শেষ আপডেট: 14th November 2024 08:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিধানসভার ভোট চলছে। অন্যদিকে, সামনেই উত্তর প্রদেশে বিধানসভার দশটি আসনে ভোট নেওয়া হবে। তিন রাজ্যেই বিজেপির স্টার বক্তার তালিকায় প্রথম তিনে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উত্তর প্রদেশে উপনির্বাচনের জন্য ভোট চাইতে প্রধানমন্ত্রী কোনও ময়দানে সভা করবেন না। তবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভাষণ দেবেন একদিন।
লোকসভা ভোটে অভাবনীয় খারাপ ফলের পর বিজেপি উপ নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে। সেখানে উন্নয়নকে পাশে রেখে কট্টুর হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করেছেন যোগী আদিত্যনাথ। যা নিয়ে বিরোধীরা তাঁকে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না। তাঁদের বক্তব্য, দু-বারের মুখ্যমন্ত্রীর তো কাজের খতিয়ান তুলে ধরে ভোট চাইতে পারছেন না। এতেই প্রমাণ হয়, যোগী সরকার ব্যর্থ। জানা যাচ্ছে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ বিরোধীদের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত।
বিজেপির অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে উত্তর প্রদেশের ভার্চুলায় সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখে কি ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ স্লোগান শোনা যাবে। নাকি তিনি নিজের স্লোগান ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ বলেই ভাষণ শেষ করবেন? কারণ, মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে প্রধানমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত যে আটটি সভা করেছেন, সেখানে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে শুধু ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগান। একবারের জন্যও বলেননি, ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে।’
আসলে দ্বিতীয়টি বলছেন শুধু যোগী আদিত্যনাথ ও তাঁর অতিঘনিষ্ঠরা। উত্তর প্রদেশের প্রচারেও বিজেপির হাতে গোনা কতিপয় নেতার মুখে শোনা গিয়েছে যোগীর ‘কাটেঙ্গে তো বাটেঙ্গে’ স্লোগান। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডে বিজেপির কোনও নেতাই ওই স্লোগান মুখে আনছেন না। এমনকী মহারাষ্ট্রে বিজেপির একাংশ এবং শরিক দলের তরফে ওই স্লোগান নিয়ে আপত্তি উঠেছে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যোগী যেন রাজ্যে প্রচারে এসে ওই স্লোগান আর উচ্চারণ না করেন।
মহারাষ্ট্র বিধান পরিষদের সদস্য বিজেপি নেত্রী পঙ্কজা মুণ্ডে এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট বলেছেন, ‘যোগীজির স্লোগান মহারাষ্ট্রে কাজ করবে না। এ রাজ্যে আমরা রাজনীতিতে এমন উগ্রতা চাই না।’ পঙ্কজা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, প্রয়াত বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুণ্ডের মেয়ে। তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব ধর্ম-বর্ণ-বর্গের জন্য কাজ করে চলেছেন। তাঁর স্লোগান ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’-তে সরকারের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন আছে। কাটাকাটির স্লোগান আমরা চাই না।’
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ারও প্রকাশ্যেই যোগীর ওই স্লোগান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘যোগীজি এই স্লোগান উত্তর প্রদেশে বলুন। ওখানে তা কাজে আসতে পারে। মহারাষ্ট্রে নয়।’ আসলে মহারাষ্ট্রে প্রথমসারির দলগুলির মধ্যে কংগ্রেসের কংগ্রেসের পর এনসিপি-তেই সবচেয়ে বেশি মুসলিম প্রার্থী আছে। যদিও রাজ্যে কোনও দলই জনসংখ্যার সঙ্গে সমতা রেখে মুসলিমদের প্রার্থী করেনি।
যোগী আদিত্যনাথ আসলে হিন্দুদের মধ্যে মুসলিম ভীতি জাগাতেই বাটেঙ্গে-কাটেঙ্গে স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁর ইস্যু হল, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নিপীড়ন। যোগীর কথায়, বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে ঐক্যের অভাব থাকাতেই মুসলিমরা তাদের উপর জুলুম করতে পারছে। উত্তর প্রদেশের উপ নির্বাচনের প্রচারে তিনি গত ৫ অগাস্ট থেকে লাগাতার এই কথা বলে চলেছেন।
বিজেপির অন্দরে অনেকেই মনে করছেন, যোগী আসলে দলে তাঁর আলাদা ভাবমূর্তি তৈরির লক্ষ্যে কট্টর স্লোগানের পথে হেঁটেছেন। আসলে দলের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উত্তরসূরি হওয়ার প্রচ্ছন্ন লড়াই জারি আছে। যোগী নিজেকে সেই লড়াইয়ে সামনের সারিতে রাখতেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের হিন্দুদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে বলছেন, অনৈক্যই সমস্যার প্রধান কারণ। এইভাবে হিন্দু ঐক্যের কথা বলে হিন্দুত্ববাদী শিবিরে নিজেকে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন যোগী, মনে করছে দলের একাংশ।