শেষ আপডেট: 4th December 2023 08:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে ৩- ১ হারিয়ে দিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের হাতে থাকা রাজস্থান ও ছত্তীসগড় হাতছাড়া হয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও তারা ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ। কংগ্রেসের একমাত্র সাফল্য তেলঙ্গানায়। সেখানে ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে হাত চিহ্নের পার্টি।
কিন্তু লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগে হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিজেপির বিপুল সাফল্য ইন্ডিয়া জোটকে বড় ধরনের সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে। কারণ, লোকসভা ভোটের ভাগ্য নির্ধারণে বরাবর শেষ কথা বলে এসেছে হিন্দি তথা গো-বলয়।
এই পরিস্থিতিতে শরিকদলগুলির তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে শতাব্দি প্রাচীন দলটি। ইন্ডিয়া জোটের অধিকাংশ শরিক দলের বক্তব্য, কংগ্রেস একা লড়াই করতে গিয়ে জোটের মুখ পুড়িয়েছে।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কোনও দলই এই ফলাফলকে ইন্ডিয়া জোটের হার বলে মানতে নারাজ। আপাতত এই বার্তা স্পষ্ট, জোট অটুট রাখার ব্যাপারে কম-বেশি সব শরিক একমত, যা বিজেপির জন্য দুশ্চিন্তার।
কংগ্রেস রবিবারই ক্ষতে মলম দিতে বিশ বছর আগের ফল তুলে ধরেছে। ২০০৩ এ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগড় বিধানসভায় জয়ী হয়েছিল বিজেপি। লজ্জার হার হয়েছিল কংগ্রেসের। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০০৪- এর লোকসভা ভোটে ওই তিন রাজ্যে ভাল ফল করার পাশাপাশি কেন্দ্রে কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এই পুরনো তথ্য তুলে ধরে রবিবার বিকালে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট দেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। সেই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে হাত শিবির।
রবিবার ফল প্রকাশের পরই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেয়, চার রাজ্যের ভোটের ফলকে তারা ইন্ডিয়া জোটের ব্যর্থতা বলে মানে না। দলের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, এটা কংগ্রেসের ব্যর্থতা। ওই দলকেই বিপর্যয়ের দায় নিয়ে শোধরাতে হবে।
একটি সূত্রের খবর, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব ইন্ডিয়া জোট নিয়ে খুবই আন্তরিক। জোট অটুট রাখার পক্ষেই পদক্ষেপ করবে দল। জোড়াফুল শিবির মনে করে বিজেপি তিন রাজ্যের জয়কে যত বড় করে দেখাচ্ছে, যতই এই সাফল্যকে নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব বলে চালানোর চেষ্টা করুক না কেন, লোকসভা ভোটের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। জয়ের আসল কারিগর বিজেপির আঞ্চলিক নেতৃত্ব। কংগ্রেসের হারের কারণও রাজ্য নেতাদের ব্যর্থতা ও দাদাগিরি।
৬ ডিসেম্বর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই শরিক দলগুলি যা বলার বলবে।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত ফল নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে মুখ খুলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। নীতীশ ও অখিলেশের দল মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে প্রার্থী দিয়েছিল। দুই দলেরই বক্তব্য, কংগ্রেসের কারণেই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়নি। অখিলেশ দুই রাজ্যেই প্রচার করেন। বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানান তিনি। মধ্যপ্রদেশে ছয় আসন দাবি করেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং সেই প্রস্তাবে সায় দেওয়ার পরও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ তা খারিজ করে দেন। ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে সমাজবাদী পার্টি ভোট কাটায় ছয় আসন হারিয়েছে কংগ্রেস।
নীতীশ ও অখিলেশের বক্তব্য, কংগ্রেসকে জমিদারি মনোভাব ছাড়তে হবে। বিধানসভার ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে লোকসভার আসন সমঝোতায় উদার হতে হবে হাত শিবিরকে।
কংগ্রেসের মনোভাবের কারণেই হিন্দি বলয়ে বিপর্যয় বলে মনে করে হাত শিবিরের বিশ্বস্ত বন্ধু দুই বাম দল সিপিএম ও সিপিআই। ওই দুই দলের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে ডি রাজা এবং সীতারাম ইয়েচুরি কংগ্রেসকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির মধ্যে আরও বোঝাপড়া দরকার। একা লড়াই করার মনোভাব ছাড়তে হবে কংগ্রেসকে।
প্রসঙ্গত কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না হওয়ায় রাজস্থানে সিপিএম তাদের হাতে থাকা দুটি আসন হারিয়েছে। ওই রাজ্যেও বিধানসভায় শূন্য হয়ে গেল দল। বস্তুত বাংলায় পর হিন্দি বলয়েও বিধানসভায় অস্তিত্ব হারাল তারা। বামেদের এবারের সাফল্য বলতে তেলেঙ্গানায় সিপিআইয়ের একটি আসনে জয়লাভ।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে শিবসেনা। দলের সাংসদ সঞ্জয় রাউতের বক্তব্য, বিধানসভা ভোটের সঙ্গে লোকসভার নির্বাচনের সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস লোকসভা ভোটে অবশ্যই ভাল ফল করবে।