আমদাবাদে ভেঙে পড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতিহাস বলছে, অতীতেও অন্তত ২৪টি দুর্ঘটনায় একজন করে যাত্রী প্রাণে বেঁচেছেন।
অন্তত ২৪ বার এমনই ঘটেছে
শেষ আপডেট: 13 June 2025 06:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ভেঙে পড়ল আমদাবাদ বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমানে থাকা ২৪২ জন যাত্রীর মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র একজন যাত্রী অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছেন—যিনি দুর্ঘটনার ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে নিজে হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে আসেন। বিমানের বাকি যাত্রীরা কেউই প্রাণে বাঁচেননি বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, “বিমানটি উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একজন মাত্র যাত্রী বেঁচে রয়েছেন এবং বর্তমানে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে।” শুক্রবার ভোরে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ এই বিবৃতি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
অধিকাংশ যাত্রীর পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তি ৩৮ বছর বয়সি ব্রিটিশ নাগরিক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
অলৌকিক বেঁচে ফেরার ঘটনা: অতীতেও নজির
আকাশপথে এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় একজন মাত্র যাত্রীর বেঁচে যাওয়া অবশ্য নতুন নয়। গত ৮০ বছরে এমন প্রায় দুই ডজন দুর্ঘটনার নজির রয়েছে যেখানে ৫০ জন বা তার বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর মাত্র একজন বেঁচে ফিরেছেন।
১৯৮৭ সালের আগস্টে মিশিগানের ডেট্রয়েট বিমানবন্দর থেকে উড়ে যাওয়ার সময় একটি McDonnell Douglas MD-82 বিমান ভেঙে পড়ে। পাইলটের ভুলের কারণে ঘটেছিল দুর্ঘটনা। ১৪৯ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু সদস্য ছিলেন বিমানে। সবার মৃত্যু হলেও বেঁচে যায় মাত্র একজন—৪ বছর বয়সি সেসেলিয়া চিকান। গুরুতর দগ্ধ ও হাড় ভেঙে গেলেও সে একমাত্র প্রাণে বেঁচেছিল।
২০১৩ সালে CNN এই জাতীয় চারজন বেঁচে যাওয়া মানুষকে নিয়ে তৈরি করেছিল ডকুমেন্টারি ‘Sole Survivor’, তাতে ছিলেন ২০০৯ সালের ইয়েমেনিয়া এয়ারওয়েজ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ১২ বছরের বাহিয়া বাকারি। ১৫২ জনের মৃত্যু হলেও, জলেভাসা ধ্বংসাবশেষ আঁকড়ে তিনি উদ্ধার হন স্থানীয় জেলেদের হাতে।
১৯৮৫ সালে ১৭ বছর বয়সি জর্জ ল্যামসন জুনিয়র একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে গিয়েছিলেন একটি বিমান দুর্ঘটনায়, যেখানে ৭০ জন নিহত হয়েছিলেন। বিমানটি রাস্তায় ভেঙে পড়ার সময় তিনি নিজের আসনে বসা অবস্থাতেই ছিটকে পড়ে যান।
২০০৬ সালের আরেক দুর্ঘটনায়, ৪৯ জনের মৃত্যু হলেও প্রথম অফিসার জেমস পোহেলিনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। আর ২০১৮ সালের হাভানা দুর্ঘটনায় কিউবার Cubana de Aviación বিমানে থাকা ১১২ জনের মধ্যে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও তিনজন পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান। একজন মাত্র যাত্রীই দীর্ঘ চিকিৎসার পরে সুস্থ হন।
সামরিক বিমানেও একই চিত্র
শুধু বেসামরিক বিমান নয়, সামরিক বিমানেও এমন ‘একজনের বেঁচে ফেরা’র নজির রয়েছে। ১৯৯১ সালে ইন্দোনেশিয়ান এয়ার ফোর্সের একটি Lockheed C-130 হারকিউলিস বিমান ইঞ্জিনে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে জাকার্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই বিমানে থাকা ১৩৪ জন যাত্রী ও দু’জন গ্রাউন্ড কর্মীর মৃত্যু হয়। বেঁচে যান একমাত্র একজন।
২০১৪ সালে আলজেরিয়ার একটি সামরিক বিমান উত্তর-পশ্চিম আলজেরিয়ার এক পাহাড়ে ধাক্কা খায়। ৭৭ জনের মৃত্যু হয়, বেঁচে যান একজন। আরও পুরনো উদাহরণ রয়েছে ১৯৫৯ সালের একটি দুর্ঘটনার—আর্জেন্টিনার উপকূলে একটি কার্গো বিমান ভেঙে পড়ে, ৫১ জনের মৃত্যু হয়। বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী সাঁতরে উপকূলে পৌঁছেছিলেন।