দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) অভিযানের পর আবারও বিতর্কের মুখে হায়দরাবাদের বিখ্যাত কনফেকশনারি ব্র্যান্ড ‘করাচি বেকারি’ (Karachi Bakery)। ৭ মে-তে পাকিস্তান (Pakistan) এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (PoK) ওপর ভারতের যোগ্য জবাবের পর নানা সক্রিয় দল এসে ভিড় জমায় বেকারির এক আউটলেটের সামনে, প্রতিবাদ জানাতে থাকে। তাদের দাবি, বদলাতে হবে পাকিস্তানি শহরের নামে রাখা ‘করাচি বেকারি’র (Karachi Bakery) নাম।

এই প্রতিবাদের মুখে করাচি বেকারির মালিক রাজেশ এবং হরিশ রাম্মানি স্পষ্ট করেন তাঁদের ব্র্যান্ডের নামের নেপথ্য কাহিনী। তাঁরা জানান, তাঁদের ঠাকুরদা খানচন্দ রাম্মানি দেশভাগের (Partition) সময় কাঁটাতারের এপারে চলে আসেন এবং ১৯৫৩ সালে গড়ে তুলেছিলেন এই বেকারি।

সর্বভারতীয় এক সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজেশ এবং হরিশ রাম্মানি জানান, ‘ ৭৩ বছর পেরিয়ে গেছে। ভারতে এসে আমাদের ঠাকুরদা করাচি শহরের নামে নাম রেখেছিলেন বেকারির।’

করাচি বেকারি বরাবর ভারতীয়ই ছিল, তাই চাপের মুখে নাম বদল না করার জন্য প্রশাসনের কাছে তাঁরা সাহায্যের আবেদন জানান। মুখ্যমন্ত্রী এ রেভন্থ রেড্ডি এবং সিনিয়র অফিসারদের কাছে আবেদন করেন রাজেশ এবং হরিশ।

কিছু লোক গোটা শহরজুড়ে বেকারির আউটলেটের বাইরে তিরঙ্গা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ‘আমরা পাকিস্তানি ব্র্যান্ড নই, ভারতীয়। আমাদের সাপোর্ট করুন’ এই এখন করাচি বেকারির আবেদন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই সাপোর্ট জানিয়েছেন করাচি বেকারিকে। একজন লিখেছেন, ‘বেকারির মালিক সিন্ধি এবং দেশভাগের সময় তাঁরা এই দেশে চলে আসেন। দয়া করে এমন কিছু করবেন না।’ আবার কেউ লেখেন, ‘যা হচ্ছে সেটা নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ। দেশভাগের সময় অনেক সিন্ধি, পার্সি মানুষজন করাচি ছেড়ে এখানে চলে আসেন। এমনকী এখানে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের পদবী করাচিওয়ালা। তার মানে এমন না যে তাঁদের সবাইকে আপনারা অ্যাটাক করবেন। ভারতের আর্মিকে আসল শত্রুদের মোকাবিলা করতে দিন সীমান্তে। তাঁদের জন্য বরং প্রার্থনা করুন।’

এই কিন্তু প্রথমবার নয় যখন করাচি বেকারির ওপর প্রতিবাদের এই কোপ এসে পড়ল। ২০১৯ সালে পুলওয়ামার ঘটনার পর বেঙ্গালুরুর ইন্দিরানগরের আউটলেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। সেদিনও নামবদলের দাবিই উঠেছিল। শেষমেশ সাইনবোর্ডে বেকারির নাম ঢেকে দেওয়া হয় এবং ভারতের পতাকা লাগাতে হয়। বেকারির তরফ থেকে বিবৃতি দিতে হয় যে ‘করাচি বেকারি ভারতীয় ব্র্যান্ড’।

করাচি বেকারি তাদের ওসমানিয়া এবং ফ্রুট বিস্কিটের জন্য বিখ্যাত। বছরের পর বছর ধরে হায়দরাবাদ, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং আরও নানা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে তার সুবাস। অনেক বাধা পেরিয়েও বেকারির মালিকরা বাঁচিয়ে রেখেছেন তার ঐতিহ্য- তাতে মিশে রয়েছে আবেগ, তাঁদের পূর্বপুরুষের শিকড়।