সুধা মূর্তি।
শেষ আপডেট: 6 July 2024 11:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ইনফোসিস-কর্ত্রী তথা কয়েকশো কোটির সম্পত্তির মালকিন, রাজ্যসভা সদস্য সুধা মূর্তি গত ৩০ বছরে নিজের জন্য শাড়ি কেনেননি। বহু বছর আগে একবার কাশীযাত্রা তাঁর জীবনে শখশৌখিনতায় এরকম বৈরাগ্য এনে দিয়েছিল। একটি সাক্ষাৎকারে লেখিকা-সমাজসেবী সুধা মূর্তি বলেন, গত দুদশক ধরে ১০০ শতাংশ শখের কেনাকাটা বন্ধের শপথ নিয়েছেন তিনি। তার পিছনে রয়েছে, ৩০ বছর আগের বারাণসী যাত্রা।
অতুল সম্পদ-ঐশ্বর্যের মালকিন হওয়া সত্ত্বেও সাদাসিধে জীবনযাত্রার জন্য সমাজে বহু মানুষের শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন সুধা। ভয়েস অফ ফ্যাশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুধা বলেন, লোকে বলে কাশীতে গেলে জীবনের সবথেকে ভালোলাগার কিছু ত্যাগ করে আসতে হয়। আমি ভীষণ কেনাকাটি করতে ভালোবাসতাম। তাই আমি মা গঙ্গার কাছে শপথ নিই, এ জীবনে আর কেনাকাটা করব না। নিজের জন্য শখের জিনিস কেনা ত্যাগ করলাম।
সুধা মূর্তির স্বামী ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি বিয়ের সময় তাঁকে দুটো সাধারণ শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। মুখে হাসি খেলিয়ে দিয়ে বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমি এর বেশি কিছু চাইনি। এমনকী এখনও। আমি বিশ্বাস করি জীবনে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হওয়াটাই যথেষ্ট। আপনাদের কেউ যদি আমাদের বাড়ি আসেন, তাহলে দেখতে পাবেন আমাদের ঘরে যৎসামান্যই আসবাবপত্র আছে।
৭৩ বছর বয়সি ইঞ্জিনিয়ার থেকে তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির মালকিন হয়েও সমাজসেবা এবং লেখালেখি করেই সময় কাটান সুধা মূর্তি। এই ত্যাগের পিছনে তাঁর ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া অবধি অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, একেবারে সাধারণ পরিবারে জন্মেছি আমি। বড়ও হয়েছি অত্যন্ত সাধারণ মেয়ের মতো। কারণ বিলাস করার মতো অর্থ তাঁর পরিবারে ছিল না।
সুধা মূর্তি আরও বলেন, তাঁর বাবা-মা কিংবা দাদু-ঠাকুমাদের জীবন কেটেছে নিতান্ত মধ্য-নিম্নবিত্ত হিসেবে। তা দেখেই তাঁর মধ্যেও সাধারণ জীবনযাত্রার প্রতি মায়া পড়ে গিয়েছে। সুধা মূর্তি বলেন, ৬ বছর আগে আমার মা যখন মারা যান, তখন মায়ের জিনিসপত্র একগোছ করতে মাত্র আধঘণ্টা সময় লেগেছিল। আমার মায়ের ৮ থেকে ১০টি শাড়ি ছিল। শুধু তাই নয়, ৩২ বছর আগে আমার ঠাকুমার মৃত্যু হয়। তাঁর ছিল মাত্র চারটি শাড়ি। এই অতি সাধারণ জীবনযাত্রাই আমাকে প্রভাবিত করেছে, সাক্ষাৎকারে বলেন তিনি।
শাড়ি থেকে অন্যান্য শখশৌখিনতার কেনাকাটা ছেড়ে দেওয়ায় সুধা মূর্তি বিভিন্ন লোক যেমন দিদি বা বোন, কাছের বন্ধু এবং কখনও কখনও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উপহার পাওয়া শাড়ি পরেন। তাঁর সবথেকে প্রিয় হল ইনফোসিস ফাউন্ডেশনের তরফে সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের হাতে বোনা সুতোর কাজ করা দুটি শাড়ি।
শাড়ির যত্ন নিয়েও সাক্ষাৎকারে অনেক কথা জানান রাজ্যসভায় ভাষণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা কুড়ানো এমপি মূর্তি। তিনি বলেন, আমি ৫০ বছর ধরে শাড়ি পরছি। যখনই কোনও শাড়ি পরি, ফিরে এসে সেটাকে বাইরে খোলা হাওয়ায় মেলে দিই। তারপর ইস্ত্রি করি এবং ফের যত্ন করে তুলে রাখি। আমি কখনও এতটা নিচু করে শাড়ি পরি না, যাতে তা ধুলোয় লাগে। যার ফলে সেগুলি পরিষ্কারও থাকে আর বেশিদিন টেকে।