শেষ আপডেট: 27th June 2024 08:54
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সদ্য চন্দ্র অভিযান সফল হয়েছে চিনের। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অদেখা অঞ্চল থেকে মাটি ও পাথর নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে চ্যাঙ্গি–৬ মহাকাশযান। তার পরে দু'দিন কাটতে না কাটতেই চন্দ্রযান ৪ মিশন নিয়ে বড় আপডেট দিয়ে দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। জানাল, দক্ষিণ মেরুর কাছে চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের পরে, এবার চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং ফিরিয়ে আনার জন্য যাবে চন্দ্রযান ৪। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্বে। এই বছরের শেষের দিকেই একটি স্পেস ডকিং (স্প্যাডেক্স) পরীক্ষা হতে পারে।
জানা গেছে, চন্দ্রযান-৪ দু’টি ধাপে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই উৎক্ষেপণে দু'টি মিনি স্যাটেলাইট পৌঁছবে মহাকাশে, যাদের দু'টি ভিন্ন কক্ষপথে ইনজেক্ট করা হবে। প্রথম ক্ষেত্রে কাজে লাগবে এলভিএম-৩ এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে পিএসএলভি। চন্দ্রযান-৪-এ পাঁচটি আলাদা আলাদা মহাকাশযান থাকবে বলে জানা গিয়েছে। সেগুলির প্রত্যেকটির আলাদা কাজ থাকবে। আলাদা ভাবেই সেগুলি উৎক্ষেপণ করা হবে।
চন্দ্রযান ৪ নির্দিষ্ট কিছু কাজ নিয়ে যাবে মহাকাশে। যেমন, চাঁদের মাটিতে নিরাপদ, সুরক্ষিত, ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ করে চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ করা এবং তা সংরক্ষণ করা, এর পরে একটি মডিউল থেকে অন্য মডিউলে চাঁদের মাটির নমুনা পাঠানো, চাঁদ থেকে নমুনা সঙ্গে নিয়ে আবার পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করা-- ইত্যাদি।
বুধবার নয়াদিল্লিতে ইন্ডিয়া স্পেস কংগ্রেসের তরফে ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, 'আমরা চন্দ্রযান-৪ এর কনফিগারেশন এবং কীভাবে চাঁদ থেকে নমুনা পৃথিবীতে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছি। সব দিক পর্যালোচনা করে তবেই এই মিশন অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা একাধিক লঞ্চিংয়ের কথা ভেবেছি এবং সেই মতোই প্রস্তাব রেখেছি, কারণ আমাদের হাতে যে সব রকেট আছে, তা একটি মিশনে যেতে এবং ফিরে আসতে যথেষ্ট সক্ষম নয়। তাই আমাদের স্পেস ডকিং বা স্প্যাডেক্স করতে হবে।'
কী এই স্পেস ডকিং?
সহজ কথায়, দু'টি পথক মহাকাশযানের একে অপরকে খুঁজে পাওয়া এবং একই কক্ষপথে স্টেশন হওয়াকে বলা হয় স্পেস ডকিং। ১৯৬৬ সালে প্রথম, আমেরিকার জেমিনি প্রজেক্টে এই স্পেস ডকিং হয়েছিল। মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং এবং ডেভিড স্কট ছিলেন জেমিনি ৮ মহাকাশযানে। মানববিহীন এজেনা টার্গেট যানের সঙ্গে ডক করেছিল জেমিনি।
ইসরো জানিয়েছে, ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য এই ডকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। অন্তত যতদিন না ইসরো চাঁদে সফল অবতরণ করানোর জন্য মহাকাশচারীদের পাঠাতে পারছে, ততদিন পর্যন্ত এভাবেই একাধিক চন্দ্রযান সিরিজের মিশন চালিয়ে যেতে হতে পারে। জানা গেছে, এই বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই স্প্যাডেক্স চালু হতে পারে।
প্রসঙ্গত, মহাকাশে মানুষ পাঠানো দীর্ঘস্থায়ী স্বপ্ন পূরণ করতে গগনযানের দিকেও নজর রেখেছে ইসরো। গত অক্টোবরে এই অভিযানের প্রথম টেস্ট ভেহিকেলের উৎক্ষেপন (টিভি-ডি১) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই বছর গগনযান অভিযানের পরবর্তী তিনটি পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরো।
এস সোমনাথ বলেন, 'এই বছর আমাদের সামনে তিনটি কাজ আছে। একটি হল জি১ এলভিএম৩ বা গগনযানের প্রথম মনুষ্যবিহীন মিশন। দ্বিতীয়টি হল আরও একটি টেস্ট ভেহিকেলের উৎক্ষেপন (টিভি-ডি২) এবং সবশেষে প্রথম 'প্যাড অ্যাবর্ট টেস্ট'। আমরা এই তিনটি প্রজেক্ট নিয়েই একসঙ্গে কাজ করছি, সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটিই সম্পন্ন করা যাবে।'
তবে আপাতত ইসরো তথা গোটা দেশের মহাকাশবিজ্ঞানের কাছেই পাখির চোখ চন্দ্রযান ৪। এটি আগের চন্দ্র অভিযানগুলির চেয়ে অনেক জটিল এবং কঠিন হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এখনও পর্যন্ত তিনটি দেশ এই অভিযান করতে পারেছে। আমেরিকার অ্যাপোলো অভিযানে, সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা অভিযানে এবং চিনের চ্যাং অভিযান। এই চ্যাং অভিযানেরই ছ'নম্বর মহাকাশযান সদ্য সফল হয়ে ফিরেছে। এর পরে ইসরোর চন্দ্রযান-৪ অভিযান সফল হলে, ভারতও বড় সাফল্যের দাবিদার হবে।