জাস্ট্রিন ট্র্যুডো এবং সঞ্জয় ভার্মা
শেষ আপডেট: 21st October 2024 10:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কানাডার রাজধানী ওটায়া থেকে দেশে ফিরে এসেছেন সে দেশে কর্মরত ভারতের রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় ভার্মা। কানাডার দায়িত্ব পালনে যাওয়ার আগে চিন-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দেশে ভারতের হয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা বিদেশ মন্ত্রকের এই অফিসারকে জাস্ট্রিন ট্র্যুডোর সরকার বহিষ্কার করেছে।
কানাডা ছাড়ার আগে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত-কানাডা সম্পর্কের অবনতির জন্য পুরোপুরি দায়ী প্রধানমন্ত্রী ট্র্যুডো। তিনি হাতে প্রমাণ ছাড়াই স্রেফ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে সঞ্জয় ভার্মা বলেছেন, আমরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছি, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কীভাবে খলিস্তানি জঙ্গিদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কানাডার শিখ নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যায় কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি সরাসরি অটোয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের যোগ থাকার অভিযোগ তোলে। তারপরই সঞ্জয় ভার্মা ও তাঁর ছয় সহযোগীকে বহিষ্কার করে কানাডা। পাল্টা ভারতও ট্র্যুডোর দেশের ছয় কূটনীতিককে দেশ ছাড়তে বলেছে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারত ও কানাডার সম্পর্ক এবার কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে দু-দেশেই্ কূটনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের মতো ঘটনাকে কূটনৈতিক মহল সম্পর্কের চরম অবনতি হিসাবে দেখে থাকে। সেই মানদণ্ডে কানাডার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পাকিস্তানের থেকেও খারাপ।
খলিস্তানি জঙ্গি ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে পারস্পরিক নির্ভরতার দিকটি। কানাডায় প্রতি বছর দু-লাখের বেশি ছেলেমেয়ে ভারত থেকে পড়াশুনোর জন্য যায়। গত বছর এই সংখ্যা ছিল দু লাখ তিরিশ হাজার।
১৮ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভুত ওই দেশের নাগরিক। এছাড়া অস্থায়ী বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। কানাডা ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। একইভাবে ভারত পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে মার খাবে কানাডার পেনশন ফান্ড অথিরিটির বিনিয়োগ। ভারতে কানাডার পেনশন ফান্ডের বিপুল টাকা বিনিয়োগ করা আছে। ভারতের মতো একটি জনবহুল দেশের ব্যবসা হারালে তারা বিপাকে পড়বে।
ভারতের ৬০০-র কাছাকাছি কোম্পানি কানাডায় সঙ্গে ব্যবসা করে। সেখানে ভারতে ব্যবসা করে এক হাজারের বেশি কানাডিয় সংস্থা। যদিও সব মিলিয়ে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যে কানাডার নাম আছে আঠারো নম্বরে। ফলে বাণিজ্য নিয়েধাজ্ঞা জারি হলেও কোনও দেশই তেমন ক্ষতির মুখে পড়বে না। সমস্যা হবে ওই দেশে পড়তে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়াদের এবং যারা আগামী দিনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় কানাডায় মেডিক্যাল শিক্ষার খরচ তুলনায় কম এবং পঠনপাঠন বেশ উন্নত।
তবে এখনই মুখ দেখাদেখি বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মনে করছে না কূটনৈতিক মহলের সিংহভাগ। তাদের বক্তব্য, জাস্টিন ট্রুডো এই ব্যাপারে আর বেশি দূর এগবেন বলে মনে হচ্ছে না। আবার বিতর্কের অবসানও চাইবেন না।
আগামী বছর কানাডার জাতীয় সংসদের নির্বাচন। ফের নির্বাচিত হয়ে আসলে তখন সম্পর্কের উন্নতি কিংবা ছেদ নিয়ে ভাববেন তিনি। ট্র্যুডো ক্ষমতায় না ফিরলে সম্পর্কের দ্রুত উন্নতি হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, কানাডার বিরোধী দলগুলিকে এই ইস্যুতে পাশে পাননি প্রধানমন্ত্রী। তাদের অভিযোগ, ভারতীয়, বিশেষ করে শিখ ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্যে ট্র্যুডো ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। সে দেশের সংসদের তিনশো আসনের মধ্যে কুড়িটির ভাগ্য নির্ধারিত হয় এশিয়দের ভোটে। তারমধ্যে উনিশটির ক্ষেত্রে শিখ ভোটাররাই শেষ কথা। কানাডায় শিখ জঙ্গিদের তৎপরতা নিয়ে বিরোধী দলগুলি উদ্বিগ্ন।