শেষ আপডেট: 11th September 2024 14:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কংগ্রেস সাংসদ তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর শিখদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মন্তব্যের প্রশংসা করলেন নিষিদ্ধ খলিস্তান জঙ্গি সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের সহ প্রতিষ্ঠাতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুন। খলিস্তানপন্থী এই নেতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতে শিখদের অস্তিত্বরক্ষার সংকট নিয়ে রাহুলের বক্তব্য শুধু কঠিন সত্যই নয়, স্বাধীনতার পর থেকে ভারতে শিখদের উপর যে অন্যায়-অবিচার চলছে তার বাস্তবিক চিত্র। আমরাও ভারতে শিখদের স্বাধীনতা চাই, শিখদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রগঠন চাই।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, কংগ্রেস এমপি ফের অবিবেচকের মতো কথা বলেছেন। দেশের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্যে পান্নুনের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা তো আশকারা পাবেই। সূত্রের দাবি, এদেশে কোনও শিখ অখুশি নয়। আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ক্ষোভ-অভিযোগ থাকলে তা তো দেশের মাটিতেই মেটানো যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী রাহুলের নিন্দায় বলেন, তাঁর কথার সঙ্গে খলিস্তানি জঙ্গি পান্নুনের দাবির মিল রয়েছে। উনি কি পান্নুনের সঙ্গেও দেখা করেছেন নাকি, প্রশ্ন তুলেছেন পুরী। বিজেপির মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালাও বলেন, কংগ্রেস আবার জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। পাগড়ি নিয়ে তাঁর মন্তব্যে দেশের শিখদের মধ্যে কোনও প্রভাব পড়েনি। কিন্তু বিদেশে লুকিয়ে বসে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনগুলির সুবিধা হয়ে গিয়েছে। ওরা সমর্থন করছে রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে।
রাহুল গান্ধীর 'বেফাঁস' মন্তব্যকে কেন্দ্র করে হাতের টেক্কা পেয়ে গিয়েছে বিজেপি। আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন কেন্দ্রের শাসকদলের নেতারা। বিশেষত ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের প্রায় পর মুহূর্তে রাজধানী দিল্লিসহ দেশজুড়ে শিখ নিধনের কলঙ্ক লেগে থাকা কংগ্রেস দলের নেতার মুখে শিখদের পাগড়ি পরা ও গুরুদ্বারে যাওয়া নিয়ে মন্তব্য করায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি।
এর আগে ব্রিটেনে গিয়েও বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি-আরএসএস সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় গেরুয়া শিবির বিঁধেছিল বিরোধী দলনেতা রাহুলকে। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে রাহুল ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে শিখদের সম্পর্কে মন্তব্য করেন। ভার্জিনিয়ার হার্নডন-এ এক অনুষ্ঠানে রাহুল বলেন, ভারতের শিখরা পাগড়ি পরতে পারবেন কিনা, তাঁরা গুরুদ্বারে যেতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই লড়াই চলছে। শিখদের হাতে কড়া বা বালা পরার অধিকার রক্ষার লড়াই চলছে। ভারত এখন এই ধরনের লড়াইয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। শুধু শিখ ধর্ম নয়, সব ধর্মের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য, বলেন রাহুল।
কংগ্রেস সাংসদের মন্তব্যের জবাবে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র আরপি সিং বলেন, ১৯৮৪ সাল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর গণ শিখহত্যা হয়েছিল। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ৩০০০ শিখকে হত্যা করেছিল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। শিখদের পাগড়ি খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। বহু মানুষের চুল-দাড়ি কেটে দেওয়া হয়েছিল। উনি তো সেই কথার উল্লেখ করলেন না। কারণ তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ছিল।
আরপি সিং আরও বলেন, ওনার সাহস থাকলে ভারতের বুকে দাঁড়িয়ে একথা বলে দেখান। আমি নিজে ওনার বিরুদ্ধে আদালতে যাব। রাহুল গান্ধীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেন, এই হল সেই কংগ্রেস, যারা চিরকাল তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে গিয়েছে। এরাই শিখ গণহত্যার নায়ক। এখন আমাদের জ্ঞান দিতে এসেছে। রাহুল গান্ধী দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন ৪০০ আসন পাবেন। দুঃখের বিষয় হল, ৯৯-তেই থেমে যেতে হয়েছে। সত্যি হচ্ছে, নরেন্দ্র মোদী তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন ওনার ঠাকুমার (ইন্দিরা গান্ধী) থেকেও বেশি ভোটে জিতে।
বিদেশে গেলেই রাহুল গান্ধী ভারতের নামে কুৎসা করেন, বদনাম করেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং। বিরোধী দলনেতাকে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির বিরোধী দলনেতা পদের মর্যাদা রক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। শিবরাজ বলেন, রাহুল গান্ধী বিরোধী দলনেতার মতো একটি দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। অটলজি যখন এই পদে ছিলেন, তখন কোনওদিন বিদেশ সফরে দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেননি।
শিবরাজ আরও বলেন, পরপর তিনবার হেরে যাওয়ার পরেও রাহুল গান্ধীর ভিতর থেকে বিজেপি, আরএসএস এবং মোদী বিরোধী আক্রোশ মিটছে না। কারণ ওনার মাথায় এটা ঢুকে বসে আছে। শিবরাজের প্রশ্ন, কারা সংবিধানকে অস্বীকার করেছিল, অপমান করেছিল! কারা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল!
এছাড়াও রাহুলের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিজেপি এমপি প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল, মুখপাত্র প্রদীপ ভাণ্ডারি নিন্দা করেছেন। অন্যদিকে, ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতার। তিনি বলেন, আমার মনে হয় রাহুল যা বলেছেন তা ঠিক।