শেষ আপডেট: 13th February 2024 09:40
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জরায়ুমুখের ক্যানসার ক্রমেই ভারতীয় মহিলাদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠছে। এ বছর বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সার্ভিক্যাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখের ক্যানসার নিয়ে সচেতন করেছিলেন। এমনকী মারণ রোগ ঠেকাতে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের খুব তাড়াতাড়ি টিকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছিলেন।
জরায়ুর একেবারে নীচের অংশকে বলে জরায়ুর মুখ বা সার্ভিক্স অব দ্য ইউটেরাস। এখানেই ক্যানসার হয়। এই ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি ভাইরাস) একে সার্ভিকাল ক্যানসার (Cervical Cancer) বলে। ভারতীয় মহিলাদের ১৬ শতাংশই জরায়ুর ক্যানসারে ভোগেন। স্তন ক্যানসারের পরে সবচেয়ে বেশি জরায়ুর ক্যানসারে ভোগেন ভারতের মা-বোনেরা। ১৫ বছরের পর থেকে ৩০ বছর অবধি মহিলাদের জরায়ু মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। ত্রিশের পরেও মহিলারা এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ নন। আর এই ক্যানসার আগাম বোঝা মুশকিল, ধরাও পড়ে দেরিতে। ফলে চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। ক্যানসার তার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
জরায়ুমুখের ক্যানসার ঠেকাতে দেশে কী কী ভ্যাকসিন আছে, নতুন কী আসতে চলেছে তা জেনে নেওয়া জরুরি। সার্ভিক্যাল ক্যানসার ঠেকাতে তিন রকম ভ্যাকসিন আছে দেশে। তবে প্রতিটাই খুব দামি। পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট সার্ভিক্যাল ক্যানসারের জন্য নতুন টিকা আনছে।
জরায়ুমুখের ক্যানসারের ভ্যাকসিন কী কী, কোন বয়স থেকে দেওয়া যায়?
আপাতত তিন রকম ভ্যাকসিন আছে দেশে—ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনের (GSK)তৈরি সার্ভারিক্স, মার্কিন ফার্মা কোম্পানি মার্কের গার্ডাসিল ৪, গার্ডাসিল ৯ বা গার্ডাসিল ন্যানো। পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বীধান ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির যৌথ উদ্যোগে সার্ভিক্যাল ক্যানসারের নতুন টিকা আসতে চলেছে দেশে যার নাম সার্ভাভ্যাক।
১) ব্রিটিশ ফার্মা জায়ান্ট গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনের তৈরি সার্ভারিক্স (Cervarix ) এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রামক এইচপিভি ৩৫ ও এইচপিভি ৪৫ স্ট্রেনকে নষ্ট করতে পারে। এই ভাইরাসের শতাধিক প্রজাতি আছে যারা খুবই সংক্রামক। সার্ভারিক্স টিকার ক্ষমতা বাড়াতে এর সঙ্গে অ্যাডজুভেন্ট যোগ করেছেন বিজ্ঞানীরা যাতে এইচপিভির সংক্রামক প্রজাতিকে আটকানো যায়। ২০০৮ সাল থেকে এই ভ্যাকসিন আছে দেশে। তবে টিকাকরণ নিয়ে সচেতনতার প্রচার ছিল না তেমনভাবে। কাজেই ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও এর নাম বা ডোজ, দাম অজানা বেশিরভাগেরই।
১০ বছর থেকে ৪৫ বছর অবধি মহিলাদের জন্য প্রেসক্রাইব করা হয় সার্ভারিক্স ভ্যাকসিন। এর দুটি ডোজ ৬ মাস বা ১ বছর অন্তর নেওয়া যায়। প্রতি ডোজের দাম ২২০০ থেকে ২৬০০ টাকা।
২) মার্কিন কোম্পানি মার্কের তৈরি গার্ডাসিল ৪ (Gardasil 4 ) ভ্যাকসিন সেই ২০০৯ থেকেই অনুমোদন পেয়েছে দেশে। এইচপিভি১৬ ও এইচপিভি১৮ প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়তে পারে এই ভ্যাকসিন। ৯ থেকে ৪৫ বছর অবধি মহিলাদের দেওয়া যেতে পারে এই টিকা। ৬ মাস অন্তর দুটি ডোজ নিতে হয়। অথবা প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ, ৬ মাস পরে বুস্টার ডোজ নেওয়া যেতে পারে। ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজের দাম ৩৫০০-৪০০০ টাকা।
৩) মার্কিন কোম্পানিরই তৈরি জরায়ুমুখের ক্যানসারের অন্য একটি ভ্যাকসিন হল গার্ডাসিল ৯ বা গার্ডাসিল ন্যানো (Gardasil 9 or Gardasil Nano)। এইচপিভির টাইপ ৬, ১১, ১৬, ১৮, ৩১, ৩৩, ৪৫, ৫২ ও ৫৮ প্রজাতিকে ঠেকাতে পারে এই ভ্যাকসিন। সার্ভিক্যাল ক্যানসার ছাড়াও অরোফ্যারিঙ্গাল, ভাল্ভার, ভ্যাজাইনাল, মুখ ও গলার ক্যানসারের জন্যও এই টিকা দেওয়া হয়।
গার্ডাসিল ৯ ভ্যাকসিনও ৯ থেকে ৪৫ বছর অবধি মহিলাদের দেওয়া যায়। এই টিকারও তিনটি ডোজ আছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ মাস ও ৬ মাস পরে ডোজ নিতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিন খুব দামি, কিন্তু বেশ কার্যকরী। ৯ তেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই টিকা নিলে জরায়ুমুখ বা ভ্যাজাইনাল ক্যানসার, কোনওরকম সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। এই টিকার একটি ডোজের দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।
৪) সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে দেশে নতুন ভ্যাকসিন আসছে যার নাম সার্ভাভ্যাক। এইচপিভি টাইপ ৬, ১১, ১৬ ও ১৮ প্রজাতিকে ঠেকাতে পারবে এই টিকা। ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সি কিশোরীদের জন্য এই টিকার ২টি ডোজ আছে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। আর ১৫ থেকে ২৬ বছর অবধি এই টিকার তিনটি ডোজ আছে। ১৫ বছরের পর ভ্যাকসিন নিতে হলে তিনটি ডোজই নিতে হবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ মাস পরে দ্বিতীয় এবং ৬ মাস পরে বুস্টার ডোজ নিতে হবে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে ২ হাজার টাকা।