শেষ আপডেট: 5th September 2024 09:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনালাপে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছিল কি? এগারো দিনের মাথায় হোয়াইট হাউড জানাল, দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। জো বাইডেন বাংলাদেশের অচলাবস্থা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
গত সপ্তাহেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক জোরালো ভাষায় ফের দাবি করেছিল, দুই রাষ্ট্র প্রধানের আলোচনায় অবশ্যই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠে। প্রধানমন্ত্রী মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সে দেশে সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা হয়। বাইডেনও মোদীর কথায় সায় দেন।
জো বাইডেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন গত ২৬ অগাস্ট। ওই দিনই সকালে প্রধানমন্ত্রী মোদী ইউক্রেন ও পোলাল্ড সফর শেষে দেশে ফেরেন। বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁকে ইউক্রেন ও পোলান্ড সফরের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও বিশদে কথা বলেছেন। পরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকও দুই রাষ্ট্র প্রধানের ফোনালাপের বিষয়টি প্রেস রিলিজে জানায়। তাতে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু গোল বাঁধে হোয়াইট হাউসের ঘোষণা নিয়ে। মার্কিন প্রশাসন বাইডেন-মোদী আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গের উল্লেখ করেনি। তারা শুধু মোদীর ইউক্রেন ও পোলান্ড সফরের বিষয়ে উল্লেখ করে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় মুখপাত্র জন কিবরি জানান, বাইডেন-মোদী আলোচনায় বাংলাদেশ নিয়ে কথা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রকের দক্ষিণ-এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে যাচ্ছেন। বড় একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ঢাকা যাবেন। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস-সহ বাকি উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা হবে তাঁর।
আর আগে মোদী-বাইডেন ফোনালাপের পর দুই দেশের ভাষ্যের এই ফারাক নিয়ে বাংলাদেশ মিডিয়ায় বিস্তর জলঘোলা হয়। কোনও কোনও মহল থেকে অনুযোগ করা হয়, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতিরিক্ত উৎসাহ দেখাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনাকেও বিকৃত করছে।
গত সপ্তাহে দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রকের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জোরের সঙ্গে বলেন, অবশ্যই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠেছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি আলোচনা হয়। তিনি আরও বলেন, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে দুটি দেশই আলোচ্য সব বিষয় প্রকাশ করবে। এটা সংশ্লিষ্ট দেশের বিষয়। মার্কিন ঘোষণায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ না থাকার অর্থ এটা হতে পারে না যে ওই বিষয়ে কথা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশে অরাজকতা দেখা দেয়। আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সে দেশের সংখ্যালঘুদের উপরও নির্যাতন চালানো হয়।
প্রশ্ন হল মার্কিন প্রশাসন বাইডেন-মোদী আলোচনায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছিল কেন? মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থানে মার্কিন প্রশাসনের হাত ছিল বলে অভিযোগ ওঠায় হোয়াইট হাউস এই ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক। প্রচার করা হয়, শেখ হাসিনা তাঁর পরিণতির জন্য আমেরিকার দিতে আঙুল তুলেছেন। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করে। আবার হাসিনার তরফে তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও দাবি করেন, তাঁর মা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে বাড়তি সতর্ক। অনেকেই মনে করছেন, নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া একটি কৌশল হতে পারে। আমেরিকায় বিপুল সংখ্যায় বাংলাদেশি বাস করেন। তাঁরা অনেকেই সে দেশের ভোটার। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর হোয়াইট হাউস বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার কথা স্বীকার করল।