শেষ আপডেট: 7th March 2025 16:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিদেশ থেকে সোনা পাচারের অভিযোগে ধৃত কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে তিনদিনের ডিরেক্টরেট অফ রেভেনিউ বা ডিআরআই-এর হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। বেঙ্গালুরুর আর্থিক বিষয়ক একটি বিশেষ আদালত তদন্তকারী সংস্থার আর্জির ভিত্তিতে তাঁকে ডিআরআইয়ের হেফাজতে দিল। শুক্রবার বিচারক বিশ্বনাথ সি গৌড়া এই নির্দেশ দেন। গত সোমবার ডিআরআই বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে রানিয়াকে হাতেনাতে পাকড়াও করে। প্রথমে তাঁকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও ডিআরআই রাওকে নিজেদের হেফাজতে চায় বৃহস্পতিবার।
ডিআরআই আর্জিতে জানিয়েছিল, এই ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ভয়ঙ্কর। তাই তাঁকে হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। কারণ তদন্তকারীদের অনুমান, এই ঘটনার পিছনে শুধু অভিনেত্রী একা নন, একটি বিরাট চক্র আছে। যার সঙ্গে অনেক হোমড়াচোমড়াও থাকতে পারে। এদিকে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় রানিয়া রাও অফিসারদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে সূত্র জানিয়েছে। তিনি বলেছেন, সোনা পাচার চক্রে জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
অন্যদিকে, রানিয়ার আইনজীবী একটি জামিনের আবেদন করেছিলেন আদালতে। ডিআরআই অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করে এক বিচারকের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেখানে আদালত বসানোর পর তাঁকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ হয়। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় ডিআরআই হেফাজতে চায়নি আদালতের সামনে। যে কারণে তাঁকে জেল হেফাজতে রাখা হয়। আইনজীবীর দাবি, এই অভিনেত্রী বেঙ্গালুরু বাসিন্দা এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যখনতখন তাঁকে পাওয়া যাবে। তাই তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
যদিও ডিআরআই পাল্টা বলে, এই সোনার বাঁট কোথা থেকে তিনি পেলেন, কে দিয়েছে, টাকাপয়সার লেনদেন কীভাবে এবং কত হয়েছে, তিনি কীভাবে সোনা পাচার করেছেন একের পর এক, এই কাজে তাঁর কী স্বার্থ জড়িত, এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। শুধু তাই নয় সোনা পাচারের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তাও জড়িত তাই তাঁকে হেফাজতে নিতে চায় ডিআরআই। সোনা পাচারের অভিযোগে ধৃত জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাও জেরার মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁর কাছে ১৭টি সোনার বাঁট ছিল। একইসঙ্গে তদন্তকারী অফিসারদের সামনে কী কৌশলে তিনি সোনা পাচার করতেন, তাও স্বীকার করে নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ রাতে বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দর থেকে দুবাই ফেরত বিমানে নামা রানিয়াকে বিপুল সোনা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে ডিআরআই। আধিকারিকদের সামনে জেরায় লিখিত বিবৃতিতে রানিয়া বলেছেন, আমি বিভিন্ন সময়ে ইউরোপ, আমেরিকা, আরব দুনিয়া এবং সৌদি আরব ও দুবাইয়ে ঘনঘন যাতায়াত করেছি। আমি এই মুহূর্তে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে আছি। এবং বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, তাঁর বাবার নাম কেএস হেগড়েশ। যিনি একজন ইমারতি ব্যবসায়ী। তাঁর স্বামীর নাম যতীন হুক্কেরি, তিনি আর্কিটেক্ট। তিনি আরও জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর উপর কোনও জোরাজুরি করা হয়নি। তিনি কোনও চাপের কাছে এই বিবৃতি দিচ্ছেন না। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁকে খাবার, জল এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর খিদে না থাকায় খাননি অভিনেত্রী।
তদন্তে জানা গিয়েছে, গত একবছরের মধ্যে রানিয়া প্রায় ৩০ বার দুবাই গিয়েছিলেন। ১৫ দিনের মধ্যে চারবার। আর প্রতিবারই তাঁকে একই পোশাক পরে ফিরতে দেখে সন্দেহ মাথাচাড়া দেয় তদন্তকারী অফিসারদের। বিমানবন্দরে কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাওকে বমাল গ্রেফতার করা হয়। শাড়ির নীচে একটি বেল্টে সোনার বাঁটগুলি বাধা ছিল। তাঁর শরীর ও বাক্স তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১৫ কেজির মতো চোরাই সোনা, যার মূল্য আনুমানিক সাড়ে ১২ কোটি টাকা, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। শুধু তাঁর কাছ থেকেই নয়, রানিয়ার বাড়িতেও তল্লাশি চালিয়ে ২.০৬ কোটি টাকার সোনার গয়না ও নগদ ২.৬৭ কোটি টাকা উদ্ধার করে ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স।