শেষ আপডেট: 25th October 2024 16:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হাতে আর মাত্র ৬টি কাজের দিন। তারপরেই দেশের ৫০-তম প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেবেন ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়। তাঁর এই অবসরের প্রাক মুহূর্তে বহু উল্লেখযোগ্য মামলার রায় ও মামলার স্মৃতি জড়িয়ে থাকবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অলিন্দে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের আসনে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে বসবেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। বর্তমান প্রধান বিচারপতি অবসর নেবেন আগামী ১০ নভেম্বর, রবিবার। অর্থাৎ শীর্ষ আদালতে তাঁর শেষ কাজের দিন হচ্ছে ৮ নভেম্বর, শুক্রবার।
ছেলেবেলার কথা
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের জন্ম ১৯৫৯ সালের ১১ নভেম্বর। ২০১৬ সালের মে মাস থেকে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে ছিলেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আইনি চৌকাঠেই জন্ম চন্দ্রচূড়ের। তাঁর বাবা ওয়াইভি চন্দ্রচূড় ছিলেন দেশের সবথেকে বেশি সময়ের কার্যকালে থাকা প্রধান বিচারপতি। মা প্রভা ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ধনঞ্জয় পড়াশোনা করেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার
দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিচারের অংশীদার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। যেমন নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প, রাম জন্মভূমি মামলা, সাবরিমালা মামলা, সমলিঙ্গ বিবাহ, জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত মামলা ইত্যাদি।
রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলা
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়কে দেশ মনে রাখবে রামমন্দির রায়ের সহ-লেখক এবং সহ বিচারপতি হিসাবে। যদিও এই রায়ে তিনি নিজে স্বাক্ষর করেননি।
নির্বাচনী বন্ড মামলা
নির্বাচনী বন্ডকে অবৈধ-অসাংবিধানিক রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও অর্থ উদ্ধার কিংবা কাউকে শাস্তিদান না করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হয়েছিল। এছাড়াও চণ্ডীগড় নির্বাচনের নির্বাচনী অফিসারকে অপরাধী বললেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের রায় দেননি। এইসব রায় নিয়ে একসময় আঞ্চলিক ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে বিশেষজ্ঞরা ও রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন মতপোষণ করেছিল।
মহারাষ্ট্র সরকার গঠনের মামলা
আগামী নভেম্বরেই মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট। মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা, শারদ পাওয়ারের এনসিপি এবং কংগ্রেসের মহা বিকাশ আঘাড়ি জোট সরকার ভাঙিয়ে যখন একনাথ শিন্ডের শিবসেনা, বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ এবং পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ারের এনসিপি সরকার গঠন করেছিল, তখন সেই সরকারকে অবৈধ বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। এমনকী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকাকেও অবৈধ বলা হয়েছিল। কিন্তু, সেই সরকারকেই কাজ চালানোর ক্ষেত্রে কোনও বাধা দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট।
হিন্ডেনবার্গ অভিযোগ সংক্রান্ত মামলা
হিন্ডেনবার্গ অভিযোগ নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি একযোগে বিরোধিতায় নেমেছিল। সেবারেও বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তারপরেও আদানি এন্টারপ্রাইজেসকে মার্কিন আদালতে হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ, হিন্ডেনবার্গকে এই তদন্তে পক্ষ করা এবং তারপরেও বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টকে মান্যতা দিয়ে আদানি এন্টারপ্রাইজেসকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছিল।
৩৭০ ধারা অবলুপ্তি
৩৭০ ধারা অবলুপ্তির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রথমে সক্রিয় থাকলেও পরে সুপ্রিম কোর্ট এর বৈধতাকে মান্যতা দেয়। যখন সেখানে রাষ্ট্রপতির শাসন চলছে। ফলে এক বিস্ময়কর পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রপতিই ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনাক্রমে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
এছাড়াও তাঁর আমলে উমর খালিদ, ভীমা কোরেগাঁও মামলার জন্যও প্রধান বিচারপতির কার্যকালকে স্মরণে রাখবে দেশবাসী। বিনোদকুমার চাঁদ সেকেন্ড (ওনার এজ সলিউশনস)নামে এক ব্যক্তি এক্সবার্তায় লিখেছেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের কাজ সফল না ব্যর্থ হয়েছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে একথাও ঠিক যে, সবশেষে তিনি ন্যায়ের মূর্তি হিসেবে নারী প্রতিমার যে আবরণ উন্মোচন করেছিলেন, তার চোখ বাঁধা ছিল না, খোলা ছিল।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নিজের কথা
রামমন্দির নিয়ে সম্প্রতি একটি ভাষণে চন্দ্রচূড় নিজেই বলেছেন যে, তিনি নাকি তখন রোজ ভগবানকে ডাকতেন। এবং বলতেন সমস্যা মিটিয়ে দাও। তিনি বিশ্বাস করেন যে, তাঁর প্রার্থনা এবং ভগবানের সঙ্গে সরাসরি যোগের ফলে তিনিই পথ প্রদর্শক। সবশেষে লেখক বিশেষ নির্দেশিকায় লিখেছেন, প্রধান বিচারপতিকে দেশ মনে রাখবে আরও একটি কারণে। আর তা হল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে তাঁর পুজো করা। যেখানে ফ্রেমবন্দি করার জন্য চিত্রগ্রাহকও মজুত ছিলেন।
সর্বশেষে, বৈবাহিক ধর্ষণের মামলাটিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্রকে গঠিত বেঞ্চ চূড়ান্ত রায়দান পিছিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ এই মামলার রায়দান হতে চলেছে নতুন বেঞ্চে। কারণ চার সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ায় তার আগেই অবসর নিতে চলেছেন প্রধান বিচারপতি।
অবসর নিয়ে কী করবেন চন্দ্রচূড়?
২০২২ সালের ৯ নভেম্বর থেকে টানা গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বভার থেকে অব্যাহতি পেয়ে প্রথমেই কয়েকদিন বিশ্রাম নেবেন তিনি। ভুটানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কয়েকদিন আগে বলেন, দুবছর পর নভেম্বরে অবসর নিয়েই আমি আগে কয়েকদিন পূর্ণ বিশ্রাম নেব। এই পরিস্থিতি আমি এখন ভাবছি, আমি কী সব কাজ করতে পেরেছি, যা করা আমার লক্ষ্য ছিল! ইতিহাস কোন দৃষ্টিতে আমার কাজের বিচার করবে? আমি কি ব্যতিক্রমী কিছু করতে পেরেছি? ভবিষ্যতের বিচারপতি এবং আইনজীবীদের জন্য আমি মনে রাখার মতো কী দৃষ্টান্ত গড়ে যেতে পারব? তিনি নিজেই বলেছেন, এসব প্রশ্নের অনেক উত্তর আমার নিয়ন্ত্রণের এবং সন্তুষ্টির বাইরে।তবে এটুকু তিনি হলফ করে বলেন, একনিষ্ঠতার সঙ্গে দেশের কাজ করে গিয়েছি, এটাই মূল সত্য।