শেষ আপডেট: 24th October 2024 13:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেদিনও ছিল ২৫ অক্টোবর। ১৯৯৯ সাল। আন্দামান সাগরে তৈরি হল সুগভীর নিম্নচাপ। ২৮ অক্টোবরের মধ্যে তা তৈরি হল সুপার সাইক্লোনে। পরদিন ২৬০ কিমি গতিতে তা আছড়ে পড়ল ওড়িশার বুকে। এক ঝড়ের ঝাপটায় তছনছ হয়ে গেল বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক, ঢেঙ্কানল, জগৎসিংপুর, জাজপুর, কেওঞ্ঝর, কেন্দ্রপাড়া, খুরদা, পুরী, ময়ূরভঞ্জ এবং নয়াগড়।
লন্ডভন্ড হয়ে যায় পুরীর নিকটবর্তী নন্দনকানন জুলজিক্যাল পার্ক এবং ভিতরকণিকা জাতীয় উদ্ধান। অসংখ্য পশুপাখির মৃত্যু হয়। বন্যা এবং জলস্ফীতি ও ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয় ম্যানগ্রোভ এবং অন্যান্য বনাঞ্চলের। ২৫ বছর পর অক্টোবরের একই সপ্তাহে কি ঘটতে চলেছে সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
দানা ঘূর্ণিঝড়ের যা গতিপ্রকৃতি তাতে আবহাওয়াবিদদের মতে, বৃহস্পতির শেষরাতে বা তার আগে আছড়ে পড়তে পারে ঝড়। ভূমিখণ্ডে আছড়ে পড়ার জায়গা হবে ভিতরকণিকা এবং ধামরা বন্দরের মাঝামাঝি। সে কারণে বিশ্বের দুই প্রধান পর্যটন আকর্ষণস্থল নন্দনকানন ও ভিতরকণিকার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত এই দুই বনাঞ্চল তিন-চারদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়ার আগে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাজনগরের বন আধিকারিক সুদর্শন গোপীনাথ যাদব জানান, সাইক্লোনের সময় এখানকার মূল সম্পদ সাদা কুমির, লোনা জলের বিলুপ্তপ্রায় কুমির এবং পাইথন ও কোবরা বসত এলাকায় ভেসে যেতে পারে। আমরা দুটি টিম গঠন করেছি। তারা বসত এলাকা থেকে ফোন পেলেই বন্য সরীসৃপদের উদ্ধার করে নিয়ে আসতে যাবে। একটি ভিতরকণিকায় অন্যটি রাজনগরে মোতায়েন করা হয়েছে।
একইভাবে নন্দনকাননের পশুপাখিদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তার একটি মহড়াও হয়ে গিয়েছে। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল গঠিত হয়েছে, যাতে বনাধিকারিক, পশু ডাক্তার, চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুর দেখভাল করা কর্মীরা রয়েছেন। চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর ওষুধ ও খাবার মজুত করা হয়েছে। কারণ মুক্ত বনাঞ্চলে জল ঢুকে গেলে কিংবা গাছ উপড়ে পড়লে খাদ্য সরবরাহে যাতে ঘাটতি না হয়, তার জন্য এই ব্যবস্থা।
চিড়িয়াখানার এক অফিসার জানান, কিছু জীবজন্তু ও পাখি আছে যারা খুবই স্পর্শকাতর। তাদের খুব সহজেই সংক্রমণ ঘটে। পশু চিকিৎসকদের এখানে সর্বক্ষণ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক এনে রাখা হয়েছে। ২০১৯ সালে সাইক্লোন ফণি এই চিড়িয়াখানার ব্যাপক ক্ষতি করেছিল। সে বছর ১৯ দিন বন্ধ ছিল চিড়িয়াখানা। আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। সবুজের ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে অনেক গাছ পুঁততে হয়েছিল। প্রায় ৭৪০ মিটারের সীমানা ধুয়েমুছে গিয়েছিল।
গাছ উপড়ে পড়ে যাতে কোনও পশুর মৃত্যু না হয়, তার জন্য ব়্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এমু পাখি এবং উটপাখিদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবরের সুপার সাইক্লোনে এই চিড়িয়াখানার একটি সিংহ, ১০টি চিতল হরিণ সহ ১৩টি পশুর মৃত্যু হয়েছিল। বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২২টি পাখি যার মধ্যে একটি ধনেশ পাখিও ছিল ঝড়ে মারা পড়ে। নিখোঁজ ছিল অন্তত ৫২টি পশু, ৫৮টি পাখি এবং ৩২টি সরীসৃপ।
ভিতরকণিকা ম্যানগ্রোভ ওড়িশা রাজ্যের ম্যানগ্রোভ জলাভূমি। এটি ব্রাহ্মণী নদী ও বৈতরণী নদীর ব-দ্বীপে ৬৫০ বর্গ কিলোমিটার (৪০০ বর্গ মাইল) এলাকা জুড়ে রয়েছে। রয়েছে নোনা জলের কুমির, কিং কোবরা, ভারতীয় পাইথন এবং বড় গুইসাপ। ২০০৪ সালের আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর ২০০৬ সালে মধ্যে ২৬৩ টি পাখির প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে ১৪৭ টি পাখির প্রজাতি আবাসিক এবং ৯৯ টি পাখি পরিযায়ী। হেরোন পাখি প্রায় ৪ হেক্টর (৯.৯ একর) এলাকা জুড়ে থাকে, যেখানে ২০০৬ সালে গণনা করে ১১,২৮৭ টি হেরোন পাখির বাসা পাওয়া যায়।
ভিতরকণিকা ভারতে বিপন্ন নোনা জলের কুমিরের বৃহত্তম বাসার মধ্যে একটি এবং বিশ্বব্যাপী অনন্য। ১০ % প্রাপ্তবয়স্কদের দৈর্ঘ্য ৬ মিটারের বেশি। প্রায় ১৬৭১ টি লবণাক্ত পানির কুমির নদী ও খাঁড়িতে বাস করে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ব্যাক ওয়াটারে নৌকা ভ্রমণ। আড়াই দশক আগে ওড়িশার ‘সুপার সাইক্লোনে’ও ততটা ধাক্কা লাগেনি ভিতরকণিকায় সুবিখ্যাত সাদা কুমির এবং দূর ভারত মহাসাগরের কচ্ছপ, বিরল অলিভ রিডলিদের সংসারে।