শেষ আপডেট: 10th September 2024 08:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার সফরে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের বিরোধিতায় সদল বলে নেমে পড়ল বিজেপি।কংগ্রেস নেতার সমালোচনার জবাব দিতে মাঠে নেমেছেন কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং প্রমূখ।
সংসদীয় মন্ত্রী রিজিজু ফের রাহুলকে 'ছেলেমানুষ' বলে কটাক্ষ করেছেন। অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বলেছেন, বিরোধী দলনেতা বিদেশে গিয়ে যা বলছেন তা দেশবিরোধী বক্তব্য। একজন দায়িত্বশীল নেতার কাছ থেকে এই ধরনের মন্তব্য প্রত্যাশা করা যায় না।
রাহুল আমেরিকায় পৌঁছে প্রথমে নিউইয়র্কে একটি সভায় বলেন ভারতের রাজনীতি থেকে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি উধাও হয়ে গিয়েছে এটা বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদী জমানার অবদান। জবাবে, শিবরাজ বলেন এই ধরনের কথা দেশকে অপমান করা।।
রাহুল ভারতের অর্থনীতি নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে। তাঁর অভিযোগ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও ভারতে বহু পণ্য 'মেড ইন চায়না' অর্থাৎ ভারতীয়রা এখনও চিনা পণ্য ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিরোধী নেতার বক্তব্য চিন তাদের অর্থনীতিকে যথেষ্ট মজবুত করেছে তুলনায় ভারতের অগ্রগতি সামান্য।
মার্কিন সফরে রাহুল বারে বারেই আরএসএসকে নিশানা করে চলেছেন। এই বিষয়ে শিবরাজের বক্তব্য, কংগ্রেস নেতার কথায় স্পষ্ট তিনি রাষ্ট্রবাদী শক্তিকে কতটা অশ্রদ্ধা করেন। আরএসএস ভারতের মৈত্রী, সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করে। কখনও বিভেদের কথা বলে না।
মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিজেপি বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী তাঁকে বারে বারেই দুর্বল প্রধানমন্ত্রী বলে কটাক্ষ করতেন। শিবরাজ বলেন, আমি মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আমেরিকা গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কি দুর্বল। জবাবে আমি বলেছিলাম ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা বিদেশিদের জন্য কখনই দুর্বল নন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শক্তি দেশের জনগণ।
সংসদীয় মন্ত্রী রিজিজু ইদানিং সুযোগ পেলেই রাহুলকে ছেলেমানুষ বলে কটাক্ষ করে থাকেন। বিরোধী নেতার মার্কিন সফরের বক্তব্য নিয়েও একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সংসদীয় মন্ত্রী বলেন, কংগ্রেস নেতা নিজেকে ছেলে মানুষ হিসেবে তুলে ধরছেন। আরও বলেন, রাহুলের রাগের কারণ তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নরেন্দ্র মোদী তার সামনে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাই বিদেশের গিয়ে তিনি দেশের নিন্দা করছেন। আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ঈর্ষা করেন। রাহুলের মন্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী বলেছেন আরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং।
প্রসঙ্গত, আমেরিকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল গান্ধী। বিরোধী দলনেতা ভারতীয় সময় সোমবার গভীর রাতে ওয়াশিংটনে বলেছেন নরেন্দ্র মোদীর ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি এখন ইতিহাস।
একদিন আগে নিউইয়র্কে রাহুল বলেছিলেন মোদীকে এখন দেশবাসি আর আগের মতো ভয় পায় না কারণ চার জুন মোদীর জন্য সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। ওইদিন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশিত হয়। ৪০০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে দাবি করা বিজেপি ২৪০-এ এসে থমকে যায়।
এর আগে, টেক্সাসে এক অনুষ্ঠানে ভারতের বিরোধী দলনেতা বলেন, লোকসভা ভোটের পর নরেন্দ্র মোদী এবং আরএসএস সম্পর্কে ভারতবাসীর ভয় অনেকটাই কেটে গিয়েছে। রাহুল দাবি করেন, আমরা দেশে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছি।
ওয়াশিংটনে রাহুল আরএসএসকেও এক হাত নিয়েছেন। তার বক্তব্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বিভিন্ন ভাষাভাষীর মধ্যে বিভেদ ছড়াতে চাইছে দাবি করে বাংলা, মারাঠি, তামিল প্রভৃতি ভাষা যথেষ্ট উন্নত নয়।
রাহুল এর আগে ২০২২-এ আমেরিকা ও ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন। সেই সফরে তাঁর বক্তব্য নিয়ে দেশের রাজনীতির ঝড় উঠেছিল। বিজেপি অভিযোগ করে, রাহুল বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করছেন। বলে বেড়াচ্ছেন ভারতে গণতন্ত্র নেই। যদিও দুই দেশেই রাহুল দেশে গণতন্ত্র নিয়ে সরব হয়ে যোগ করেছিলেন ভারতীয়রাই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সক্ষম। আমরা বিদেশের সহযোগিতা চাইছি না।
সেই দুই সফরে রাহুল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ করেন। বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশবাসী ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। নরেন্দ্র মোদী দেশের সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারি সংস্থায় পরিণত করেছেন। নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, কেন্দ্রীয় ভিজিলেন্স কমিশন, কোনওটাই স্বাধীন নয়।
এবারও বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেছে বিজেপি। বিহারের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেছেন রাহুল ফের বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের নিন্দা করছেন এতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
রাহুল বিজেপি, মোদীর পাশাপাশি আরএসএস সম্পর্কেও একই কথা বলেন। রাহুল বলেন, বিজেপি ও তার দোসরেরা এখন চুপ করে গেছে। রাহুল বলেন, ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। প্রসঙ্গত, ৪০০ আসনে জয়লাভ করার সংকল্প ঘোষণা করলেও বিজেপি এবার ২৪০ আসন পেয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করেছে। ফলে এনডিএ-র শরিকদের সমর্থনে মোদীকে সরকার চালাতে হচ্ছে। শরিকদের আপত্তিতে ইতিমধ্যে একাধিক বিষয়ে মোদী পিছু হটেছেন।
সরকারিভাবে রাহুলের এই সফল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বলে ওভারসিজ কংগ্রেসের সভাপতি সাম পিত্রোদা জানিয়েছেন। রাহুলকে ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। তিনি সেখানে ভারতের বিরোধী দলনেতা কিংবা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে যাননি।