শেষ আপডেট: 29th November 2023 16:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আমেরিকার মাটিতে এক খলিস্তানি নেতাকে হত্যার চেষ্টার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গড়ল নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বুধবার জানিয়েছেন, ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এই অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।
এক খলিস্তানি নেতার মৃত্যু রহস্য নিয়ে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সামনে এসেছে আমেরিকায় এক খলিস্তানি নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতের যুক্ত থাকার অভিযোগ।
কূটনৈতিক সূত্র উদ্ধৃত করে এমন একটি খবর গত সপ্তাহে প্রকাশ করেছিল লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। ভারত সরকার সরকারিভাবে সেই খবরকে অস্বীকার করেনি। মার্কিন দূতাবাসও খবরটি সম্পর্কে মন্তব্য এড়িয়ে যায়। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক শুধু জানায়, সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-মার্কিন টু-প্লাস-টু মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আমেরিকা কিছু গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে।
যে নেতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল বলে অভিযোগ তিনি আমেরিকার ওয়াশিংটনের বাসিন্দা গুরপতওয়াত সিং পুন্নুন। বলা হয়েছে, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র বানচাল হয়ে যায় মার্কিন গোয়েন্দা এজেন্সির তৎপরতায়।
ওই খলিস্তানি নেতা শিখস ফর জাস্টিসের শীর্ষ কর্তা। ওই সংস্থা শিখদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে। খলিস্তানি রাষ্ট্রেরও দাবিদার তারা। ভারতে একাধিক গুরুতর অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে পুন্নুনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তার আগে আমদাবাদের মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে বিস্ফোরণে ভেস্তে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে আমেরিকা অভিযোগ করেছে, পুন্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল ভারতীয় এজেন্ট। কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দাদের তৎপরতায় সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি নয়াদিল্লিকে জানিয়ে সতর্ক করেছে।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, আমেরিকার অভিযোগ সত্য হলে এই ব্যাপারে জল অনেকদূর গড়াতে পারে এবং অন্তত পাঁচটি বৃহৎ শক্তিধর দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে তৈরি মঞ্চ ফাইভ আই বা পঞ্চচক্ষুর দুটি দেশের মাটিতে ভারতের এজেন্সির সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠছে। ইতিমধ্যে কানাডা এবং আমেরিকা হরদীপ ও পুন্নুনকে নিয়ে তথ্য পঞ্চচক্ষুর শরিক দেশগুলির সঙ্গে বিনিময় করেছে।
বিদেশের মাটিতে ভারতের জঙ্গি হত্যার ঘটনায় এখন শোরগোল চলছে পাকিস্তানেও। সেখানে গত সাত মাসে ছয় জঙ্গি নিহত হয়েছে যাদের নাম ভারতের অপরাধের তালিকায় ছিল।
কানাডায় খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জর নিহত হয় গত জুনে। সে ছিল কানাডার নাগরিক। ভারতে একাধিক অপরাধ করে পালিয়ে কানাডায় গিয়ে নাগরিকত্ব পেয়ে যায় সে। সেখান থেকেই পাঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানায় খলিস্তানিদের মদত দিয়ে যাচ্ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডার সংসদে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, হরদীপের হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্সির হাত আছে। বিষয়টি তিনি ভারত সরকারকে জানিয়েছেন।
যদিও ভারত এই অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে নয়া দিল্লি দাবি করেছে, অভিযোগের সপক্ষে কানাডা উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেনি। কিন্তু আমেরিকা পুন্নুনের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ভারত সরকার বাইডেন প্রশাসনের বক্তব্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠন সেই বার্তাই বহন করছে।
তবে আশ্চর্যের হল ১৮ নভেম্বর ভারত তদন্ত কমিটি গড়লেও তা এতদিন জানানো হয়নি। নয়াদিল্লি অবশ্য অভিযোগ থেকে দেশকে দূরে রাখছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেন, ‘ভারত সব সময় এই জাতীয় অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়। কারণ, এর সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িত।’ এই মন্তব্য করে বাগচি বুঝিয়ে দেন ভারতের কোনও ব্যক্তি বা এজেন্সি খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকলেও তা সরকারের অগোচরে হয়ে থাকবে।
এই ঘোষণার পরই কানাডার ভারতীয় দূতাবাসের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ট্রুডোর প্রশাসন। পাল্টা নয়াদিল্লি ভারতে কানাডার দূতাবাসগুলির ৪০ কূটনীতিককে দেশ ছাড়া করে। কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়াও বন্ধ করে দেয় নয়াদিল্লি। যদিও গত মঙ্গলবার থেকে তা পুনরায় চালু হয়েছে।