শেষ আপডেট: 21st February 2025 12:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আধুনিকোত্তর ডিজিটালাইজড সভ্যতার নয়া বিপদ সাইবার ক্রাইম। বিশেষত আর্থিক ক্ষেত্রে এর বিপদ দিনদিন চরমে পৌঁছচ্ছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের অপরাধ দমন শাখা। নিত্যনতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করে সাধারণ মানুষের পুঁজি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাপিস করে দেওয়ার সংখ্যা যেন বাড়তেই থাকছে। এনিয়ে তদন্তে নেমে সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি এবং গোয়েন্দা শাখাগুলি যা সূত্র পেয়েছে, তাতে কপালের ঘাম পায়ে এসে পড়ছে। রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের মতোই শিরদাঁড়া বেয়ে হিমস্রোত বয়ে গিয়েছে এজেন্সির কর্তাদের মধ্যে।
গোয়েন্দারা ও বিশেষজ্ঞরা একটি প্রধান ক্লু পেয়েছেন, যাতে বোঝা যাচ্ছে যে, মূলত ব্যাঙ্ককর্মী এবং তৃতীয় পক্ষ যারা সরাসরি ব্যাঙ্কের হয়ে কাজ করে, তাদের মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ তথা গোপন নথি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। কখনও জ্ঞাতসারে, কখনও বা অজ্ঞাতসারেই। সরকারের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক সূত্রেই এই তথ্য হাতে এসেছে।
এই তথ্য পাওয়ার পরেই সরকারি উচ্চস্তরে হেলদোল পড়ে যায়। এবং এর তথ্যতালাশ করতে কয়েক সপ্তাহ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে একটি জরুরি গোপন বৈঠক বসেছিল। যেখানে এই সঙ্কটের জট কাটানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি নির্দিষ্টভাবে খুঁজে পেয়েছে যে, ব্যাঙ্কের কর্মী ও তৃতীয় পক্ষের কাছে অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকা ডেটা আদানপ্রদানের কোনও পোক্ত বাধা নেই। ব্যাঙ্কিং তথ্যাবলির চরম গোপনীয়তার এই অবাধ হাতবদল অথবা অ্যাক্সেস পাওয়ার দরুনই তা বাইরে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।
এর কারণেই এভাবে অপরাধীরা তথ্য হাতিয়ে নিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে চলেছে একের পর একভাবে। যাতে গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা মুহূর্তে উবে যাচ্ছে অ্যাকাউন্ট থেকে। সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনকে এক শীর্ষ সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, আউটসোর্স করা কর্মী এবং তৃতীয় পক্ষ সহ ব্যাঙ্ককর্মীদের হাতে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য সহজেই মিলে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে অ্যাক্সেস তাঁদের থাকার কথা নয়, তাও তাঁদের নাগালে চলে এসেছে।
সাইবার অপরাধীরা এই বিধিভঙ্গকেই সুকৌশলে অপব্যবহার করছে। এবং নাগরিকদের প্রতারিত করছে। ওই বৈঠকে থাকা এক আধিকারিক এও জানান, ব্যাঙ্ক কর্তাদের বেশ কিছু সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট স্তরের অফিসারদের নিয়েও প্রশ্নরেখা দেখা দিয়েছে, যা সবথেকে ভয় ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। অসংখ্য অভিযোগ সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলিও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পদেপদে ব্যর্থ হচ্ছে বলে বৈঠকে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টালে আসা অভিযোগগুলির মধ্যে ৬০-৭০ শতাংশ প্রতারক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির গাফিলতি নজরে এসেছে সংস্থার। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলি আরও সতর্ক করে বলেছে, ব্যাঙ্কিং নিরাপত্তাতেও যথেষ্ট ঘাটতি নজরে এসেছে। প্রতারণার গতিপ্রকৃতি, ভুয়ো অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাঙ্কের প্রতিক্রিয়া টাইম ধরে ধরে বৈঠকে বিশ্লেষণ করেছেন গোয়েন্দারা। তাতে দেখা গিয়েছে, চলতি যে সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে তাতেই গলদ রয়েছে। নয়তো তা কাজ করেনি। ব্যাঙ্কগুলিও তা সংশোধন করার চেষ্টা করেনি যা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তাই ওই বৈঠকে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নয়া নির্দেশিকাকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। যতক্ষণ না ব্যাঙ্কগুলি তাদের অভ্যন্তরীণ ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করবে, কঠোর ব্যবস্থা নেবে, পরিকাঠামোর উন্নতি করবে, ততক্ষণ সাইবার ক্রাইম বাইরে থেকে ঠেকানো দুঃসাধ্য বলে বৈঠকের আলোচনায় গৃহীত হয়েছে।