শেষ আপডেট: 1st January 2025 21:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১০ দিন ৭০০ ফুট কুয়োয় আটকে থাকার পর আজ অর্থাৎ বুধবার তাকে বের করে আনতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা। সঙ্গে সঙ্গে পাঠানো হয় হাসপাতালে। তারপরই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল চিকিৎসকরা।
বুধবার সকাল থেকেই 'অপারেশন চেতনা' নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। জানা যায়, দীর্ঘ ১০ দিনের অমানুষিক চেষ্টার পরে অবশেষে উদ্ধারকারী দল চেতনাকে খুঁজে পেয়েছে। বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ জানা যায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই চেতনাকে কুয়ো থেকে বের করে আনা হবে। রাজস্থানের কোটপুতলির কিরতপুরায় তখন শুধুই প্রার্থনা আর অপেক্ষা। ছোট্ট শরীরে প্রাণটুকু যেন থাকে।
৭০০ ফুট গভীর কুয়োর অন্ধকারে আটকে থাকা ছোট্ট চেতনার নিস্তব্ধতা সবাইকে তাড়া করে ফিরেছে এই ১০ দিন ধরে। তার ক্ষুধার্ত আর তৃষ্ণার্ত শরীর, তার মায়ের আকুল কান্না আর উদ্ধারকর্মীদের অনবরত শ্রম-সবকিছু মিলে নির্মম একটা সময়ের সাক্ষী কোটপুতলি। মাটির অনেক নীচে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল ফুটফুটে এক শিশু। সবাই অসহায়।
এ যেন শুধু একটা দুর্ঘটনা নয়, মানুষের ধৈর্য আর আশার এক অগ্নিপরীক্ষা। মেয়েটিকে ফিরে পাওয়ার জন্য দিনরাত সংগ্রাম করে চলা উদ্ধারকর্মীরাও জান লড়িয়ে দিয়েছেন। সে লড়াই শেষ হল আজ, বুধবার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাসি ফুটতে থাকে উদ্ধারকারী দলের। চেতনার মা-বাবা ও পরিবারও আশার আলো দেখতে শুরু করে। কিন্তু শেষমেষ লড়াই শেষ হল একরত্তির। কুয়ো থেকে বের করে আনার পর হল মৃত্যু।
গত সোমবার দুপুরে চেতনা কুয়োয় পড়ে যাওয়ার পর থেকে এই উদ্ধার অভিযান চলছিল। আজ ছিল দশম দিন।
চেতনার দুর্ঘটনার টাইমলাইন-
২৩ ডিসেম্বর:
দুপুর দুটো নাগাদ কোটপুতলির কিরাতপুরার বড়িয়ালি ধানি এলাকায় খেলতে খেলতে ৭০০ ফুট গভীর কুয়োয় পড়ে যায় চেতনা।
১০ মিনিট পরে মেয়েটির কান্না শুনে পরিবার জানতে পারে, সে বোরওয়েলে পড়েছে।
দুপুর ২:৩০-এ প্রশাসন, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
৩:২০-এ চিকিৎসক দল উপস্থিত হয়।
৩:৪৫-এ পাইপের মাধ্যমে চেতনার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়।
বিকেল ৫:১৫-এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
রাত ৮:৪৫-এ দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চেতনাকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।
রাত ৩:০০ পর্যন্ত দু'বার চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হয়।
২৪ ডিসেম্বর:
সকাল ৫:৩০ থেকে প্রশাসনের অভিযান শুরু হয়।
পরিবারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়, হুক ব্যবহার করে চেতনাকে উপরে তোলার।
সকাল ৯:৩০ পর্যন্ত চেতনাকে ১৫ ফুট উপরে তোলা হয়।
পুনরায় ব্যর্থতায় প্রশাসন হরিয়ানা থেকে পাইলিং মেশিন আনার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাত ১১:০০-এ পাইলিং মেশিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
২৫ ডিসেম্বর:
সকাল ৮:০০ থেকে পাইলিং মেশিন দিয়ে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়।
দুপুর ১:০০ পর্যন্ত ৪০ ফুট পর্যন্ত টানেল খোঁড়া হয়।
সন্ধ্যায় পাঁচটি পাইলিং মেশিন জুড়ে ৪ ফুট পুরু বিট তৈরি করা হয়।
বিকেল ৫:৩০ থেকে উদ্ধার অভিযান আবার শুরু হয়।
রাত ৬:০০-এ আরও একটি ২০০ ফুট ক্ষমতাসম্পন্ন পাইলিং মেশিন আনা হয়।
রাত ৯:০০-এ চেতনার মা ঘোলি দেবীর স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।
রাত ১১:০০-এ কালেক্টর কল্পনা আগরওয়াল ঘটনাস্থলে পৌঁছন।
২৬ ডিসেম্বর:
সকাল ১০:০০-এ পাথরের বাধার কারণে পাইলিং মেশিন থেমে যায়।
ছ'ঘণ্টার চেষ্টার পর পাথর কেটে ফেলা হয়।
সন্ধ্যা ৬:০০-এ পাইলিং মেশিন সরিয়ে লোহার পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়।
২৭ ডিসেম্বর:
দুপুর ১২:০০ পর্যন্ত ১৭০ ফুট গভীর গর্তে লোহার পাইপ বসানো সম্পন্ন হয়।
দুপুর ১২:৪০-এ ১০০ টনের একটি মেশিন আনা হয় পাইপের ভার বহনের জন্য।
বৃষ্টির কারণে দুপুর ১:০০-এ পাইপ ওয়েল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ হয়।
বিকেল ৫:০০-এ পুনরায় কাজ শুরু হয় এবং রাত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে।
২৮ ডিসেম্বর:
এনডিআরএফ-এর ৬ সদস্যের দল গঠন করা হয়।
দুই সদস্যের প্রতিটি দল ১৭০ ফুট গভীর গর্তে নেমে টানেল খোঁড়ার কাজ শুরু করে।
চার ফুট গভীর টানেল খোঁড়া হয়।
২৯ ডিসেম্বর:
টানেল খোঁড়ার কাজ চলতে থাকে।
পাথর ভাঙার জন্য একটি কম্প্রেসর মেশিন আনা হয়।
পাথর কাটার পদ্ধতি বোঝার জন্য খনির বিশেষজ্ঞ ডাকা হয়।
৩০ ডিসেম্বর:
প্রশাসন এবং এনডিআরএফ দাবি করে যে চেতনাকে এই দিন উদ্ধার করা হবে।
পাথর এবং অন্যান্য সমস্যার কারণে আবারও বিলম্ব হয়।
টানেল খোঁড়ার সময় সেনারা শ্বাসকষ্টে ভোগে।
৩১ ডিসেম্বর:
উদ্ধার কাজ চলে সারাদিন ধরে।
চেতনার অবস্থান নির্দিষ্ট করা গেলেও, তার কাছে পৌঁছনো যায়নি।
চেতনাকে হুকে ঝুলতে দেখা গেছে, কিন্তু সে নড়ছিল না।
সব মিলিয়ে, আজ ১০ দিন ধরে চলা উদ্ধারের চেষ্টায় আজ প্রথম স্পষ্ট হয়েছে আশার আলো। প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীদের নিরলস পরিশ্রম হয়তো পূর্ণতা পেতে চলেছে এবার। অন্যদিকে চেতনার পরিবার যে ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছে, তারও অবসান হতে চলেছে। গোটা দেশ প্রার্থনা করছে, সুখবর পাওয়ার। বছরের প্রথম দিনে কি অক্ষত ও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যাবে চেতনাকে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
১ জানুয়ারি:
সকালে চেতনার কাছে পৌঁছতে সক্ষম হন উদ্ধারকারীরা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জানা যায়, চেতনা ১০ দিনের মাথায় কুয়ো থেকে বেরোবে।
বিকেলে চেতনাকে বের করা হয় কুয়োর বাইরে।
নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। তারপরই মৃত্যু হয়।