জনগণনা নিয়ে কি অতিরিক্ত সাবধানী মোদী সরকার?
শেষ আপডেট: 25th July 2024 14:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনার রেওয়াজ আছে দেশে। কিন্তু ২০১১ সালের পরে প্রায় চোদ্দ বছর পেরিয়ে গেলেও, এখনও জনগণনার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারেনি ভারত। কথা ছিল, ২০২৪ লোকসভা ভোটের পরে এই ব্যাপারে এগনো যাবে। কিন্তু এবারের বাজেটে অন্তত যা দেখা যাচ্ছে, তাতে এই বছরেও জনগণনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে জনগণনার জন্য ১২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা আগেরবারের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এর তিনগুণের বেশি অর্থ বরাদ্দ ছিল। সেই বছর কোভিডের জন্য শেষ অবধি জনগণনার কাজে আর হাত দিতে পারেনি কেন্দ্র। বস্তুত, কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতে টাকা বরাদ্দ হলেও ক্রমশই কমে এসেছে খরচ।
অর্থবিষয়ক সচিব অজয় শেঠ যেমন বুধবার বলেছেন, 'নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণনা অত্যন্ত জরুরি। যখনই এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা জনসমক্ষেই নেওয়া হবে এবং তার জন্য দরকারি অর্থও বরাদ্দ করা হবে। আপনাদের ব্যাপারটা বুঝতে হবে। আমরা খরচ অনুমান করে তো বাজেটে বরাদ্দ করি না। যে ডিপার্টমেন্ট কোনও কাজ করতে চায়, তারা সেটা জানায় এবং সেইমত বরাদ্দ করা হয়।'
কিন্তু এতে করে ব্যাপারটা চাপা দেওয়া যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি আদৌ জনগণনায় আগ্রহী? ২০২৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ অবধি বাজেটে জনগণনার জন্য যত বরাদ্দ করা হত, খরচ আদতে হত তার চেয়েও বেশি। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে বরাদ্দ বাড়লেও খরচ ক্রমশ কমে এসেছে। বাজেটে বা অর্থসমীক্ষা কোনওটাতেই জনগণনার নামগন্ধও করেনি মোদী সরকার। যার ফলে এখনও গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণের কাজ ২০১১ জনগণনার ভিত্তিতেই হয়ে চলেছে। এদিকে পরিসংখ্যান নিয়ে নির্মলা সীতারামণ একাধিক সংস্কারের রাস্তা নিয়েছেন। তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণনার কথা তোলা হয়নি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এর পিছনে নিশ্চিতভাবেই রাজনীতি রয়েছে।
ভারতে জনগণনার শুরু ১৮৮১ সালে। তারপর থেকে নিয়ম করে প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়েছে। অন্তত ১৫০ বছরের ইতিহাসে কখনও জনগণনা বন্ধ থাকেনি। এই প্রথম তা প্রায় অর্ধদশক পিছিয়ে গেল। অনেকে আঙুল তুলছেন, সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিতর্কেই জনগণনা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক হতে চাইছে মোদী সরকার। জনগণনার আগে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের কাজ সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ নিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। এনপিআরের কাজ থমকে যায়।
অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ একটি সর্বভারতীয় ওয়েব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, '২০১১ জনগণনা অনুসারে, ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি। যার মধ্যে ৮০ কোটি মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় খাদ্য পায়। কিন্তু এখন যা মনে হচ্ছে, জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। তার মানে প্রায় দশ কোটি গরীব মানুষ কিন্তু এই আইনের আওতায় খাবার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।'