শেষ আপডেট: 13th April 2025 21:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উনিশ শতকের শতকের শুরুর দিকে টিভিতে চিড়িয়াখানা এবং পশুদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই হাতির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটেছিল আমেরিকার মানুষদের। খাঁচায় বন্দি জীবন নয়, উল্টে পায়ের শব্দে সেখানকার মানুষ চিনেছিল হাতিকে। তবে মজার বিষয় হল ভারতই ছিল সেই দেশ যেখান থেকে ১৯৭৬ ও ১৮০৪ সালে দু'টি হাতি একা পাড়ি দিয়েছিল আমেরিকায়।
মূলত সমুদ্রপথ পেরিয়ে এদের মধ্যে একটি হাতি ১৭৯৬ সালের ১৩ এপ্রিল আমেরিকার উপকূলে পৌঁছয়, যার নামকরণ করা হয়েছিল ক্রাউনশিল্ড, আমেরিকার জাহাজ কমান্ডার ক্যাপ্টেন জ্যাকব ক্রাউনিনশিল্ডের নামে। এই প্রথম হাতি যাকে দেখেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ।
জানা যায়, ১৭৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি জাহাজ কলকাতা থেকে ছাড়ে। এপ্রিলে লং আইল্যান্ডে নজরদারি শুরু হওয়ার আগে সেন্ট হেলেনা এবং অ্যাসেনশন দ্বীপে প্রথমে সে থেমেছিল। বিখ্যাত লেখক নাথানিয়েল হাথর্নের বাবা নাথানিয়েল হাথর্নের লেখা জাহাজের লগ অনুসারে, হাতিটিকে সবুজ শাকসব্জি খাওয়ানো হয়।
নিউ ইয়র্কের একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, তরুণী হাতিটির শারীরিক গঠন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। ধীরে ধীরে ভারত থেকে আসা এই হাতিগুলিই আমেরিকানদের বিনোদনের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য কাজে লাগানো হত বলে খবর।
পরে ক্রাউনিনশিল্ডের পরিবার হাতিটি কিনে নেন। ১৭৭৬ সালের ২৩শে এপ্রিল আর্গাস এবং গ্রিন লিফ অ্যাডভার্টাইজারে একটি বিজ্ঞপ্তিতে নিউ ইয়র্কে হাতির বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে সেখানে হাতির প্রদর্শনী শুরু হয়। জানা গেছে, সেবারে হাতি দেখতে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। জমা পড়েছিল রেকর্ড অর্থও।
এছাড়া পরবর্তীতে হাতিটি বোস্টন, ফিলাডেলফিয়া পরিদর্শন করে বলে খবর। রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনও ১৭৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর মাসে হাতিটি দেখতে পান, যা তার ফিলাডেলফিয়া হাউসহোল্ড অ্যাকাউন্ট বুকে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
১৭৯৫ সালের ২রা নভেম্বরের এক চিঠিতে ক্যাপ্টেন ক্রাউনিনশিল্ড লেখেন, "আমরা দুই বছর বয়সি একটি সুন্দর হাতি বাড়িতে নিয়ে যাই। যার দাম পড়েছিল ৪৫০ ডলার ৩৮ হাজার ৭৪৪ টাকা। তিনি মনে করেন এটিকে যদি নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে এটি কমপক্ষে ৫০০০ ডলার অর্থাৎ ৪ লাখ ৩০ হাজার ৪৮৩ টাকা আয় করবে।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ, ক্রাউনইনশিল্ড হাতিটি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশায় একাধিক প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন ক্যাপ্টেন। বিভিন্ন সরাইখানা এবং ভাড়া করা গোশালায় হাতিটিকে রাখা হয়। রাতারাতি ফলও মেলে। আমেরিকানরা এতবড় ও অস্বাভাবিক শরীরের প্রানীকে দেখতে বিপুল টাকা খরচ করতে শুরু করে।
এরপর ঠিক আট বছরের মাথায়, আমেরিকায় দেখা মেলে ওল্ড বেটের। সেই ভারত থেকে আমেরিকায় যাওয়া দ্বিতীয় হাতি। বেটকে কিনতে সম্ভবত ভারতীয় টাকায় ৮৬ হাজার ৯৭ টাকা খরচ হয়েছিল।
দুই ভারতীয় হাতির উত্তরাধিকার
এরপর আচমকাই বেটের যাত্রা শেষ হয়ে যায়। ১৮১৬ সালে, অ্যালফ্রেড ড্যানিয়েল ডেভিস নামে একজন স্থানীয় কৃষক বেটকে গুলি করে হত্যা করেন। তার সমসাময়িকরা ডেভিসকে "দুঃখী ভবঘুরে" বলে মনে করে।
পরে বেইলি নিউ ইয়র্কে বেটের দেহাবশেষ প্রদর্শন করেন এবং তার মেনাজারি নির্মাণের কাজ নজরে থাকবে। এরপর ১৮২৫ সালে সোমার্সে এলিফ্যান্ট হোটেল নির্মাণ করে তার উত্তরাধিকারকে সম্মান জানান।
হোটেলের বাইরে একটি গ্রানাইটের খুঁটির উপরে ওল্ড বেটের একটি কাঠের মূর্তি ছিল - যা আমেরিকার মানুষদের কাছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রদর্শনীর প্রতীক। ২০২৪ সালে, সেই মূর্তিটি ব্রোঞ্জ দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই বেটের স্মৃতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অমর হয়ে রয়েছে।