শেষ আপডেট: 9th May 2024 15:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিগন্ত বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তার মাঝে রঙিন প্রবাল দ্বীপ। রঙবেরঙের প্রবাল প্রাচীর এমনভাবে ঘিরে রেখেছে সমুদ্রের মাঝে দ্বীপগুলোকে যেন মনে হয় ক্যানভাসে রঙ দিয়ে আঁকা কোনও ছবি। নীল সাগর আর রঙিন প্রবাল প্রাচীরের আকর্ষণেই পর্যটকদের এত প্রিয় লাক্ষদ্বীপ। মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতির পরে লাক্ষদ্বীপে ভ্রমণ নিয়েই প্রচার চলছে। কিন্তু তারই মধ্যে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিজ্ঞানীরা। চরম বিপদে রয়েছে লাক্ষদ্বীপ।
ঝিকিমিকি লেগুন, সাদা বালির নির্জন সৈকত এবং প্রচুর প্রবাল— লাক্ষদ্বীপ এবং মলদ্বীপের মধ্যে মিল প্রচুর। লাক্ষদ্বীপের পুরনো সৈকতগুলি সাদা বালি এবং স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জলের জন্য বিখ্যাত। ভারতের মালাবার উপকূল থেকে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জ বিশ্ব উষ্ণায়ণের (Global Warming) শিকার। জলবায়ু বদলের প্রভাব পড়েছে লক্ষদ্বীপে।
আইসিএআর-সেন্ট্রাল মেরিন ফিসারিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই লাক্ষদ্বীপের সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বাড়ছে। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর জলের তাপমাত্রা মেপে দেখা গিয়েছিল তা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। জলজ প্রাণীরা যেমন বিপদে পড়েছে তেমনই ক্ষতি হচ্ছে প্রবাল প্রাচীরের। লাক্ষদ্বীপের অনেক জায়গাতেই দেখা গেছে প্রবাল প্রাচীর শুকিয়ে যাচ্ছে। রঙবেরঙের প্রবাল শুষ্ক, সাদা কঙ্কালের মতো মতো হয়ে গেছে। তার রঞ্জকই নষ্ট হয়ে গেছে। একে বলা হয় ‘কোরাল ব্লিচিং’।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপকূলীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা এখনই বেশি। সমুদ্রের জলের তাপমাত্রার পরিবর্তন এখন অনেক বেশি হচ্ছে। ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের জীববিজ্ঞানী ক্রিস ভেনডিটি বলেছেন, জলের উষ্ণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়লে সামুদ্রিক প্রাণীজগত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর সেটাই হচ্ছে। বেশি তাপমাত্রায় প্রবালের রঞ্জক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রবালের কোষগুলো অক্সিজেনশূন্য হচ্ছে। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে তৈরি প্রবালের কঙ্কাল বেরিয়ে আসছে।
জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব খাঁড়া ঝুলিয়েই রেখেছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে বিপর্যয়ের আর বেশি দেরি নেই। বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাবে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রাও বাড়ছে। জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু বদলের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আর কয়েক বছরের মধ্যে জলবায়ু বদলের প্রভাব করোনা মহামারীর থেকেও প্রাণঘাতী হবে। বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, বিষাক্ত গ্যাসে ছেয়ে যাচ্ছে পরিবেশ তার থেকেই অনুমান করা যায় ২১০০ সালের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন পাঁচ গুণ বেশি বিপর্যয় নিয়ে আসবে পৃথিবীতে।