শনিবার মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।
মুম্বইয়ের ওরলিতে এক মঞ্চে দেখা যাবে উদ্ধব ও রাজ ঠাকরেকে।
শেষ আপডেট: 5 July 2025 02:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। মুম্বইয়ের ওরলিতে এক মঞ্চে দেখা যাবে উদ্ধব (Uddhav Thackeray) ও রাজ ঠাকরেকে (Raj Thackeray)। শিবসেনা ইউটিবির নেতা উদ্ধব এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার রাজ সম্পর্কে জ্যাঠতুতো-খুড়তুতো ভাই। কুড়ি বছর পর দুই ভাইকে শনিবার এক মঞ্চে দেখা যাবে।
ঠাকরে পরিবারের এই পুনর্মিলন সহজ হয়েছে বিজেপি সরকারের হিন্দি নীতির কারণে। সম্প্রতি দেবেন্দ্র ফড়ণবিশের সরকার স্কুলে তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি পড়া বাধ্যতামূলক করেছিল। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করেন উদ্ভব ও রাজ। বিরোধীদের চাপের মুখে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজেপি সরকার। শনিবার তাই বিজয় সমাবেশ করবেন দুই ভাই। তাঁদের পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিজয় সমাবেশ হতে যাচ্ছে যৌথভাবে।
ফলে ২০০৫ থেকে ২০২৫—দু’ দশক পর মহারাষ্ট্রের রাজনীতির (Maharastra politics) ঠাকরে পরিবারের (Thackeray family) ভাঙা সংসার আবার জোড়া লাগতে পারে। শিবসেনার (Shiv Sena) প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরের (Balasaheb Thackeray) ছেলে উদ্ধব (Uddhav Thackeray) এবং ভাইপো রাজের (Raj Thackeray) পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে মঞ্চে দাঁড়াবেন।
আশ্চর্যের হল রাজ্য-রাজনীতির এই জ্যাঠতুতো-খুড়তুতো ভাইকে কাছাকাছি আনতে উদ্যোহী হয় তাঁদের ছেলেরা, উদ্ধব পুত্র আদিত্য (Aditya Thackeray) এবং রাজের ছেলে অমিত (Amit Thackeray)।
উদ্ধব ও রাজের মতো আদিত্য ও অমিতের কাছাকাছি বয়স। তাঁদের মধ্যে কথা, দেখাসাক্ষাৎ বরাবর চালু আছে। কিন্তু ২০০৫-এ রাজ শিবসেনা ছেড়ে নিজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (Maharashtra Naba Nirman Sena) গড়ার পর তিনি আর উদ্ধবের মুখোমুখি হননি। তাগিদ ছিল না উদ্ধবের তরফেও।
এখন যখন শত্রুতা ছেড়ে দুই ভাইয়ের হাত ধরাধরির কথা শুরু হয়েছে, তখন জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে প্রখম বরফ গলেছিল। উদ্ধব ও রাজের মধ্যে কথা ফোনে কথা হয়। ফের কথা হয়েছিল ২০১৯-এক শেষ দিতে।
উদ্ধব তখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে উদ্ধব ফোন করে খুড়তুতো ভাই রাজকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন। তারপর আরও দু’বার দু’ভাইয়ের মধ্যে কথা হয় ফোনে। তাঁদের ছেলেদের উদ্যোগে কুড়ি বছর পর দুই ভাইয়ের মুখোমুখি সাক্ষাৎ হবে।
মহারাষ্ট্রে গত এক-দেড় মাস যাবত আলোচনায় আছেন শরদ পাওয়ার (Sharad Pawar) ও তাঁর ভাইপো অজিত (Ajit Pawar)। এনসিপি (NCP) ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে অজিত এখন রাজ্যের বিজেপি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী। কাকা শরদ দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেও মূল এনসিপি হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে অজিতের গোষ্ঠী। দুই এনসিপি-র মিশে যাওয়া নিয়ে জোর জল্পনা চলছে শরদ ও অজিতের ঘন ঘন দেখাসাক্ষাৎ, বৈঠকের কারণে। অজিত এমনকী সরকারি অনুষ্ঠানেও ডাকছেন কাকা শরদকে। এছাড়া নানা উৎসব, সামাজিক অনুষ্ঠানে শরদের সঙ্গে দেখা করেন অজিত। শরদ কন্যা তথা খুড়তুতো বোন সুপ্রিয়া সুলহের সঙ্গেও অজিতের সম্পর্ক আগের জায়গায় ফিরেছে। দাদা-বোনেও কথা, দেখাসাক্ষাৎ শুরু হয়েছে। দুই এনসিপি-র মিলন এবং পাওয়ার পরিবারের পুনর্মিলন নিয়ে চর্চার মধ্যেই আলোচনায় ভেসে উঠেছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতির ঠাকরে পরিবার।
মহারাষ্ট্রে মুম্বই-সহ বিভিন্ন শহরে পুরভোট আসন্ন। সেই ভোটে উদ্ধবের শিবসেনা (ইউটিবি) এবং রাজের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার বোঝাপড়ার প্রস্তাব নিয়ে চর্চা শুরু হয় মাস খানেক আগে। দুই দলেরই কিছু নেতা মিডিয়ায় বলা শুরু করেন, দলের সংকটে উদ্ধব ও রাজের কাছাকাছি আসা সময়ের দাবি।
বালাসাহেব ঠাকরের ছায়াসঙ্গী পার্টির নেতৃত্ব ভবিষৎ কর্ণধার হবেন না বুঝতে পেরে ২০০৫-এ শিবসেনা ছেড়ে বেরিয়ে যান। শিবসেনার রাজনীতিকে আরও উগ্রতার সঙ্গে তুলে ধরেও তিনি দলকে তেমন প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। অন্যদিকে, ২০২২-থেকে উদ্ধবের ধারাবাহিক বিপর্যয় চলছে। একনাথ শিন্ডে শুধু দল ছেড়ে উদ্ধবকে হটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন তাই-ই নয়, তাঁর গোষ্ঠীকেই সুপ্রিম কোর্ট এবং নির্বাচন কমিশন মূল শিবসেনা বলে ঘোষণা করেছে। বাবার তৈরি দল হাতছাড়া হওয়া, গত বিধানসভা ভোটে তেমন ভাল ফল করতে না পারা এবং বিরোধী জোট মহারাষ্ট্র আগারি একপ্রকার ভেঙে যাওয়ায় রাজনীতিতে অনেকটাই একঘরে হয়ে পড়েছেন উদ্ধব। দুই ভাইয়ের হাত মেলানোর প্রস্তাব, দাবি উঠেছে এই বাস্তবতার কারণে।
আশ্চর্যের হল, আদিত্য ও গৌতম যথাক্রমে উদ্ধব ও রাজের ছেলে সম্প্রতি মিডিয়ার কাছে এক সুরে কথা বলেছেন। দুই ভাই-ই বলেছেন খবরের কাগজে হেডলাইন হয়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে নয়, তাঁদের বাবা-কাকাদের উচিৎ এক টেবিলে বসে চা পান করা।
তারপরই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন উদ্ধব শিবিরের নেতা সঞ্জয় রাউত। একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাজ ভাই ডাকলেই তাঁর বাড়িতে চা খেতে যেতে পারি। আমার তরফ থেকেও আমন্ত্রণ রইল।
সঞ্জয়ের মন্তব্যের রেশ ধরে প্রতিক্রিয়া দিয়ে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরে এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, শিবসেনা (ইউটিবি) এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার অনুগামীদের মধ্যে কোনও বিভ্রান্তি নেই। চলতি পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা দরকার সেটা দলের কর্মী-সমর্থকেরাই ঠিক করে দেবেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, ঠাকরে পরিবারের দুই ভাই এক হয়ে গেলে চাপে পড়ে যাবেন একনাথ শিন্ডে। বিজেপি জোটে এমনীতেই তিনি ভাল অবস্থায় নেই। মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে তাঁকে বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবিশের অধীনে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে কাজ করতে হচ্ছে। আবার উপমুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রাপ্য মর্যাদা পাচ্ছেন না বলে সম্প্রতি প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। অনেকে মনে করছেন, উদ্ধব ও রাজের সম্মানজনক বোঝাপড়া হয়ে গেলে শিন্ডেকেও ফিরিয়ে আনা সহজ হয়ে যাবে। এমন সব সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে ওঠে বিজেপি জোট সরকারের হিন্দি নীতিকে কেন্দ্র করে। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালা সাহেব ঠাকরে মহারাষ্ট্র আর মারাঠা ভাষার প্রসার চেয়েই গত শতকের ষাটের দশকের গোড়ায় শিবসেনার রাজনীতির গোড়াপত্তন করেছিলেন।