পিন্টু মাল্লা।
শেষ আপডেট: 7th March 2025 08:34
পিন্টু জানান, মহাকুম্ভ শুরুর কয়েক মাস আগেই তিনি অনুমান করেছিলেন, যে এবার কোটি কোটি মানুষ প্রয়াগরাজে আসবেন। তিনি বুঝতে পারেন, যদি তাঁর পরিবার আরও নৌকা তৈরি করতে পারে, তাহলে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরা অনেকটাই লাভ করতে পারবেন।
কিন্তু এত বড় বিনিয়োগের জন্য টাকা কোথায় পাবেন? পিন্টু মাকে বোঝান, 'মা, আমায় বিশ্বাস করো। কোটি কোটি তীর্থযাত্রী আসবে, আমরা তাঁদের সেবা করব। তাতে আমাদের টাকা তুলে আনতে পারব, জীবন বদলে যাবে।' পিন্টুর মা অবশ্য প্রথমে মোটেও রাজি হননি গয়না বন্ধক দিতে। কান্নাকাটি করেন তিনি। তবে শেষমেশ ছেলের উপর ভরসা রাখেন এবং নিজের সোনার গয়না ছেলেকে তুলে দেন। সেই গয়না বন্ধক দেওয়া টাকায় পিন্টু ও তাঁর পরিবার ১৩০টি নতুন নৌকা তৈরি করে।
১৩ জানুয়ারি মহাকুম্ভ শুরু হতেই তীর্থযাত্রীদের ঢল নামে প্রয়াগরাজে। গঙ্গা, যমুনা ও রহস্যময় সরস্বতীর সঙ্গমে পুণ্যস্নানের জন্য প্রচুর মানুষ নৌকায় ওঠেন। পিন্টু বলেন, 'আমরা তীর্থযাত্রীদের সঙ্গমে নিয়ে যেতাম। কেউ সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতেন, কেউ অতিরিক্ত টাকা দিতেন, আবার অনেকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বেশি টাকাও তুলে দিতেন। কুম্ভে মানুষ শুধু নেয় না, দেয়ও।'
জানা গেছে, প্রয়াগের ঘাট থেকে সঙ্গমে যাওয়ার সরকারি ভাড়া ছিল ৪৮৩ টাকা, কিন্তু অনেকেই ভক্তি ও উদারতার কারণে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন পিন্টুদের। ফলে, প্রতিদিন একটি নৌকা গড় ৫০ হাজার টাকারও বেশি আয় করত। আর তাতেই ৪৫ দিনে ৩০ কোটি টাকা আয় করে পিন্টুর পরিবার।
মহাকুম্ভ শেষ হওয়ার পরেই পিন্টুর পরিবার সমস্ত ঋণ চুকিয়ে দিয়েছে, মায়ের বন্ধক রাখা গয়নাও ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তাঁরা এখানেই থামতে রাজি নন। পিন্টুর কথায়, 'এখন আমরা আরও উন্নত নৌকা বানাতে চাই, মোটরবোট কিনতে চাই, তীর্থযাত্রীদের জন্য আরও ভাল পরিষেবা দিতে চাই।'
যোগী আদিত্যনাথ যখন বিধানসভায় পিন্টুর নাম নেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পরিবারের বুক ভরে ওঠে গর্বে। পিন্টু বলেন, 'আমরা কখনও ভাবিনি, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের নাম বলবেন অত বড় জায়গায়। এটি শুধু আমাদের পরিবারের জন্য নয়, প্রয়াগরাজের সব মাঝিদের জন্যই গর্বের মুহূর্ত।'
তবে পরিবারে ঢালাও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছল্য এলেও পিন্টু তার পেশা ছাড়তে চান না। তিনি বলেন, 'এই নদী আমাদের সব দিয়েছে। আমরা এখানেই জন্মেছি, এখানেই থাকব, এখানেই মরব। আমাদের কল্পনার চেয়েও বেশি আশীর্বাদ দিয়েছেন মা গঙ্গা। তাঁর সেবা আমি সবসময়ই করব।'