শেষ আপডেট: 10th September 2024 11:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উমা বাপেরবাড়ি আসছেন। বাড়ি বাড়িতে এখন থেকেই মেয়ে-নাতিনাতনিদের আসার খবরে খুশির বাতাস। এই অবস্থায় খাবারদাবারের লিস্টি করাও চলছে জোরকদমে। যার মধ্যে ইলিশ মাস্ট মাস্ট মাস্ট। কিন্তু, এবার জামাইবাবাজির পাতে এতদিনের গল্পের গোরু গাছে তোলা বাংলাদেশের ইলিশ পড়বে না। অতএব, সরষে বাটা দিয়ে মাখা মাখা ইলিশ ভাপা, লাউপাতায় মোড়া ইলিশ পাতুড়ি, বেগুন বা গাঁটি কচু দিয়ে কাঁচালঙ্কা-কালো জিরে দেওয়া পাতলা ঝোলের স্বাদ মেঘনার চরেই বাসা বেঁধে থাকবে। কারণ! বাংলাদেশের নয়া সরকার দুর্গাপুজো মরসুমে পদ্মা-মেঘনার ইলিশ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছে।
অনেকেই জানেন তিস্তা জলচুক্তি অসম্পূর্ণ থাকায় পূর্বতন শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারত সরকারের উদ্যোগে জামাই ষষ্ঠী, দুর্গাপুজো ও পয়লা বৈশাখের সময় কিছু ইলিশ ভারতে আসত। যেমন গতবছরেও পুজোর ঠিক মুখে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার টন পদ্মার ইলিশ পাঠিয়েছিল। কিন্তু, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এপার বাংলার বাঙালির রসনা থেকে ইলিশের স্বাদ ছিনিয়ে নিচ্ছে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার।
ফলে পুজোর আগে ইলিশের দাম পাল্লা দিতে চলেছে সোনার ভরির সঙ্গে। যদিও পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব অঞ্চলে বাঙালির ডেরা রয়েছে, সেখানে বিভিন্ন জায়গার ইলিশ এসে পৌঁছায়। কিন্তু, পদ্মাপারের ইলিশের প্রতি বাঙালির আকর্ষণ চিরন্তন। বাংলাদেশের তদারকি সরকারের মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, স্থানীয় বাজারে ইলিশের জোগান বজায় রাখতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউন এই খবর জানিয়েছে।
আখতার জানিয়েছেন, আমাদের দেশের লোকই ইলিশ কিনতে পারছে না। বিরাট দামবৃদ্ধি ঘটেছে স্থানীয় বাজারগুলিতে। এই অবস্থায় বিদেশে ইলিশ রফতানিতে আমরা অনুমতি দিতে পারি না। আমি বাণিজ্য মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছি, দুর্গাপুজোর সময় একটাও ইলিশ যেন ভারতে রফতানি না করা হয়। উল্লেখ্য, বিশ্বের ৭০ শতাংশ ইলিশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। ইলিশের জন্য বাংলাদেশ বিখ্যাত। সেদেশের জাতীয় মাছও ইলিশ।
এই অবস্থায় বাংলাদেশি ইলিশের অভাবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হবে ওড়িশা, মায়ানমার, গুজরাত ও মুম্বই ইলিশের উপর। যার স্বাদ ও সাইজ পদ্মা-মেঘনার মতো নয়। কিন্তু, পুজোর সময় চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এক কেজি থেকে এক কেজি তিনশোর সাইজের ইলিশের দাম পড়তে পারে ২২০০-২৪০০ টাকা। কারণ, বাংলাদেশে ভারতে ইলিশ পাঠানো বন্ধ করলেও মাছ ব্যবসায়ী মায়ানমারের ঘুরপথে আমদানি করতে চাইছেন পদ্মার গন্ধমাখা রুপোলি ফসল।
বাংলাদেশের নতুন তদারকি সরকার ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বন্ধ করতে চাইলেও নয়াদিল্লি কিন্তু ওপারের ডিমের আকালের সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে ডিমের আকালে ভারত ৫০ লাখ ডিম সরবরাহ করবে। সোমবার দু লাখ ২৩ হাজার ডিম পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে।