শেষ আপডেট: 4th May 2024 13:10
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বটেশ্বর একটি গ্রামের নাম। আগ্রা থেকে ৮০ কিমি দূরে যমুনা নদীর তীরে ছোট্ট একটি জনপদ বটেশ্বর। আপাত কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। শুধুমাত্র এই গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির নাম। এই গ্রামের ধুলোয় এখনও লেগে রয়েছে তাঁর স্মৃতি। কিন্তু, বিজেপির প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা সেই বাজপেয়ির গ্রামে আজও গড়ে ওঠেনি একটি কলেজ।
বটেশ্বরে বাজপেয়ির আত্মীয়রা আজও বাস করেন। উত্তরপ্রদেশ সরকার দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি দিলেও সরকারি কোনও কলেজ এখানে নেই। এবারেও সেই প্রতিশ্রুতি মিলেছে বিজেপির তরফে। তাই আশার হাল ছাড়তে চাইছেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়রা। ৭৫ বছর বয়সি মঙ্গলচরণ শুক্লা জানান, যোগী আদিত্যনাথ ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এখানে এসেছিলেন বাজপেয়িজির অস্থি বিসর্জনের জন্য। সেদিন কলেজ নির্মাণসহ একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। অথচ, আজও তা পূরণ হয়নি। তাঁর কথায়, এখন বাজপেয়িজিকে বিজেপি স্মরণ করে কেবলমাত্র তাঁর জন্মদিন (২৫ ডিসেম্বর) এবং মৃত্যুদিনে (১৬ আগস্ট)।
এ গ্রামের অনেকেই জানেন বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্যই একদিন বাজপেয়ির বাবা অজগাঁ ছেড়ে গোয়ালিয়রে চলে গিয়েছিলেন। আরও আশ্চর্যের যে, যোগী সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী যোগেন্দ্র উপাধ্যায় বটেশ্বর লাগোয়া আগ্রার বিধায়ক। ছেলেবেলার বেশ কয়েকটা বছর বাজপেয়ি এই গ্রামেই কাটিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একবারই গ্রামে ফিরেছিলেন। সেবারেও বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষকে।
বটেশ্বরের ভোটার সংখ্যা মাত্র ৭ হাজার। তাঁদের সকলেরই একটাই দাবি, সরকারি কলেজ। দশম শ্রেণির পর পড়ার মতো কোনও স্কুলও কাছাকাছি নেই। এরপর পড়তে হলে ১২ কিমি দূরে রোজ যাতায়াত করতে হয়। গ্রাম প্রধান নেক্ষা দেবীর স্বামী রঘুবীর নিষাদ বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়তে চায়। একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজের চাহিদা বহুদিনের। গতবছর মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ এসে এখানে ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ি সাংস্কৃত সঙ্কুল কেন্দ্রের উদ্বোধন করে যান।
বটেশ্বর হল ফতেপুর সিক্রি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সেখানে এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ রাজকুমার চাহার। তিনি জাঠ। কংগ্রেস প্রার্থী করেছে রামনাথ সিকারওয়ারকে। তিনি ঠাকুর সম্প্রদায়ের। বহুজন সমাজ পার্টির প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন রামনিবাস শর্মা। শচীন বাজপেয়ি গ্রামের একটি স্কিল সেন্টার চালান। তিনি জানান, এখানকার জন্য অনুমোদিত একটি কলেজ প্রভাব খাটিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার পরেও যোগী ২০২১ সালে আর একটি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব হয়। কিন্তু আজও তা সরকারি অনুমোদন পায়নি।
প্রাক্তন শিক্ষক আর এক গ্রামবাসী বলেন, কলেজ ছাড়াও এখানকার যুবকদের হাতে কাজ নেই। এখানে কাছাকাছি কোনও শিল্প গড়ে ওঠেনি। প্রতিবারই বিজেপি নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অজয় যাদব ও গৌরব যাদব নামে দুই যুবক বললেন, আগে সেনায় ভর্তি হওয়ার জন্য কত ছেলে প্রশিক্ষণ নিত। এখন অগ্নিবীর প্রকল্পের জন্য তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তাঁরা আরও বলেন, চাকরি বলতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী। তাতেও প্রতিবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। রাজ্য সরকার ঠিক করে একটি পরীক্ষাও নিতে পারে না। এই অবস্থায় কেন আমরা বিজেপিকে ভোট দেব, বলতে পারেন? বিনোদ সিং নামে এক রাজপুত বলেন, আমার দুই ছেলে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় পাশ করেছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে নিয়োগ বন্ধ। এখন কোথায় যাবে অল্প বয়সি ছেলেরা। অনেকেই তাই ঘর ছেড়ে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছে, ঠিক যেমনটি গিয়েছিলেন বাজপেয়ির বাবাও।