদ্ধান্ত নেবে"।
Advertisement
Advertisement