নির্মলা সীতারামন। নিজস্ব ছবি
শেষ আপডেট: 2nd February 2025 11:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট ঘোষণার পর মধ্যবিত্তদের অনেকের মধ্যে একটা ধন্ধ তৈরি হয়েছে। তা হল, বছরে ১২ লক্ষ টাকা আয় পর্যন্ত কি সকলেই ছাড় তথা রিবেট (Income Tax Rebate) পাবেন?
শুরুতে এক কথায় না মোটেও তা নয়। বরং এও হতে পারে যে কারও আয় যদি ১২ লক্ষ টাকার সামান্য বেশি হয়, ধরা যাক ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তাঁর টেক হোম কম হবে, যাঁর ১২ লক্ষ টাকা আয় তাঁর তুলনায়।
বিষয়টি সহজ করে ব্যাখ্যা করা যাক। (New Income Tax Slabs Explained)
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০২৫ সালের বাজেটে নতুন আয়কর কাঠামোয় (New Tax Regime) আয়কর রেয়াতের সীমা বাড়িয়ে ৭ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা করেছেন। এর ফলে, যাঁদের বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকার মধ্যে, তাঁদের কোনো আয়কর দিতে হবে না।
প্রশ্ন হল, তাহলে কি ১৫ লাখ টাকা আয়ের ব্যক্তিকে মাত্র ৩ লাখ টাকার ওপর কর দিতে হবে?
না, এই রিবেট কেবলমাত্র ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ, যদি কারও আয় ১২ লাখ টাকার এক টাকা বেশি হয়, তবে তাঁকে সম্পূর্ণ আয়ের উপর নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী কর দিতে হবে। এখন, ১২ লাখ টাকা আয়ের ব্যক্তির করদায় ছিল ৮০,০০০ টাকা।
৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কর এখন শূন্য। ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করের জন্য ৫ শতাংশ কর দিতে হয়। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা কর দিতে হয়। ৭ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয়েরর জন্য করের হার ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কারও আয় ১০ লক্ষ টাকা হলে কর দিতে হয় ২০ হাজার + ৩০ হাজার টাকা অর্থাৎ ৫০ হাজার টাকা। ১০ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকা আয়ের উপর করের হার ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ যাঁদের আয় ১২ লক্ষ টাকা তাঁদের কর দিতে হয় আগের ৫০ হাজার টাকা + ৩০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ৮০ হাজার টাকা।
কিন্তু এবার বাজেটে যে নতুন কর কাঠামো প্রস্তাব করেছেন নির্মলা সীতারামন তাতে, ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনও কর দিতে হবে না। ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কর দিতে হবে ৫ শতাংশ হারে। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা। তার পর ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর কর দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে। অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা। সুতরাং ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাঁদের আয়, নতুন কর কাঠামোয় তাঁদের করের বোঝা আগের তুলনায় সরাসরি ২০ হাজার টাকা কমে গেল। বাকি ৬০ হাজার টাকা সরকার কর ছাড় তথা রিবেট (Income Tax Rebate) দেবে (আয়কর ধারা ৮৭ এ অনুযায়ী)। অর্থাৎ ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর দায় শূন্য।
কিন্তু কারও করযোগ্য আয় যদি ১২.১ লাখ টাকা হয়, তাহলে তাঁর করদায় হবে ৬১,৫০০ টাকা। কারণ—
৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকার অংশের ওপর ৫% কর অর্থাৎ ২০ হাজার টাকা।
৮ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার অংশের ওপর ১০% কর অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা।
১২ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকার অংশের ওপর ১৫% কর অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকা।
এর ফলে, ১৫ লাখ টাকা আয়ের একজন ব্যক্তিকে ১,০৫,০০০ টাকা কর দিতে হবে।
১৫ লাখ টাকার বেশি আয়ের ব্যক্তিরা কী সুবিধা পাবেন?
যাঁদের আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি, তাঁদের জন্যও বড় পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। অর্থমন্ত্রী ১৫ লাখ থেকে ২৪ লাখ টাকার আয়ের ক্ষেত্রে করের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছেন। আগে ১৫ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর সরাসরি ৩০% কর বসত। নতুন বাজেটে—
১২-১৬ লাখ টাকার আয়ের ওপর করের হার ১৫%
১৬-২০ লাখ টাকার ওপর ২০%
২০-২৪ লাখ টাকার ওপর ২৫%
২৪ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর আগের মতোই ৩০% কর
এই পরিবর্তনের ফলে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরাও করদায় কমানোর সুযোগ পাবেন।
শুরুতে যে কথা জানানো হয়েছিল, তাতে আর একবার ফিরে যাওয়া যাক। তা হল কারও আয় যদি ১২ লক্ষ টাকার সামান্য বেশি হয়, ধরা যাক ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তাঁর টেক হোম কম হবে, যাঁর ১২ লক্ষ টাকা আয় তাঁর তুলনায়।
তার কারণ, যাঁর আয় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তাঁর কর দায় হবে প্রথম ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শূন্য। পরের ৪ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ হারে তথা ২০ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তার পর ৮ থেকে ১২ লক্ষ টাকা বেতনের জন্য দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে কর তথা ৪০ হাজার টাকা। আর তার পরের ৫০ হাজার টাকার উপর ১৫ হারে শতাংশ কর দিতে হবে। অর্থাৎ ৭৫০০ টাকা। মানে তাঁকে মোট ৬৭৫০০ টাকা কর দিতে হবে। এবং তাঁর টেক হোম হবে ১১ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। সুতরাং যাঁর আয় ১২ লক্ষ টাকা তাঁর তুলনায় যাঁর আয় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তাঁর টেক হোম কম হবে।