শেষ আপডেট: 7 February 2024 05:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় মঙ্গলবার পাশ হয়ে গিয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সংক্রান্ত বিল। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী ঘোষণা করেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই চালু হয়ে যাবে অভিন্ন বিধি।
উত্তরাখণ্ডের পর বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশও ঘোষণা করেছে বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত বিল পেশ করতে চলতে তারা। চলতি সপ্তাহেই দুই রাজ্যে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ জুড়ে দেশের সব রাজ্যে বাজেট অধিবেশন চলবে। এই সুযোগে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি শাসিত বাকি নয় রাজ্য একই পথে হাঁটতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।
পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ড এই ব্যাপারে নজির তৈরির পথে মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে বিল পাশ করিয়ে। ওই পাহাড়ি রাজ্যেকেই এই ব্যাপারে মডেল আইন তৈরির জন্য বেছে নিয়েছে পদ্ম শিবির।
উত্তরাখণ্ড কংগ্রেস বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি। বাকি রাজ্যগুলিতে হাত শিবির কী অবস্থান নেয় সেটাই দেখার।সর্ব ভারতীয় কগ্রেস এখনও এই ব্যাপারে অবস্থান জানায়নি। যদিও উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন পাশের রাজ্য উত্তর প্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি। দলের তরফে সাংসদ এসটি হাসান মঙ্গলবার বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি পুরোপুরি ইসলাম বিরোধী। সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোন্যাল ল’ বোর্ডও।
হাসান বলেন, মুসলিমদের পক্ষে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি মানা সম্ভব নয়। তারা কোরানের উল্লেখিত হিদায়েত বা নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।
মুসলিম পারসোন্যাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মৌলানা খালিদ রাশিদ ফারাঙ্গি মাহালির বক্তব্য, ভারতে কোনও অভিন্ন বিধি থাকতে পারে না। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব বিধান আছে যা সেই গোষ্ঠী মেনে চলে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে রাজনীতি আরও চড়বে। মুসলিম ও খ্রিস্টানরা জোরালো আপত্তি জানাবে। জনজাতিদের মধ্যেও অভিন্ন বিধি নিয়ে আপত্তি আছে।
সেই বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উত্তরাখণ্ডের বিলে জনজাতি এবং পাহাড়ের মূল নিবাসীদের অভিন্ন বিধির আওতায় আনা হয়নি। অর্থাৎ তারা নিজেদের সম্প্রদায়ের প্রচলিত নিয়মেই বিয়ের বয়স, বিচ্ছেদ, দত্তক গ্রহণ এবং উত্তরাধিকার নির্ধারণ করতে পারবে।
মনে করা হচ্ছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের সরকারও বিলের একই খসড়া অনুসরণ করবে। দুই রাজ্যেই জনসংখ্যার বিপুল অংশ আদিবাসী। অভিন্ন দেওয়ানি
বিধির মূল লক্ষ্য হল বিয়ের বয়স, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে এক নিয়ম চালু করা। আপত্তি, বিরোধিতার কারণ, এই সব ক্ষেত্রে এক এক ধর্মে এক এক নিয়ম চালু আছে। ইসলামিক রীতি অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৪ ধরা হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই তালাক প্রথা অনুসরণ করে থাকে। যদি অধিকাংশ মুসলিম ওই বিধি অনুসরণ করেন না। আবার ধর্মীয় বিধি বাতিল থাকার পক্ষে। অনেকেই সরকারি উদ্যোগকে ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ মনে করছেন। আদিবাসীদের একাধিক গোষ্ঠীকেও বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮-র কম। তারাও সম্প্রদায়ের বিধি বহাল রাখার পক্ষে।
উত্তরাখণ্ডে বিজেপি ২০২২-এর বিধানসভা ভোটে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও গোটা দেশেই বিজেপি অভিন্ন বিধি চালু করা হবে বলে দলের জন্মলগ্নেই ঘোষণা করে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডকে এই ব্যাপারে দলের পরীক্ষাগার করা হল। ২০২৪-এ মোদী সরকার বিপুল সংখ্যাধিক্ষ্য নিয়ে ক্ষমতায় টিকে গেলে তা গোটা দেশে বলবৎ করা হতে পারে।