শেষ আপডেট: 29th July 2024 15:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা একেই বলে। সিনেমার রোমকূপ সোজা করে দৃশ্যের থেকেও ভয়ঙ্কর! বেসমেন্টে জল বাড়ছে, আর পড়ুয়ারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, সিঁড়ির রেলিংয়ে তাঁদের হাত পিছলে যাচ্ছে। এক ছাত্রের কথায়, যে পড়ুয়াটি একেবারে শেষ মিনিটে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল, সে বলেছিল আরও দুটি মেয়ে এখনও ভিতরে আটকে রয়েছে। ওরা তাঁর পা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল কিন্তু, মুঠো শক্ত করে ধরতে পারেনি। পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের শ্রেয়া যাদব, তেলঙ্গানার তানিয়া সোনি এবং কেরলের নবীন দালভিন। এঁদের অপরাধ কী ছিল? দেশের তিন মেধাবী তরুণ প্রজন্মের দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল তাঁরা ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন। দেশ পরিচালনার প্রশাসনিক দায়িত্বশীল কাজে যোগ দেবেন। সে কারণে তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে একটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে এসেছিলেন আইএএস পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে। আর সেটাই তাঁদের কাল হল।
মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসা ওই ছাত্র আরও বলেন, বেসমেন্টের দরজার কাছে আমি বসেছিলাম। ওটা এমনভাবে ভেঙে পড়ল যেন দিল্লির সমস্ত জল এখানে ঢুকে পড়েছে। জলের তোড়ে কাচের দরজা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন পড়ুয়ার মৃ্ত্যুর পর দিল্লির সবকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই এখন আতসকাচের তলায়।
শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেরির বিরুদ্ধেই নয়, তাঁদের অভিযোগ, এইসব কোচিং সেন্টারগুলির অব্যবস্থার বিরুদ্ধেও। তাঁদের একটাই কথা, কোচিংয়ের জন্য আমরা যে টাকা দিই, ওদের কাছে তার থেকে অনেক সস্তা আমাদের জীবন, বলছেন তাঁরা। গত শনিবার একদিনের বৃষ্টিতে দিল্লির জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায় ভারী বৃষ্টিতে। যার মধ্যে ছিল রাজেন্দ্র নগর এলাকাও। যাকে হাজারো সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার প্রত্যাশীদের পাড়া বলে চেনে লোকে। এখানেই রয়েছে আরএইউ-এর আইএএস বিল্ডিং, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এক ছাত্র বলেন, বেসমেন্টে থাকা (অধিকাংশ কোচিং সেন্টারেরই লাইব্রেরি বেসমেন্টে রয়েছে) লাইব্রেরি বন্ধ হয় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ। ওইদিন আমরা চলে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছিলাম। সেই সময় সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর এসে বলেন, এখনই বেরিয়ে যেতে হবে। কারণ বেসমেন্টে জল ঢুকতে শুরু করেছে। বাঁচতে চাইলে তখনই বেরিয়ে যেতে বলেন তিনি।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বন্যার তোড়ের মতো জল এসে ঢোকে বেসমেন্টে। বাইরের লোহার গেট ভেঙে জল এসে লাইব্রেরির কাচের দরজাও গুঁড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বেসমেন্টের ছাদ পর্যন্ত জলে ভরে যায়। কয়েকজন বেরিয়ে আসতে পারলেও জনা সাত-আট পড়ুয়া আটকে যান। তাড়াহুড়োতে অনেকেই তাঁদের বইপত্র ও ব্যাগ নিয়ে বেরনোর সুযোগ পাননি।
শনিবারের ঘটনা পড়ুয়াদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন দিল্লি পুরসভার দায়িত্ব এবং প্রশাসনের পরিকাঠামো নিয়ে উদাসীনতার দিকে। অনেকের অভিযোগ কোচিং সেন্টারগুলিতে সংখ্যা না দেখে ভর্তি নেওয়ার বিরুদ্ধেও। বেআইনিভাবে বেসমেন্ট ব্যবহার, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকা এবং সাধারণ সুযোগসুবিধা না থাকার কারণেও তাঁরা ক্ষুব্ধ। অথচ, প্রতিবছর এই সেন্টারগুলি এক-একজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা কামাচ্ছে।
নিকটবর্তী প্যাটেল নগরে থাকা এক ছাত্র জানান, একটি কোচিং সেন্টার প্রশিক্ষণ বাবদ ২ লক্ষ টাকা করে নেয় কিন্তু পড়ুয়াদের নিরাপত্তায় ২ টাকাও খরচ করে না। লাইব্রেরি বা স্টাডি রুমে ঢোকা ও বেরনোর পথ খুব সংকীর্ণ। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে লোকে ভিতরে দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে। এই সেন্টারগুলি বেসমেন্ট হল এক-একটি মৃত্যুফাঁদ, বলেন তিনি।
শ্রেয়া যাদবের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর নগরে। কৃষিবিজ্ঞানে স্নাতক শ্রেয়া দিল্লিতে এসেছিলেন এপ্রিল মাসে। ভেবেছিলেন আইএএস হবেন। একটি ডেয়ারি ফার্মে কাজও করতেন শ্রেয়া। শ্রেয়ার দাদা বলেন, এরপর আর কে ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করতে বাইরে পাঠাবে? ওখানে দেখার মতো কেউ ছিল না। ওরা আমাদের ঘটনাটি জানায়নি পর্যন্ত। এই দায়িত্বটুকুও নেই! প্রশাসন কী করে এমন প্রতিষ্ঠান চালানোর অনুমতি দিতে পারে, প্রশ্ন তাঁর।