শেষ আপডেট: 23rd February 2024 12:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশের প্রধান বিচারপতি বলে কথা। পাহাড়প্রমাণ স্ট্রেস সামলাতে হয় রোজই। কীভাবে এত মানসিক চাপ সামলে ‘ফিট অ্যান্ড ফাইন’ থাকেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়? প্রধান বিচারপতি নিজেই জানিয়েছেন তাঁর সুস্থ ও চনমনে থাকার রহস্য।
ঘড়ি ধরে কাজ করতে ভালবাসেন। আলস্য একেবারই পছন্দ নয় প্রধান বিচারপতির। ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ভোর সাড়ে ৩টেয় উঠে পড়েন। তারপর সময় ধরে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন। শরীরচর্চা শেষ হলে নিয়ম মেনে খাবার খান। ভেগান ডায়েট করছেন গত পাঁচ মাস ধরে। মাছ-মাংস-ডিম ছুঁয়েও দেখেন না। শুধু আমিষ কেন, তিনি দুধ, ছানা পনিরও খান না। রীতিমতো ভেগান ডায়েট মেনে চলেন। বিচারপতি বলছেন, তিনি সাত্ত্বিক জীবন কাটান। সাত্ত্বিক খাবারও খান। এই নিয়ম মেনেই তিনি স্ট্রেস জয় করেছেন, তাঁর জীবনধারাতেও বদল এসেছে।
প্রধান বিচারপতির কথায়, “কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই জীবনযাত্রা বদলে ফেলি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাকে আয়ুষ ও আয়ুর্বেদের উপকারিতার কথা বলেন। এরপর থেকেই আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথিতেই ভরসা রাখি। খাবার খাই নিয়ম মেনে। ভেগান ডায়েট শুরু করেছি। নিয়মিত ভোরে উঠে শরীরচর্চা করি। সাত্ত্বিক জীবন কাটাচ্ছি।” প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলছেন, আপনি কী খাচ্ছেন ও কতটা খাচ্ছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে কী কী খাবার যাচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে শরীর কেমন থাকবে। খাদ্যাভাসের সঙ্গে জীবনধারার মানও জড়িয়ে আছে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলছেন, সাত্ত্বিক খাবার মানে হল কী ধরনের খাবার দিয়ে দিন শুরু করছেন এবং সারাদিন কী কী আপনার শরীরে ঢুকছে, তার উপরেই নির্ভর করবে আপনার জীবনধারা কতটা উন্নত হবে।
আয়ুষ হোলিস্টিক ওয়েলনেস সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলছেন, ঘরে বাইরে মানসিক চাপ কমাতে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার। জীবনযাপনে যেন নিয়ম-নীতি থাকে। তাহলেই বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে।
২০১৬ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। একাধিকবার সাংবিধানিক বেঞ্চের অংশ হয়েছেন তিনি। অযোধ্যার জমি-বিতর্ক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দিয়েছেন। শুধু অযোধ্যা নয়, সমকামী সম্পর্কে মান্যতা দেওয়া, আধার স্কিমের বৈধতা, শবরিমালার মতো রায় দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিচারপতিদের বেঞ্চের অংশ ছিলেন তিনি। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বাবা ওয়াইভি চন্দ্রচূড়ও ভারতের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দেশে সবথেকে দীর্ঘ সময়ের প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি।
মাল্টিটাস্কিং করতে তিনি বরাবরই পছন্দ করেন। আইনেও আছেন আবার গানেও। বিচারপতি চন্দ্রচূড় নিজেই বলেছিলেন, তখন বয়স কুড়ির কোঠায়। আইন-আদালতের কাজ শিখতে শুরু করেছেন। সে দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশিই রেডিও জকির কাজ নিয়েছিলেন তিনি। সেটা ছিল নিতান্তই শখ পূরণ। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে জকি হিসেবে কাজ করেছেন বহুদিন।
রোজ আদালত থেকে বাড়ি ফেরার পরে গান শোনাটা তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, এমনই বলেছেন দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা-মোকদ্দমা সামলাতে হয় প্রায় রোজই। অনেক স্পর্শকাতর মামলাও থাকে। সেখানে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে রায় দিতে হয়। মস্তিষ্কে আর স্নায়ুতে চাপও পড়ে বিস্তর। তার মধ্যে আইনজীবীদের মতভেদ, বচসা, বাদী ও বিবাদী পক্ষের তুলকালাম কান যেন ঝালাপালা করে দেয়। তাই বাড়ি ফিরেই নিজের পছন্দের গান নিয়ে বসে যান তিনি। দিনভরের স্ট্রেস চলে যায় গান শুনেই। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে মেডিটেশনও করেন। যোগব্যায়াম আর মেডিটেশন তাঁকে সবসময় মানসিক শান্তি দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।