শেষ আপডেট: 15th October 2023 19:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একাধিক ভোটার কার্ড। প্রত্যেকটিতেই নামের বানান আলাদা। তা দেখার পরেই আজন্ম ভারতে কাটানো মহিলাকে সরাসরি 'বাংলাদেশি' বলে দেগে দিয়েছিল ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল। কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব। তারপর শুরু হয় আইনি লড়াই। দীর্ঘ ছয় বছর সেই যুদ্ধ চলার পর অবশেষে জয় পেয়েছেন দুলুবি বিবি। তাঁকে শেষ পর্যন্ত ভারতের নাগরিক বলে স্বীকার করে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
৫০ বছরের দুলুবি অসমের কাচার জেলার উধারবন্ড এলাকার বাসিন্দা। ২০১৭ সালে অসমের শিলচর জেলার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁকে বাংলাদেশি নাগরিক এবং ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা করেছিল। তার একমাত্র কারণ হল, মহিলার একাধিক ভোটার কার্ড ছিল, যেগুলির প্রত্যেকটিতে দুলুবির নামের বানান ছিল আলাদা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরেই ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আগে রান্নার কাজ করে পেট চালাতেন মহিলা। গ্রেফতারির পর স্বাভাবিকভাবেই সেই কাজ খোয়ান। শিলচরের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয় তাঁকে। দু'বছর ধরে সেই জেলখানাই ছিল তাঁর ঠিকানা। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর আইনি লড়াই।
এই সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশের পর ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় দুলুবিকে। চলতি বছরের মে মাসে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন মহিলা। শুনানি শেষে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দুলুবিকে ভারতের নাগরিক বলেই ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
দীর্ঘ ৬ বছর পর 'অপরাধী'র তকমা ঘুচেছে। কেমন লাগছে দুলুবির? ৫০ বছরের প্রৌঢ়া জানিয়েছেন, তিনি উচ্ছ্বসিত। কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কার মেঘ দানা বেঁধেছে মনের গভীরে। স্বামী কি আর ফিরিয়ে নেবেন তাঁকে? ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের মুখ আবার দেখতে পারবেন আদৌ?
'আমি খুব খুশি কারণ আমি শেষ পর্যন্ত ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছি। অথচ ভারতের নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও আমাকে বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল। আমার নাতি নাতনিরা সকলেই ভারতীয়, কীভাবে আমাকে বাংলাদেশি বলা হল!
দু বছর ধরে আমি শিলচরের ডিটেনশন সেন্টারে কাটিয়েছি। আমি একজন মুসলমান মহিলা এবং আমার পরিবার অত্যন্ত রক্ষণশীল। জেলে যাওয়ার আগে আমি রাঁধুনির কাজ করতাম। কিন্তু এখন আমি জানি না আমার স্বামী আমাকে মেনে নেবেন কিনা, কিংবা আমি আর কোনও কাজ পাব কিনা। আমার এই যে ক্ষতি হল, তার দায় কি সরকার নেবে?' প্রশ্ন প্রৌঢ়ার।
প্রশ্ন থাকলেও উত্তর নেই।