দেওবন্দি ইমাম মৌলানা আবদুল আজিজ গাজি।
শেষ আপডেট: 6 May 2025 14:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহলগাম হত্যাকাণ্ড নিয়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। তলায় তলায় এবং প্রকাশ্যে দুই দেশই যুদ্ধের একটা স্রোত বইয়ে চলেছে। যা নিয়ে দুদেশের মানুষের মধ্যেই আতঙ্ক ও উত্তেজনার পরিবেশ গড়ে উঠেছে। এরমধ্যেই যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সরকার ও সেনা বিরোধী বিদ্রোহের আওয়াজ তুললেন দেওবন্দি ইমাম মৌলানা আবদুল আজিজ গাজি। ইসলামাবাদের বিখ্যাত লাল মসজিদের প্রধান হলেন গাজি।
নমাজের ভাষণে মৌলানা গাজি তাঁর ভক্ত-অনুরাগীদের প্রশ্ন করেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যদি যুদ্ধ বাধে, তাহলে তা কি আপনারা সমর্থন করেন? যাঁরা সমর্থন করেন, তাঁরা হাত তুলুন। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর একটিও হাত না ওঠায় গাজি বলেন, এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে তা ইসলামি লড়াই হবে না।
পাকিস্তানের রাজধানী শহরের প্রখ্যাত লাল মসজিদের বিতর্কিত ইমাম এনিয়ে পাকিস্তানি সরকারের উপর তোপ দাগেন। তাঁর দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে কোনও ইসলামি যুদ্ধ হতে যাচ্ছে না। ভারতের সঙ্গে নিজের দেশের সরকারের তুলনা টেনে গাজি বলেন, আজ পাকিস্তানের সরকারি প্রশাসন কাফেরের মিলিত ব্যবস্থা। এরা আল্লার উপর বিশ্বাস রাখে না। এই সরকার উৎপীড়কের সরকার। ভারতের থেকেও নিকৃষ্ট। এখানে যত শোষণ-নির্যাতন চলে, এতটা তো ভারতেও হয় না। লাল মসজিদে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল, তা কখনও ভারতে হয়েছে বলে শুনেছেন!
মৌলানা গাজির একটি নমাজপাঠের ভাষণের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়েছে নেট পৃথিবীতে। তাতে গাজি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ দুরবস্থা, টালমাটাল পরিস্থিতির কথা নিন্দার ভাষায় তুলে ধরেন। পাক সরকারকে নিপীড়নকারী বলে মন্তব্য করে বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে এবং নিজেরই দেশের মানুষের উপর অবিচার করে যাচ্ছে। সে কারণেই দেশ ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে।
MUTINY IN PAKISTAN ‼️
— Maj Digvijay Singh Rawat, Kirti Chakra (@Dig_raw21) May 5, 2025
In Pakistan Deobandi cleric Maulana Abdul Aziz Ghazi asked the crowd to raise their hands in support of Pakistan during India-Pakistan war , not a single hand went up. He went on to say that Pakistan is more oppressive than India—pointing out that India… pic.twitter.com/LRK5hpONQg
ভাষণে তিনি প্রশ্ন রাখেন, আপনাদের কতজন যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানকে সমর্থন করবেন, হাত তুলুন। কেউ হাত না তোলায় তিনি বলেন, এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, দেশের মানুষের মধ্যে চেতনা এসেছে। কারণ, মূল কারণটাই হচ্ছে এই যুদ্ধ ইসলামের জন্য যুদ্ধ হবে না। ওয়াজিরিস্তান, বালুচিস্তান, খাইবার পাখতুনখোয়ায় যে সরকারি অত্যাচার চলছে তা কি ভারতে হচ্ছে? আমাদের এখানে যেমন নিজের দেশেরই সেনাবাহিনী জেট যুদ্ধবিমান থেকে দেশের লোকের মানুষের উপর বোমা ফেলছে, ওদের দেশে এরকম হয়, প্রশ্ন তুলেছেন গাজি। ভারতে কোন সম্প্রদায়ের এত সংখ্যক মানুষ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন? আর পাকিস্তানে ভালবাসার মানুষের হদিশ পেতে আত্মীয়রা ধরনার পর ধরনা, প্রতিবাদ মিছিল করছেন। এদেশে সরকারের বিরোধিতা করলেই ইমামরা উধাও হয়ে যাচ্ছেন, সাংবাদিকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তেহরিক-ই-ইনসাফের সদস্যরা গুম হয়ে যাচ্ছেন, বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এই গাজিই একসময় সরকারি প্রচারের প্রধান মুখ ছিলেন, এখন তিনিই শাহবাজ শরিফ সরকারের খোলাখুলি নিন্দা করে চলেছেন। ১৯৬৫ সালে লাল মসজিদ স্থাপনের পর থেকে ভারত বিরোধী কট্টরপন্থী ধ্যানধারণার কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই জায়গা। এই মসজিদের প্রধানরা বরাবরই পাকিস্তানি চর সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকেন।