শেষ আপডেট: 16th October 2024 11:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দলের নতুন পদাধিকারীদের বেছে নিতে সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করল বিজেপি। ১ ডিসেম্বর থেকে গোটা দেশে দলের কমিটি নির্বাচনের ভোট হবে। তা শুরু করা হবে দলের মণ্ডল কমিটির ভোট দিয়ে। সব স্তরের কমিটির নির্বাচন শেষ ঠিক হবে জাতীয় সভাপতি এবং রাজ্যগুলির সভাপতি পদে কারা দায়িত্ব পাবেন। জেপি নাড্ডা ২০১৯ থেকে বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বাংলায় সুকান্ত মজুমদার রাজ্য সভাপতি হন ২০২১-এ। নাড্ডার মতো তাঁরও মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন হল নাড্ডা, সুকান্তদের স্থলাভিষিক্ত হবেন কে? জাতীয় সভাপতি পদে মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিশের নাম আলোচনায় আছে বহুদিন। গত মাসে তিনি একা দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সেই বৈঠককে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও অনেকেই মনে করছেন মোদী মহারাষ্ট্রের এই নেতাকে সভাপতি পদে চাইছেন। ২০১৪-তে মোদীর ইচ্ছাতেই দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল অনেক প্রথমসারির নেতাকে বাদ দিয়ে।
তবে ব্রাহ্মণ দেবেন্দ্রকে নিয়ে দলে আপত্তি উঠতে পারে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে দল যখন দলিত, ওবিসি-দের আরও বেশি করে কাছে টানতে চাইছে। তাছাড়া সভাপতি নির্বাচনের আগে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট আছে। সেই ভোটে বিজেপির ফলাফলের উপরও নির্ভর করছে দেবেন্দ্রর ভাগ্য। মহারাষ্ট্রে তিনিই বিজেপির মুখ।
আলোচনায় আছে কেন্দ্রের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানেরও। সদ্যই হরিয়ানার ভোটে হারা ম্যাচে জয় হাসিল করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে সেখানে ভোটের দায়িত্বে ছিলেন ধর্মেন্দ্র। চর্চায় আছে প্রাক্তন মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরেরও। তাঁকে এবার মন্ত্রী না করায় সভাপতি হিসাবে নাম বিবেচনায় আছে বলে ধরে নিয়েছে দলের একাংশ।
বাংলায় সুকান্ত মজুমদারের স্থলাভিষিক্ত কে হবেন এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আলোচনায় এগিয়ে প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মাস চার হল তিনি দল বিরোধী শুধু নয়, বিরোধীদের সম্পর্কেও আক্রমণাত্মক কথাবার্তা আগের মতো বলছেন না। মনে করা হচ্ছে দলের তরফেই তাঁকে সভাপতি নির্বাচন পর্যন্ত বাক সংযম রক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও তিনি সখ্য গড়ে তুলেছেন। শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুর, বিশেষ করে বিরোধী দলনেতার কেন্দ্র কাঁথিতে দু’জনে মিলে যৌথ সভাও করেছেন।
২০২১-এ রাজ্য সভাপতির পদ যাওয়ার পর সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি করা হয়েছিল দিলীপকে। পরে সেই পদ এবং জাতীয় কর্মসমিতি থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর তিনি সব অর্থেই প্রাক্তন। যদিও দলের কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ চাইছে তাঁকেই ফের রাজ্য সভাপতি করে ফেরানো হোক। দলীয় সুত্রের খবর, সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক এখন ভাল।
তবে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে মুসলিম ভোটারদের কাছে টানার ভাবনা আছে বিজেপির একাংশের মধ্যে। সেই ভাবনা নিয়ে দল চললে রাজ্যসভার সদস্য তথা রাজ্য পার্টির মুখপাত্র নরমপন্থী বলে পরিচিত শমীক ভট্টাচার্যকে রাজ্য সভাপতি করার পক্ষপাতী একাংশ।
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাই থাকছেন। বাংলায় রাজ্য সভাপতি পদেও সুকান্ত মজুমদারও ততদিন পর্যন্ত কাজ চালাবেন। মণ্ডল, জেলা, প্রদেশ এবং জাতীয় স্তরের কমিটি সদস্য নির্বাচনের পর নতুন জাতীয় ও রাজ্য সভাপতিদের নাম চূড়ান্ত করা হবে।
সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী সব স্তরের কমিটিতেই ভোটের মাধ্যমে সদস্যদের সভাপতি নির্বাচন করার কথা। তবে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সেই পথ অনুসরণ করা হয় না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছায় সায় দেয় কমিটি। এবারও তাই হবে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের সংসদীয় কমিটির সদস্য কে লক্ষ্ণণকে। উত্তরপ্রদেশের এই ওবিসি নেতাকে দলীয় নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়ার পিছনে পশ্চাৎপদ অংশকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে কংগ্রেসের কাস্ট সেন্সাসের দাবি এবং রাহুল গান্ধীর ওবিসি-রা বঞ্চিত প্রচারের মোকাবিলায় বিজেপি এবার অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণিকে আরও বেশি করে সাংগঠনিক পদে জায়গা দেবে।
বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় বনসল, লোকসভার সদস্য সম্বিত পাত্র এবং দলের সহ-সভাপতি রেখা বার্মাকে সহকারী নির্বাচন আধিকারিক করা হয়েছে।