শেষ আপডেট: 23rd July 2024 10:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জিএসটি চালু হওয়ার পর জিনিসপত্রের দরদামের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক অনেকটাই কমে গিয়েছে। কেন্দ্র কিংবা রাজ্য, উভয় সরকারের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। নিত্যপণ্য থেকে যে কোনও সামগ্রীর উপর কর ধার্য করে থাকে জিএসটি কাউন্সিল। বছরে একাধিকবার সেই কাউন্সিলের বৈঠক হয়ে থাকে।
ফলে আম-আদমির খরচের হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাজেটের সম্পর্ক এখন অনেকটাই হল আয়কর। যদিও আয়কর দাতার সংখ্যা জনসংখ্যার সামান্য, তবু মধ্যবিত্তের অর্থনীতির সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বরাবর গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। নানা কারণে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মঙ্গলবারের বাজেটে কৌতূহলের শীর্ষে হয়েছে আয়কর সংক্রান্ত প্রত্যাশা।
নরেন্দ্র মোদীর ১০ বছরের জমানায় আয়কর সংক্রান্ত মৌলিক পরিবর্তন এবং সেই সুবাদে নতুন সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে মাত্র দু’বার। দু’বারই আয়করের স্ল্যাবে সামান্য অদল বদল ঘটানো হয়েছে। এছাড়া আয়কর প্রদানে দুটি বিকল্প থেকে সুবিধাজনক একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আয়করদাতাদের দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সব সুবিধা এবং বিকল্প একদিনে তামাদি হয়ে গিয়েছে।
আয়কর বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে মধ্যবিত্তের একাংশ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার বড় কারণ অর্থনৈতিক। জিনিসপত্রের দাম ক্রমে ঊর্ধ্বগামী। এই অবস্থায় বিজেপির রাজনৈতিক শক্তির মূল ভিত্তি মধ্য ও উচ্চবিত্ত, বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি সংস্কার কর্মচারী, মাঝারি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে কাছে টানতে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক, দুই ক্ষেত্রেই আয়করে ছাড় জরুরি।
সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাড়তি কৌতূহলের কারণ, তাদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের আশু সুযোগ নেই। মহার্ঘভাতা ছাড়া বেতন বৃদ্ধির অতিরিক্ত সুযোগ বন্ধ। বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। আর্থির সংকটের কারণে বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও বেতন একপ্রকার ‘ফ্রিজ’ বা থমকে আছে বহু বছর। এই অবস্থায় আয় বৃদ্ধির একমাত্র সুযোগ আয়করে ছাড়। তবেই চলতি আয় থেকেও মানুষের বাড়তি ব্যয় করার মতো অর্থের সংস্থান হতে পারে।
আয়কর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ক্ষেত্রে কিছু আশু পরিবর্তন জরুরি। যেমন, মধ্য ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের প্রত্যাশা হল, ৩০ শতাংশ আয়কর আদায়ের সীমা বৃদ্ধি করে বছরে ২০ লাখ বা তার বেশি আয়ের আয়করদাতাতের উপর চাপানো হোক। চলতি ব্যবস্থায় ১৫ লাখ বা তার বেশি আয়ের মানুষদের থেকে ৩০ শতাংশ হারে কর আদায় করা হয়। আয়ের সীমা ২০ লাখ হয়ে গেলে বহু মানুষের আয়কর বাবদ বোঝা কমবে। তাদের হাতে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকবে যা আবার কেনাকাটার সূত্রে জিএসটি মারফত সরকারের ঘরেই রাজস্ব হিসাবে ফেরত যাবে।
দ্বিতীয় প্রত্যাশা হল, আয়কর প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম আয়ের সীমার তিন লাখ থেকে বৃদ্ধি করে পাঁচ লাখ করা হোক। এখন বাৎসরিক আয় তিন লাখ বা তার বেশি হলেই আয়কর দিতে হয়। সেই সীমা পাঁচ লাখ করা হলে কয়েক লাখ মানুষকে আয়কর গুণতে হবে না। তাতেও পরোক্ষে আয় বৃদ্ধি হবে সংশ্লিষ্ট আয়করদাতাদের। এখন সাত লাখ টাকা বা তার বেশি আয়ের মানুষদের আয়কর রিবেট দেয় সরকার। এই সীমা বৃদ্ধি করে আট লাখ করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশ্যা আয়করদাতাদের। আয়করে বেসিক ছাড়ের সীমা ৫০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে এক লাখ করার প্রত্যাশাও বহু দিনের। এটা হলে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়করদাতাদের অনেকটাই সুবিধা হবে।
আয়কর আইনের ৮০-সি, ৮০-ডি ধারায় জীবন বিমা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত সুদ থেকে আয়ের উপর ছাড়ের ব্যবস্থা আছে। প্রবীণ নাগরিকদের অনেকেই এই জাতীয় আয়ের উপর নির্ভরশীল। বহুদিন ধরেই সঞ্চয় নির্ভর মানুষ আয় বাড়াতে এই খাতে আয়করে আরও ছাড় দাবি করে আসছেন। এখন দেখার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তাঁর সপ্তম বাজেটে প্রত্যাশা পূরণ করেন কি না।