শেষ আপডেট: 2nd May 2024 11:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ১৪০ কোটি ভারতীয় কোভিশিল্ডের টিকা নিয়েছেন। দুটি ডোজের পরে অনেকে বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। কোভিশিল্ডের টিকা নিয়ে বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে এই খবর সামনে আসার পর থেকেই আতঙ্ক শুরু হয়েছে। রীতিমতো প্যানেল তৈরি করে এই টিকার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাতে অবশ্য আশ্বস্ত হচ্ছেন না ভারতবাসী। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছেন যাঁরা তাঁদের কোনও রোগ হবে না তো? বিরল রোগ তলে তলে শরীরে বাসা বাঁধেনি তো?
কোভিশিল্ডের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
অ্যাস্ট্রজেনেকার তৈরি টিকা ভারতে যার নাম কোভিশিল্ড, সেই টিকার ডোজে বিরল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখা গেছে, এই টিকা যাঁরা নিয়েছিলেন তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আবার অনেকের রক্তে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমে যাওয়ার উপসর্গও দেখা দিয়েছে যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া। কোভিশিল্ড টিকা নেওয়াদের অনেকের মধ্যে থ্রম্বোসিসের সঙ্গেই থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ একদিকে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছে, অন্যদিকে দ্রুত কমেছে প্লেটলেটের সংখ্যা। এই বিরল রোগে কারণেও মৃত্যুও হয়েছে বলে দাবি। তারপরেই ব্রিটেনের আদালতে এই টিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
রোগের কী কী উপসর্গ দেখা গেছে?
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, পায়ে ব্যথার উপসর্গ দেখা গেছে রোগীর। সেই সঙ্গেই প্রচণ্ড মাথাযন্ত্রণা, পেটে ব্যথা। ধীরে ধীরে দুর্বল হয়েছে রোগী। হাত-পা ফুলতে শুরু করেছে। শ্বাসের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কোভিশিল্ড টিকা কীভাবে তৈরি?
কোভিশিল্ডই দেশের তৈরি প্রথম টিকা যা সবচেয়ে আগে অনুমোদন পেয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকার ফর্মুলা অনুসরণ করলেও কোভিশিল্ড টিকা পুরোপুরি পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারেই বানানো।
কোভিশিল্ড ব্রিটেনের অক্সফোর্ড টিকার ফর্মুলায় তৈরি। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির জেন্নার ল্যাবরেটরির গবেষকরা করোনা মহামারীর সময় এই ডিএনএ ভ্যাকসিন বানিয়েছিলেন। এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক-বিজ্ঞানী সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল। এই গবেষণায় অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে ছিল ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্ম অ্যাস্ট্রজেনেকাও। অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স টিকা ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন। ব্রিটেনে এই টিকার নাম AZD1222 বা ভ্যাক্সজেভরিয়া।
অ্যাডেনোভাইরাস নামে একধরনের সর্দি-কাশির ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তার মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রোটিন ভরে এই টিকা তৈরি হয়েছে। সরাসরি ভাইরাসের প্রোটিন যাতে শরীরে ঢুকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই অন্য একটি ভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ধরনের ডিএনএ ভ্যাকসিন মোডার্না বা ফাইজারের আরএনএ ভ্যাকসিনের থেকে কিছু আলাদা। তাই টিকার কার্যকারিতা এবং এফিকেসির মধ্যেও তফাৎ আছে। মোডার্না বা ফাইজারের টিকা যেভাবে কাজ করবে, অক্সফোর্ডের টিকার কার্যপদ্ধতি তার থেকে আলাদা। অক্সফোর্ড টিকার একটি ডোজ দিলে নাকি তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে বলে দাবি করেছিল অ্যাস্ট্রজেনেকা।
কোভিশিল্ড টিকায় ভারতীয়দের কি বিরল রোগ হতে পারে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ লাখের মধ্যে একজনের ভ্যাকসিনের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার মানে বড় সংখ্যক মানুষ ভ্যাকসিনের ডোজে সুরক্ষিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সর্বোচ্চ ৬ মাস পর স্পষ্ট হয়ে যায়। ভ্যাকসিন পাওয়ার দুই-আড়াই বছর কেটে গিয়েছে, এতদিনে যখন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাই টিকায় মারাত্মক কিছু হবে তেমন ঝুঁকি নেই।
সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, কোভিশিল্ড টিকায় ভারতীয়দের কোনও ভয় নেই। অক্সফোর্ডের টিকার ফর্মুলায় তৈরি হলেও ভারতীয়দের উপর বার বার ট্রায়াল করে দেখা হয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর হাল্কা জ্বর, মাথাব্যথার লক্ষণ দেখা দিলেও বড়রকম কোনও রোগের উপসর্গ দেখা দেয়নি। থ্রম্বোসিস বা থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া বিরল রোগ। খুব কম জনের এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তাও শরীরে অন্য অসুখ থাকলে এমন অবস্থা তৈরি হতে পারে। সেখানে টিকার কোনও ভূমিকা নেই।
সেরাম জানাচ্ছে, দেশে যখন কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল তখন অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন কমিটি তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রথম প্রথম টিকার ডোজে সাময়িক উত্তেজনা, জ্বর, বা অ্যালার্জির সাইড এফেক্টস দেখা গেলেও, কোনও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সে কারণে মৃত্যু এমন ঘটনা ঘটেনি ভারতে।