শেষ আপডেট: 15th October 2024 19:37
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফাটল বেড়েছে ভারত-কানাডা সম্পর্কে। কানাডার মাটিতে খলিস্তানপন্থী জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের মৃত্যু নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। প্রভাব পড়েছে দুই দেশেরই কূটনীতিতে। এরই মধ্যে কানাডা পুলিশ সোমবার দাবি করে, ভারতের উচ্চ পদস্থ প্রশাসনিক আধিকারিকরা কানাডায় খলিস্তানপন্থীদের দমনে অপরাধীদের সাহায্য নিচ্ছে। নাম না করে বিষ্ণোই গোষ্ঠীর কথা বোঝাতে চায় তারা। জানানো হয়, 'দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটিকে বিশেষ করে খলিস্তানপন্থী কার্যকলাপকে টার্গেট করার জন্য এই গোষ্ঠীর মদত নিচ্ছে ভারত।'
এরপরেই মঙ্গলবার ভোর রাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করে, এই উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে নাম রয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহর। এই নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে রাজনৈতিক মহলে।
২০২০ সাল নিজ্জরকে 'সন্ত্রাসবাদী' বলে ঘোষণা করে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে কানাডাকে পাঠানো একটি নথিতে জানানো হয়, ১৯৯৬ সালে সে পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় গেছে। সেই সময়ে ট্রাক চালক হিসাবে কাজ করত। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও নিয়েছিল। তারপরই বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
গত বছর তাকে হত্যা করা হয় কানাডার একটি গুরুদ্বারের সামনে। কানাডা প্রশাসন দায় চাপায় ভারতের উপর। তাদের বক্তব্য, এই হত্যার সঙ্গে যোগ রয়েছে ভারতীয় হাই কমিশনারের। কিন্তু কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকায় কোনও আইনি পদক্ষেপ করা যায়নি তাঁর বিরুদ্ধে।
সোমবার এই নিয়ে কানাডা পুলিশের তরফে বিস্ফোরক দাবি করা হয়। তারা অভিযোগ তোলে, দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করছে ভারত সরকার। তাদের নিশানায় মূলত খলিস্তান পন্থী কার্যকলাপ। কিন্তু গোপন সূত্রে জানা গেছে, তারা এর জন্য অপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে।
কানাডা পুলিশের দাবি, 'একটি অপরাধমূলক সংগঠন, লোকে তাই জানে, বিষ্ণোই গোষ্ঠী। এদের ব্যবহার করা হচ্ছে নয়াদিল্লির তরফে। আমাদের বিশ্বাস ভারত সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর যোগ রয়েছে।'
কানাডা প্রশাসনের তরফে আরও দাবি করা হয়, সেদেশে শিখরা প্রায়শই আক্রমণের মুখে পড়ছে। এই আক্রমণের পিছনেও ভারতের কূটনৈতিক কার্যকলাপের হাত রয়েছে। ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স উইং তথ্য সংগ্রহ করে এই কাজে সাহায্য করছে এবং এর মাথায় রয়েছেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।
প্রথমে ওয়াশিংটন পোস্টের তরফে নাম উল্লেখ করা না হলেও পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নাম প্রকাশ্যে আনা হয়। যদিও এই সূত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা জানা যায়নি। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন দাবির পিছনে কানাডার কাছে প্রমাণ থাকলেও থাকতে পারে। প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহ করতে ভারতীয় কূটনীতিকদের জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে সেদেশের তদন্তকারীরা।
কানাডা সরকারের এই সব অভিযোগের জবাবে নয়াদিল্লি এদেশে নিযুক্ত কানাডার ছ'জন কূটনীতিককে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করেছে। ভারতীয় হাই কমিশনার ও কূটনীতিকদের ফেরানোও হচ্ছে।
তবে আগের সমস্ত অভিযোগ নয়াদিল্লি খারিজ করলেও ওয়াশিংটন পোস্টের 'দাবি' নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি কেউ। কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বিদেশ মন্ত্রক বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে।
তথ্য বলছে, এমন অভিযোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে শোহরাবউদ্দিন ও তার স্ত্রী কউসর বাই খুনেও নাম জড়িয়েছিল অমিত শাহর। তখন তিনি গুজরাতের মন্ত্রী ছিলেন।